--- বিজ্ঞাপন ---

করোনা কালেও রেমিট্যান্স বেড়েছে বাংলাদেশের

0

লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে কর্মরত প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয় সর্বোচ্চ হয় এমন শীর্ষ স্থানীয় ১০ দেশের মধ্যে ৭টি দেশে গত ২০২০ সালে রেমিট্যান্স আয় কমেছে। মুলত বৈশ্বিক করোনা মহামারির ভয়াবহ ছোবলে এই ৭টি দেশের রেমিট্যান্স আয় হ্রাস পেলেও আবার তিনটি দেশের রেমিট্যান্স আয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধির তালিকায় ৩টি দেশ হলো মেক্সিকো, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। যদিও অন্যদিকে ২০২০ সালে ভারত, চীনের মতো দেশগুলোর রেমিট্যান্স আয় অনেকটা কমে আসলেও পরিমাণের দিক থেকে তারা এখনো সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স অর্জনকারী শীর্ষ দেশের তালিকায় রয়েছে।

অন্যান্য বছরগুলোতে রেমিট্যান্স আয় কিংবা প্রবাসী আয়ে শীর্ষস্থানে থাকা ৭টি দেশ গত ২০২০ সালে রেমিট্যান্স কমে যাওয়া উন্নয়নশীল দেশগুলো হলোঃ ভারত, চীন, ফিলিপাইন, মিসর, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম এবং ইউক্রেন। তবে ইউকীপিডিয়ার তথ্যমতে, ২০২০ সালে চীনের রেমিট্যান্স আয় ছিল ৬৭ বিলিয়ন ডলার, ম্যাক্সিকো এবং ফিলিপাইন্সের ৩৪ বিলিয়ন ডলার, পাকিস্তানের ২৮ বিলিয়ন ডলার এবং মিশরের ২৬ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আয় দেখানো হয়েছে।

দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) এর প্রকাশিত ‘কোভিড-নাইন্টিন অ্যান্ড মাইগ্র্যান্ট রেমিট্যান্স : অ্যা হিডেন ক্রাইসিস লুমিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গত ২০২০ সালে চলা করোনা (কভিড-১৯) মহামারীর বিপর্যয়ের মধ্যেও বাংলাদেশের সম্মানিত প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয় এসেছে ১৯.৮৮ বিলিয়ন ডলার বা ১, ৯৮৮ কোটি ডলার। যা, টাকার হিসেবে ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৯২২ কোটি টাকার সমান এবং এটি ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮% বেশি আয়। যেখানে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয় ছিল ১,৮৪০ কোটি টাকা বা ১৮.৪০ বিলিয়ন ডলার। তবে অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারী মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১.৯৬৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ২১.৭৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসে।

এদিকে ২০১৯ সালের তুলনায় গত ২০২০ সালের মেক্সিকোর রেমিট্যান্স আয় বেড়েছে ৯% এবং পাকিস্তানে রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৪%। ২০২০ সালে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর রেমিট্যান্স আয়ের পরিমাণ ২০১৯ সালের চেয়ে ১৫০ কোটি ডলার বেড়ে ৪০.৫০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। তাছাড়া ২০১৯ সালে পাকিস্তানের ২২.২০ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আয় হিসেবে এসেছিল। যা গত ২০২০ সালে ১৯০ কোটি ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ২৪.১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে করোনা মহামারির ছোবলে বিশ্বের সকল দেশের অর্থনীতি চরমভাবে বিপর্যস্ত হয় এবং বিশেষ করে পর্যটন আয়ে ধস এবং তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়ে। আর যেহেতু বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের প্রবাসী আয়ের মূল ক্ষেত্র কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরান, কাতার, কুয়েত এবং ওমান। এই দেশগুলোর প্রবাসী কর্মী নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকহারে কর্মী ছাঁটাই এবং কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার বিদেশী কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়ে। আর তাই প্রবাসী কর্মীরা এক রকম বাধ্য হয়েই তাদের কাছে থাকা সঞ্চিত অর্থ সাথে নিয়ে দেশে ফিরে আসতে থাকে। ফলে সাময়িকভাবে বেশকিছু উন্নয়শীল দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ২০২০ সালে অনেকটাই বৃদ্ধি পায়।

তাছাড়া বাংলাদেশে প্রবাসী আয় বেশি আসার আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে বৈধ উপায়ে দেশে টাকা পাঠানোর পরিমাণ বেড়েছে। আবার বাংলাদেশ সরকার বৈধ পথে টাকা পাঠালে প্রণোদনার হার বৃদ্ধি করায় প্রবাসী কর্মীরা বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত হয়ে উঠেছেন।

যদিও দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট মনে করে, ২০২০ সালে দেশগুলোর রেমিট্যান্স আয় বৃদ্ধির প্রবনতা অনেকটা সাময়িক। বিশেষ করে চলতি ২০২১ সালে অনেক দেশেরই প্রবাসী আয় বৃদ্ধির বিষয়টি হ্রাস পেতে পারে। তাদের মতে, সারা বিশ্বব্যাপী করোনার মহামারির দীর্ঘমেয়াদি বিরুপ প্রভাবের কারণে চলতি ২০২১ সালে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় ৭% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে বলে আশাঙ্খা করা হয়।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.