--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকার ওয়ালমার্ট শীর্ষে, দ্বিতীয় চীনের সিনোপ্যাক

ফরচুন ম্যাগাজিনের মতে করোনাকালে জায়ান্ট কর্পোরেশনগুলোর মুনাফা

0

গ্লোবাল ফাইন্যান্স ম্যাগাজিন ‘ফরচুন’ এর তথ্যমতে, ২০২০ সালে চলা ভয়াবহ করোনা মহামারির কারণে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেভিনিউ অর্জনকারী জায়ান্ট কর্পোরেশনগুলোর নীট আয় আশাঙ্খাজনক হারে হ্রাস পেলেও বিশ্বের সর্বোচ্চ রেভিনিউ অর্জনের দিক দিয়ে ১০টি কর্পোরেশন বা কোম্পানির মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২টি পাশাপাশি চীনের ৩টি, জাপানের ১টি, জার্মানের ১টি, নেদারল্যাণ্ডের ১টি, যুক্তরাজ্যের ১টি এবং মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবের ১টি কোম্পানির নাম তালিকায় উঠে এসেছে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী এবং সর্বোচ্চ রেভিনিউ অর্জনকারী জায়ান্ট কোম্পানি বা কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক আধিপত্য বজায় থাকলেও বিশ্বের উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি রেড জায়ান্ট চীনের সাম্প্রতিক দৃঢ় অবস্থান পশ্চিমা বিশ্বের অর্থনৈতিক ভীত কাঁপাতে শুরু করে দিয়েছে।

ফরচুনের র‍্যাংকিং অনুযায়ী ২০২০ সালে সারা বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ রেভিনিউ অর্জনকারী জায়ান্ট কোম্পানি বা কর্পোরেশনগুলো মধ্যে বরাবরের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ালমার্ট রয়েছে একেবারেই প্রথম স্থানে। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওয়ালমার্টের রেভিনিউ ৫২৩.৯৬ বিলিয়ন ডলার এবং নীট মুনাফা হিসেবে ১৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার অর্জন করে। তাছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের সিনোপ্যাক গ্রুপের রেভিনিউ ৪০৭.০১ বিলিয়ন ডলার ও নীট মুনাফা ৬.৮০ বিলিয়ন ডলার, তৃতীয় অবস্থানে থাকা চীনের স্টেট গ্রীডের রেভিনিউ ৩৮৩.৯১ বিলিয়ন ডলার ও নীট মুনাফা ৭.৯৮ বিলিয়ন ডলার এবং চতুর্থ স্থানে থাকা চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন রেভিনিউ হিসেবে ৩৭৯.১৩ বিলিয়ন ডলার ও নীট মুনাফা ৪.৪৪ বিলিয়ন ডলার অর্জন করে।

এদিকে পঞ্চম বৃহৎ কোম্পানি হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ নেদারল্যাণ্ডের রয়াল ডাচ সেল ২০২০ সালে রেভিনিউ অর্জন করে ৩৫২.১১ বিলিয়ন ডলার এবং নীট মুনাফা করে ১৫.৮৪ বিলিয়ন ডলার। ষষ্ঠ অবস্থানে থাকা সৌদি আরবের আরামকো কর্পোরেশনের রেভিনিউ ৩২৯.৭৮ বিলিয়ন ডলার এবং নীট মুনাফা ৮৮.২১ বিলিয়ন ডলার, জার্মানের ভক্সওয়াগন ২৮২.৭৬ বিলিয়ন ডলার আয় নিয়ে সপ্তম, যুক্তরাজ্যের বৃটিশ পেট্রলিয়াম (বিপি) ২৮২.৬২ বিলিয়ন ডলার আয় নিয়ে অষ্টম, মার্কিন ভিত্তিক আমাজন ২৮০.৫২ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ আয় নিয়ে নবম এবং জাপানের টয়োটা মটরস ২৭৫.২৯ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ ও ১৯.০১ নীট মুনাফা আয় নিয়ে দশম অবস্থানে রয়েছে।

তবে মোট সম্পদের বিবেচনায় বিশ্বের সর্বোচ্চ একক কোন কোম্পানি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি পন্য আইফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এ্যাপল নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২০ সালের শেষের দিকে এ্যাপল জায়ান্ট কর্পোরেশনের মোট সম্পদের পরিমাণ ১.৯৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১৯৭১ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া মুনাফা কমে গেলেও সৌদি আরবের আরামকো কোম্পানির সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১.৯৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১৯৫৬ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা বিশ্বের বুকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্পদশালী কোম্পানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্টের আমাজন ১.৬০ ট্রিলিয়ন ডলার সম্পদ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।

বিশ্বের সর্বোচ্চ সম্পদশালী এবং সর্বোচ্চ আয় অর্জনকারী জায়ান্ট কোম্পানি বা কর্পোরেশনগুলোর মধ্যে এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক প্রভাব বজায় থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে চীনের ক্রমোবর্ধমান অর্থনৈতিক বিকাশ এবং উত্থান একেবারেই চোখে পড়ার মতো। অথচ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ সামরিক পরাশক্তি রাশিয়া কিন্তু এখনো পর্যন্ত নিজেকে বিশ্বের দরবারে প্রথম সারির অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান করে নিতে পারেনি। অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশকিছু কোম্পানি বড় ধরণের আয় করতে সক্ষম হলেও ইউরোপীয় দেশগুলো তাদের অতীত অর্থনৈতিক গৌরব এবং সমৃদ্ধি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ধারবাহিকভাবে পতনের মুখে রয়েছে। তবে নীট রেভিনিউ ও মুনাফার আকার কম হলেও এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে থাকা তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্ত অবস্থানে চলে এসেছে।

ফরচুন ম্যাগাজিনের তথ্যমতে, দক্ষিণ কোরিয়া ভিত্তিক স্যামসাং জায়ান্ট কর্পোরেশনের ২০২০ সালে রেভিনিউ ছিল ২০০.৬০ বিলিয়ন ডলার, নীট মুনাফা ২০.৮৪ বিলিয়ন ডলার এবং তাদের মার্কেট ভ্যালু ৪৭৩.১৬ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া স্যামসং ২০১৮ সালে বিশ্বের বৃহত্তম শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে এটি বিশ্বের ১৪ তম বৃহত্তম কোম্পানি হিসাবে নিজের যোগ্য স্থান করে নেয়। আবার স্যামসাং এর মোট সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ২৯৩.০০ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া এশিয়ার আরেক ক্ষুদ্র দেশ তাইওয়ানের সেমিকণ্ডাক্টর কর্পোরেশনের সম্পদের পরিমাণ ৪০৫ বিলিয়ন ডলারে উঠে এসেছে। যা কিনা বিশ্বের সর্বোচ্চ দশম স্থানীয় সম্পদশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে।

অবশ্য দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশই আজ পর্যন্ত বিশ্বের বৃহৎ দশটি কোম্পানি বা কর্পোরেশনের ভিতর নিজের স্থান করে নিতে না পারলেও ভারতের টাটা, রিলায়েন্স, মাহিন্দ্রার মতো বড় আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো দাপটের সাথে সারা বিশ্বজুড়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে। ফরচুন ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনের  সালের তথ্য মতে, ২০২০ সালে ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মোট সম্পদের পরিমাণ ১১৪.৭৩ বিলিয়ন ডলার, রেভিনিউ ৮৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার এবং নীট মুনাফা ৫.৪০ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া একই সময়ে ইণ্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের রেভিনিউ ৬৭.৬৬ বিলিয়ন ডলার, টাটা মটরসের রেভিনিউ ৩৫.৮৭ এবং বাজাজ অটোজ এর রেভিনিউ ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট দেশ হিসেবে বাংলাদেশের স্কয়ার, বেক্সিমকো বা বসুন্ধরা, নাসির, ফ্রেস, এসিআই এবং নাভানা গ্রুপের মতো বেশ কিছু বৃহৎ এবং মাঝারী আকারের শিল্প-প্রতিষ্ঠান কিংবা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ প্রায় চার দশক ব্যাপী দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সুপরিকল্পিত শিল্পায়নে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও বিশ্বের সর্বোচ্চ আয় অর্জনকারী ১০০০ কিংবা ৫০০ কোম্পানির তালিকায় নেই বাংলাদেশের নাম। আর অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত এমনো অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের মোট সম্পদ এবং আয় থেকে নীট ঋণ এবং সার্বিক দায় দেনার পরিমাণ অনেক বেশি। অন্যদিকে আমাদের দেশে এ রকম হাজারো শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা নির্বিচারে কোটি কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এবং দেশের প্রচলিত আর্থিক আইনের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋন পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করছে এবং অত্যন্ত কৌশলে বিদেশে টাকা পাচার করে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করছে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.