--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বে মুসলমানরাই নির্যাতিত হচ্ছে বেশি, কিন্ত কেন?

0

বর্তমানে পৃথিবীতে ষাটের কাছাকাছি মুসলিম সংখ্যগরিষ্ঠ দেশসহ সারা বিশ্বে প্রায় ১.৮ বিলিয়ন সুবিশাল মুসলিম জনসংখ্যার মানুষ বসবাস করে। আর এত বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনসংখ্যা সারা বিশ্বে বাস করলেও এ মুহুর্তে নির্যাতিত এবং যুদ্ধ কবলিত মোট লোকসংখ্যার বিচারে ৯৫% কোন না কোন দেশের ইসলাম ধর্মের অনুসারী সাধারণ এবং নিরহ লোকজন। অর্থ্যাৎ এ মুহুর্তে সারা বিশ্বে যুদ্ধ কবলিত অঞ্চলে যতজন লোক মারা যাচ্ছে তার ৯৫% মুসলিম জাতি গোষ্ঠির সাধারণ মানুষ। মুসলিম দেশগুলো একতাবদ্ধ না হয়ে নিজেই নিজেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। সিরিয়া, লিবিয়া এবং ইয়েমেন তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আর যুদ্ধ কবলিত এসব দেশে সৌদি আরব, ইরান, তুরস্ক, আরব আমিরাত এবং মিশর বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে আমেরিকা এবং রাশিয়ার উস্কানীতে নিজেদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার এবং ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাইডেন সরকার ক্ষমতায় আসতে না আসতেই এক মাসের মাথায় ইরানকে শিক্ষা দিতে সিরিয়ায় থাকা ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গ্রুপের বেশকিছু অবস্থানে বিমান হামলা চালিয়ে নতুন করে যুদ্ধ হুংকার কিংবা সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শনে চেষ্টার কোন ত্রুটি করেনি। আর তাদের ভাষায়, ‘আমেরিকা ইজ ব্যাক’। মানে শুরু হয়ে গেছে নতুন করে প্রভাব বিস্তার, ধ্বংস এবং যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এক সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত চল্লিশ বছরে যুদ্ধের কারণে প্রায় দুই কোটি মুসলিম কমিউনিটির মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। যার ৮০% পর্যন্ত কিন্তু সম্পূর্ণ বেসামরিক জনসাধারণ এবং তাঁদের সাথে যুদ্ধের আদৌ কোন সম্পর্ক আছে কি না সন্দেহ। তা সত্ত্বেও সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ভয়াবহ যুদ্ধের শিকার হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এ সংখ্যা প্রায় একটি বিশ্বযুদ্ধের হতাহতের প্রায় কাছাকাছি বলা চলে।

অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং ইরান সিরিয়ায় শান্তির নামে প্রায় এক যুগ ব্যাপী অতি ভয়ঙ্কর ও প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা এবং যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। সিরিয়ায় ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লক্ষাধিক বৃদ্ধ, নারী, শিশুসহ অসংখ্য মানুষ মৃত্যুবরণ করলেও দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা আদৌ ধরাছোঁয়ার বাহিরেই রয়ে গেছে। এর ফলে এর পরিণাম যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এদিকে মার্কিন বাহিনী এবং রাশিয়ার পুতিন বাহিনী সিরিয়াকে কার্যত এক ভয়ানক নতুন এবং আধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম পরীক্ষার উম্মুক্ত রণক্ষেত্র হিসেবে নির্বিচারে ব্যবহার করে যাচ্ছে। রাশিয়া খুব সম্ভবত ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আনুমানিক ২২০টি এর কাছাকাছি নতুন প্রযুক্তির অস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে এবং মার্কিন বাহিনীও প্রায় ১৭০টি এর কাছাকাছি প্রাণঘাতী প্রচলিত এবং অপ্রচলিত অস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে বলে জানা যায়। যদিও বিষয়টি নিরপেক্ষ কোন সূত্র মাধ্যমে প্রমাণ করার কোন সুযোগ নেই।

আসলে খ্রিষ্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ এবং অন্যান্য ধর্মের অনুসারী দেশ এবং কমিউনিটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে যতটা অগ্রগতি অর্জন করেছে, সে অনুপাতে মুসলিম বিশ্ব নিজেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে এগিয়ে যেতে পারছে না। আর না আছে এদের মধ্যে কোন একতা এবং নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব। তাছাড়া মধ্যপ্রাচ্যেসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা অধিকাংশ দেশে মহান আল্লাহ তালার অশেষ নিয়ামত স্বরুপ যে সুবিশাল তেল ও গ্যাসের ভাণ্ডার মজুত রয়েছে তা কিন্তু পিছিয়ে পড়া মুসলিম জাহানের কল্যানে ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং সার বিশ্বের মুসলিম দেশগুলো নব্য এই প্রযুক্ত ও শিল্পায়নের আধুনিক যুগে এসে অতি মাত্রায় প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে এবং নিজেদের মধ্যে সন্দেহ, বিবাদ ও কলহ ইতোমধ্যেই চরম মাত্রায় পৌছে গেছে।

অথচ মধ্যযুগে ইসলামের সোনালী যুগে জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের পথ প্রদর্শক এবং বাতিঘর ছিল মুসলিন বিশ্ব। আসলে ইসলাম আমাদের মানবতা এবং সহনশীলতা শিক্ষা দানের পাশাপাশি আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে এবং সঠিক পথে নিজেকে পরিচালনায় ইতিবাচক দিক নির্দেশনা প্রদান করে থাকে। যাতে করে আমরা ইসলাম ও বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক জীবন যাপনে অভ্যস্থ হই এবং পাশাপাশি ইহুদি ও নাসারাদের রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে প্রতিহত করার যথেষ্ঠ যোগ্যতা এবং সক্ষমতা অর্জন করতে পারি। মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞনে উৎকর্ষতা এবং সাফল্য লাভে ইসলামের মুল আর্দশ এবং মহান আল্লাহ তালার প্রেরিত পবিত্র আল কুরআনের মর্মবাণী এবং গবেষণা এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে। তৎকালীন সময়ে ইসলাম এবং পবিত্র কুরআন এর শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হয়ে মুসলিম বিশ্ব বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে সারা বিশ্বজুড়ে শিল্প এবং প্রযুক্তি ও শিল্প বিল্পব সংঘটিত হয়।

যদিও জ্ঞানের আলো নিভে মুসলিম বিশ্ব আজ দিশাহার এবং অত্যন্ত উচ্চ মাত্রায় প্রাচ্য এবং প্রশ্চাত্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অথচ আধুনিক সভ্যতার বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের নেপথ্য থেকে যদি মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানকে সরিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে এই বর্তমান যুগের আবিষ্কার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন একেবারেই ধসে পড়বে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাসে মুসলমানদের অবদান অপরিসীম। ঐতিহাসিক হিট্টি বলেছেন, ‘অষ্টম শতাব্দীর মধ্যভাগ সময় থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষভাগ পর্যন্ত মুসলিমরা সমগ্র বিশ্বের বুদ্ধি এবং সভ্যতার বাতিঘর ছিল’। তৎকালীন সময়ে মুসলিম বিশ্বের ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো একে অপরের সাথে জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা এবং গবেষণায় প্রবল প্রতিযোগিতা করত। সেখান থেকে সৃষ্টি হয়েছিল আল কেমি, ইবনে সিনা, আল-খোয়ারিজম, ইবন তুলুন, ইবনে আল হাইছাম এর মতো অসংখ্য খ্যাতমান দার্শনিক, সাধক, বিজ্ঞানী, গণিতবিদ , চিকিৎসক এবং পর্যটক।

অথচ আজ সারা বিশ্বে অন্য ধর্ম ও জাতিগষ্ঠি বিজ্ঞান, গবেষণা ও প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে অগ্রগতি অর্জন করলেও মুসলিম বিশ্ব কিন্তু কোন অবস্থাতেই এর যোগ্য অংশীদার হতে পারছে না। অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া ইসলামিক দেশগুলো প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মার্কিন, ইউরোপ, চীন কিম্বা রাশিয়ার প্রভাব বলয়ে বা অদৃশ্য জালে আটকে রয়েছে। এখন কোন মুসলিম দেশ ও অন্য দেশে বসবাস করা বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠি যদি অন্য কোন দেশ দ্বারা মারাত্বকভাবে আক্রান্ত হয় কিম্বা সামরিক আগ্রাসনের ও ভয়াবহ নির্যাতনের শীকার হয়, তবে সে ক্ষেত্রে মুসলিম জনগোষ্ঠী এবং দেশকে রক্ষা করার জন্য বিশ্বে আপাতত কেউ আছে বলে মনে হয় না। সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্থীন ও মায়ানমারে রেহিঙ্গা মুসলিম জাতিগোষ্ঠি নিধন ও নির্যাতন এর জ্বলন্ত উদাহরণ।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.