--- বিজ্ঞাপন ---

থেমে নেই বিশ্বের অস্ত্র বাণিজ্য

0

২০২০ সালের শুরু থেকে সারা বিশ্বব্যাপী চলা ভয়াবহ করোনা মহামারির মধ্যেও থেমে নেই বৈশ্বিক অস্ত্র বানিজ্য এবং ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি। আসলে প্রতি বছর সাধারণত সারা বিশ্বে কি পরিমাণ এবং কত মূল্যের অস্ত্র বানিজ্য এবং রপ্তানি হয়ে থাকে তার প্রকৃত অবস্থা জানাটা বেশ কঠিন হলেও মনে করা হয় শুধুমাত্র ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আনুমানিক ১৪৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বানিজ্য এবং রপ্তানি হয়। যদিও স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের, বিজনেস ইনসাইডার, জেনস রিপোর্টসহ বৈশ্বিক পর্যায়ের বেশকিছু ডিফেন্স থিংকট্যাংক এবং গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যে অনেকটা ভিন্নতা থাকলেও ২০১৯ সালের জানুয়ারী থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে আনুমানিক মোট ৯৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বানিজ্য হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।

সুইডেন ভিত্তিক স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তার বৈশ্বিক অস্ত্র লেনদেনের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে গত ১৫ই মার্চ ২০২১ তারিখে প্রকাশিত ‘ট্রেন্ডস ইন ইন্টারন্যাশনাল আর্মস ট্রান্সফার-২০২০’ নামক শীর্ষক বার্ষিক রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, বিশ্বে অস্ত্র বানিজ্য এবং রপ্তানিতে বরাবরের মতো শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গত পাঁচ বছরে দেশটির অস্ত্র রপ্তানি ৩২% থেকে ৩৭% পর্যন্ত বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ফ্রান্স ও জার্মানির অস্ত্র রপ্তানিও বেড়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি কমেছে চীন ও রাশিয়ার। যদিও ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক আন্তর্জাতিক অস্ত্র বিক্রি পরিস্থিতি বেশ স্থিতিশীল ছিল।

তাছাড়া সুইডেন ভিত্তিক স্টকহোম পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামরিক গবেষণামুলক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত ৫ বছরে বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্য এবং রপ্তানির ৩৭% বা তার কাছাকাছি একাই নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট। তাছাড়া দেশটি ঠিক একই সময়ে বিশ্বের মোট ৯৬টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে এবং ঠিক একই সময়ে মোট রপ্তানির ৪৪% পর্যন্ত চলে যায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। অন্যদিকে বিগত ২০১৬-২০ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যের ২০% রাশিয়া, ৮.২% ফ্রান্স, ৫.৫ জার্মানি, ৩.৩% যুক্তরাজ্য, ৩% ইসরাইল, ২.৭% দক্ষিণ কোরিয়া, ৫.২% চীন এবং অন্যান্য সকল দেশগুলো মিলে ১৫% নিয়ন্ত্রণ করে।

বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীনের নাম উঠে আসলেও দেশটির অস্ত্র বানিজ্য ২০১১-১৫ সাল অপেক্ষায় পরবর্তী ২০১৬-২০ ৫ বছরে অস্ত্র রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে ৭.৮%। তবে ২০১৬-২০ বিগত ৫ বছরে বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানির ৫.২% নিয়ন্ত্রণ করে রেড জায়ান্ট চীন। আর চীনেত অস্ত্র রপ্তানির মূল বাজার হচ্ছে মিয়ানমার, পাকিস্তান, বাংলাদেশ এবং আলজেরিয়ার মতো দেশগুলো। তাছাড়া চীন ২০১৬-২০ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে ৪.৭% অস্ত্র, যন্ত্রাংশ, জেট ইঞ্জিন এবং সামরিক প্রযুক্তি নিজেই আবার আমদানি করেছিল।

বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যের একটি বড় অংশ সরাসরি চলে যাচ্ছে মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোতে। অর্থ্যাৎ এ মুহুর্তে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম আমদানি করে থাকে মধ্যপ্রাচ্যের বাদশা আমীর শাসিত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরান, কাতার, কুয়েত, ওমানসহ আরো বেশ কিছু দেশ। তাছাড়া ২০১১ থেকে ২০১৫ বছর অপেক্ষা ২০১৬ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ২৫% অধিক অস্ত্র আমদানি করেছে। বিশেষ করে বিগত এক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়া, ইয়েমেন এবং ইরাকে অস্থিতিশীল যুদ্ধ পরিস্থিতির মুখে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ইরান এবং তুরস্ক নিজেদের মধ্যে ভয়াবহ রকমের প্রভাব বিস্তার এবং আঞ্চলিক কৌশলগত প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়ে পড়েছে। আর এহেন অশুভ প্রভাব বিস্তারের খেলায় নিজেকে রক্ষা করতে কাতার, কুয়েত, ওমানের মতো দেশগুলো কিন্তু নির্বিচারে অস্ত্র আমদানি করে যাচ্ছে। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মোট অস্ত্র রপ্তানির প্রায় ৪৭% একাই সম্পন্ন করে এবং তার মোট অস্ত্রের প্রায় ২৪% সরাসরি চলে যায় সৌদি আরবে।

২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত ৫ বছরে মধ্যপ্রাচ্যে মোট বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানি ও বানিজ্যের প্রায় ৪০% চলে যায় সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। আর বিশ্বের বুকে একক কোন দেশ হিসেবে সৌদি আরব একাই প্রায় ১২% অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম আমদানি করে। ঠিক একই সময়ে সৌদি আরব অস্ত্র আমদানি ৬১% এবং কাতার ৩৬১% বৃদ্ধি করেছে। অন্যদিকে আফ্রিকার দেশ মিশর নজিরবিহীনভাবে তার অস্ত্র আমদানি ১৩৬% পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।

২০১১ থেকে ২০১৫ সাল অপেক্ষা ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত ৫ বছরে তুরস্ক আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার থেকে অস্ত্র আমদানি ৫৯% পর্যন্ত হ্রাস করেছে। মুলত দেশীয় পর্যায়ে সামরিক শিল্প উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় তুরস্ক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অস্ত্র আমদানি কমাতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে বিরোধ এবং মতানৈক্যের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানের মতো দেশগুলো তুরস্ক অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি আশাঙ্খাজনক হারে কমিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের বিরোধে জড়িয়ে মার্কি প্রশাসন তুরস্ককে তার অত্যন্ত ব্যয়বহুল বহুজাতিক এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ফাইটার প্রজেক্ট থেকে বের করে দিলে এবং একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করলে পশ্চিমা দেশগুলো থেকে অস্ত্র আমদানির পথ অনেকটাই সীমিত হয়ে যায়। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে তুরস্ক কিন্তু ২০২০ সালে প্রায় ৩.৭২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তার নিজস্ব প্রযুক্তির সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি করতে সক্ষম হয়।

আবার ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এশিয়া এবং ওসেনিয়া অঞ্চলের দেশগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ৪২% অস্ত্র আমদানি করে। যার একটি বড় অংশ ভারত, পাকিস্তান, চীন, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানে চলে যায়। তাছাড়া বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে ভারতের নাম উঠে এসেছে। বিশেষ করে ভারত ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিগত ৫ বছরে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৯.৫% যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম আমদানি করে। তবে মনে করা হয় চীন ও পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত উত্তেজনার মুখে ভারত ২০১৮-২০ সালে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলারের নতুন অস্ত্র এবং প্রযুক্তি আমদানি চুক্তি সম্পন্ন করেছে। তাছাড়া চীন ৪.৭% অস্ত্র ও প্রযুক্তি রাশিয়াসহ বেশকিছু দেশ থেকে আমদানি করে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.