--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তির পেছনে ব্যয় বাড়ছে, আগ্রাসী ভারত-চীন

বাংলাদেশের সংবাদের বিশেষ প্রতিনিধি সিরাজুর রহমানের ১ম পর্বের বিশ্লেষন

0

বিশ্বের উদীয়মান সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তিধর দেশ রেড জায়ান্ট চায়না সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভারত এবং এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মার্কিন যুক্তিরাষ্ট্র এবং জাপানের সাথে ক্রমোবর্ধমান সামরিক উত্তেজনা এবং বিরোধের মুখে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট বরাদ্দ দিতে যাচ্ছে। মুলত ২০২০ সাল থেকে চলা ভয়াবহ করোনা মহামারির বিরুপ প্রভাব থাকা সত্ত্বেও কমিউনিষ্ট শাষিত চীনের পার্লামেন্টে সামরিক বাজেট চলতি ২০২১ সালের জন্য সর্বোচ্চ ২০৯ বিলিয়ন ডলার বা ১.৩৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান নির্ধারণ করতে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়। যা কিনা চীনের ২০২০ সালের সামরিক বাজেট অপেক্ষা ৬.৮% বেশি। যেখানে ২০২০ সালে চীনের সামগ্রিকভাবে প্রতিরক্ষা বাজেট ছিল আনুমানিক ১৯৫ বিলিয়ন ডলার। আবার ২০১৯ সালে চীনের প্রতিরক্ষা খাতে ১৭৭.৬১ বিলিয়ন ডলার বাজেট বরাদ্দ করে এবং তার পূর্বের বছর ২০১৮ সালে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৭৫ বিলিয়ন ডলার।

অবশ্য বিশ্বের প্রথম স্থানীর সামরিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২১ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ ৭৪০.৫০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক ও প্রতিরক্ষা বাজেট বরাদ্দ দেয়। যা কিনা আবার চীনের সামরিক বাজেটের প্রায় সারে তিনগুণ বেশি। যেখানে তাদের ২০২০ সালে সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ৭১৪ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি ভারত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী সামরিক হুমকী মোকাবেলা কিংবা প্রতিহত করতে সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থ বছরে ভারতের সামরিক বাজেট ৬৫.৭০ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়। ভারতের সামগ্রিক সামরিক বাজেট চীন অপেক্ষা তিনগুণ কম হলেও দেশটি ২০২০ সালে ৬৬.৯০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখে। আসলে ২০২০ সালে ভারতের পার্লামেন্ট প্রাথমিকভাবে সামরিক বাজেট হিসেবে ৬৪.৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দেয়। তবে ২০২০ সালে লাদাখ সীমান্তে চীনের সাথে সামরিক উত্তেজনা এবং বৈরীতা ব্যাপক আকার ধারণ করায় ভারতের সামরিক বাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি করার স্বার্থে আরো অতরিক্ত ২০,৭৭৬ কোটি রুপীর বিশেষ ফাণ্ড বরাদ্দ দেয়।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, গত ২০২০ সালের ১৬ই জুন চীন ও ভারতের মধ্যে থাকা লাইন অব একচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) এ সড়ক নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেশ দুটি এক ভয়াবহ রকমের প্রাণঘাতী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দেশ দুটি। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের শতাধিক সেনা হতাহত হওয়ার মধ্য দিয়ে লাখাদ অঞ্চলে সীমান্ত অতিক্রমের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে দেশ দুটির মাঝে এখনো পর্যন্ত চরম বিরোধ ও সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই থেকে চীন ও ভারত সীমান্তে তাদের সামরিক উপস্থিতি এবং সক্ষমতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৃদ্ধির করার কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

এখানে বলে যেতে পারে ১৯৬২ সালের ভয়াবহ যুদ্ধের পর উভয় পক্ষের মধ্যে কোন রকম সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে সামরিক সংঘর্ষ না হলেও ভারত ও চীন একে অপরের বিরুদ্ধে কৌশলগতভাবে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিশেষ করে সীমান্ত সংলগ্ন দক্ষিণ এশিয়ার পাশ্ববর্তী দেশগুলোর উপর নিজস্ব প্রভাব বিস্তারে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে না চীন ও ভারত। তাছাড়া বর্তমানে দেশ দুটি সীমান্ত উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে চরম পর্যায়ে একে অপরকে দোষারোপ করার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সুবিশাল সীমান্তে এক রকম নিরবেই ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি ও সেনা সমাবেশ করে চীনের আগ্রাসী মনোভাবের শক্ত জবাব দিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং রাশিয়া থেকে বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র এবং প্রযুক্তি সংগ্রহে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে না ভারত সরকার।

তবে ভারত ও চীনের সীমান্ত উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে যে যাই বলুক বা মনে করুক না কেন, আপাতত দৃষ্টিতে ভারত ও চীনের মধ্যে স্বল্প পরিসরে বা ব্যাপক আকারের সরাসরি সীমান্ত সংঘর্ষ কিংবা পূণাঙ্গ যুদ্ধের অদৌ কোন সমুহ সম্ভবনা আছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া উদীয়মান এশিয়ার দুই বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি চীন ও ভারত এ মুহুর্তে বাস্তবিক অর্থে ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতি স্বীকার করে একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ানোর মতো কোন শক্ত অবস্থানে আছে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। তাছাড়া ভবিষ্যতে যে কোন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারত বা চীনের পক্ষে অপ্রচলিত পারমানবিক অস্ত্র প্রয়োগের মতো ভয়াবহ ঝুঁকি নেয়া এক কথায় অসম্ভব। যদিও এ মুহুর্তে চীনের অস্ত্র ভান্ডারে ৩২০টি এবং ভারতের অস্ত্র ভান্ডারে ১৪০টি বা তার বেশি সংখ্যক নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র ও ওয়ারহেড মজুত থাকতে পারে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.