--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

0

দেশের জাতীয় নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শতভাগ সুনিশ্চিত করার স্বার্থে বর্তমান সরকার দীর্ঘ মেয়াদি ন্যাশনাল ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রনয়ণ করেছেন। যার আলোকে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক বাংলাদেশ সেনা ও নৌ বাহিনীর পাশাপাশি বিমান বাহিনীকে আরো শক্তিশালী এবং আধুনিক জেট ফাইটার দিয়ে সমৃদ্ধ করে গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রায় দীর্ঘ দিন থেকেই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ) ১৬টি টুইন ইঞ্জিন ডেডিকেটেড পশ্চিমা কোন দেশের জেট ফাইটার ক্রয়ের বিষয়টি বার বার মিডিয়ার সামনে আসলেও বিষয়টি কিন্তু এখনো পর্যন্ত আলোচনার পর্যায়ে রয়ে গেছে।

তবে পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক অবস্থার কারণে ভবিষ্যতে আকাশ পথে শত্রু পক্ষের আগত যে কোন ধরণের সামরিক আগ্রাসন এবং চ্যালেঞ্জিং মোকাবেলায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদার ভিত্তিতে মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এমআরসিএ) জেট ফাইটার সংগ্রহ সংক্রান্ত প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব মানের পশ্চিমা দেশের কোন ১৬টি টুইন ইঞ্জিন জেট ফাইটার ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। তাছাড়া সরকার দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ও কমব্যাট সক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে জি টু জি প্রক্রিয়ায় সরাসরি ১৬টি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান ক্রয়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছেন। সে লক্ষেই মুলত অনেক আগেই প্রনয়ণ করা হয় ন্যাশনাল ফোর্সেস গোল ২০৩০।

সূত্র মতে, বিশ্ব মানের ডেডিকেটেড ১৬টি পশ্চিমা টুইন ইঞ্জিন বিশিষ্ট্য জেট ফাইটার সংগ্রহ করতে আনুমানিক মোট ৩.০০ বিলিয়ন ডলার বা ২৫,২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হতে পারে। আর ক্রয়ের প্রথম বছরেই এককালীন কিস্তি হিসেবে পরিশোধ করতে হবে আনুমানিক ৬,৩০০ কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমান অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি আসন্ন ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিশেষ ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বিমান বাহিনীর সদর দপ্তর এবং তার সাথে এই প্রস্তাবের একটি অনুলিপি অর্থ সচিবকেও পাঠানো হয়েছে বলে অর্থ বিভাগ সূত্রে জানানো হয়েছে।

এমআরসিএ প্রজেক্টের আওতায় চলমান টেন্ডারের শর্ত, কার্যক্রম এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের দেয়া প্রস্তাব ও সুযোগ বিশ্লেষণ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী জানায় যে, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে এই যুদ্ধবমান সংগ্রহের প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে সরাসরি জি টু জি পদ্ধতিতে। তাছাড়া আগামী অর্থ বছরে মধ্যেই ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করতে হলে প্রথম ২০২১-২২ সালেই বাজেটে ৬,৩০০ কোটি টাকা বা এমআরসিএ প্রকল্পের ২৫% অর্থ বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। আর এই পরিমাণ অর্থ সামরিক বাহিনীর নিয়মিত বাজেটের বাহিরে বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন এবং চুক্তি মোতাবেক অবশিষ্ট্য অর্থ পরিশোধ করার বিষয়টি অন্তভুক্ত করতে হবে। যাতে খুব সহজেই আমাদের জাতীয় অর্থনীতির উপর চাপ না পড়ে প্রতি বছর জেট ফাইটার ক্রয়ের অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে ১৯৯৯ সালের দিকে বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ১৬টি মিগ-২৯ জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে এবং চুক্তি মোতাবেক ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। তবে পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের ফলে এ চুক্তিটি বাতিল করলে পরবর্তী ৮টি মিগ-২৯ সরবরাহ বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। তখন সেই সময়ে প্রতি ইউনিট মিগ-২৯ জেট ফাইটার ১১ মিলিয়ন ডলারে ক্রয় করা হয়। তাছাড়া অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জামসহ প্রশিক্ষণ, পরিবহনসহ আটটি মিগ-২৯ জেট ফাইটারের জন্য মোট ব্যয় করা হয় প্রায় ১২৪ মিলিয়ন ডলার। আবার ২০১০-১১ সালের দিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে আবারো যুক্ত করা হয় চীনের তৈরি ১৬টি আধুনিক এফ-৭বিজি১ লাইট ইন্টারসেপ্টর এন্ড মাল্টিরোল জেট ফাইটার।

ইউকিপিডিয়ার নিজস্ব ওয়েব সাইট এবং বেশকিছু ডিফেন্স রিলেটেড ওয়েব ম্যাগাজিনে বাংলাদেশকে ইউরো ফাইটার তাইফুন জেট ফাইটারের ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেব দেখানে হয়েছে। তাছাড়া রাশিয়া তার নতুন প্রজন্মের মিগ-৩৫ বা এসইউ-৩০ জেট ফাইটার এবং এদিকে চীন তার নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি জে-১০সি ভেরিয়েন্টের এবং ভারত তার লাইট এডভান্স তেজাস জেট ফাইটার বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হাতে তুলে দিতে এখনো পর্যন্ত বিভিন্ন চ্যানেলে সর্বোচ্চভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পছন্দের তালিকায় রয়েছে পশ্চিমা কোন দেশের তৈরি টুইন ইঞ্জিন সমৃদ্ধ কোন এডভান্স মাল্টিরোল হেভী কমব্যাট জেট ফাইটার। তাই সেদিক বিবেচনায় আমাদের প্রাণের প্রিয় বিমান বাহিনীতে অদূর ভবিষ্যতে ইউরোফাইটার তাইফুন ক্যাটাগরির হেভী মাল্টিরোল এণ্ড এয়ার সুপিউরিটি জেট ফাইটের সীমিত পরিসরে হলে সার্ভিসে আসার সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, ইউরোফাইটার তাইফুনে ১০০ কিলোমিটার পাল্লার বিখ্যাত মেটওর এয়ার টু এয়ার বিভিআর মিসাইল এবং লকহীড মার্টিনের তৈরি সিঙ্গেল ইঞ্জিনের এফ-১৬ জেট ফাইটারে রেইথনের তৈরি এআইএম-১২০সি ৫-৭ অথবা আরো ভয়ংকর এআইএম-১২০ডি সিরিজের ১৬২ কিলোমিটার পাল্লার এয়ার টু এয়ার বিভিআর মিসাইল নিয়ে আকাশে উড্ডয়ন করলে আমাদের আশেপাশে থাকে দেশগুলোর হেভী টুইন ইঞ্জিন রাশিয়ান অরজিন এসইউ-৩০ হোক কিংবা চীনের তৈরি যে কোন বিমান বাংলাদেশের আকাশ সীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করতে হলে কমপক্ষে ১০ বার ভাবতে হবে। তাছাড়া এন্টিশীপ সজ্জিত ইউরোফাইটার একটি দীর্ঘ পাল্লার হেভী ওয়েট জেট ফাইটার হওয়ায় আমাদের সুবিশাল সমুদ্র সীমানায় শত্রু পক্ষের জাহাজ কিংবা নজরদারী বিমানের গোপনে প্রবেশ করাটা অনেকটাই দূঃস্বপ্নে পরিণত হয়ে যাবে।

তবে এক সামরিক গবেষণার তথ্যমতে, এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেইথন কোম্পানির তৈরি এআইএম-১২০ সিরিজের এয়ার টু এয়ার মিসাইলের বিশ্বের একাধিক যুদ্ধক্ষেত্রে একাধিক এয়ার টু এয়ার কমব্যাট কিলিং রেকর্ড তৈরি করে রেখেছে। আর এখন মার্কিন লিকহীড মার্টিন কর্পোরেশন আইএম-১২০ এর রিপ্লেস হিসেবে ২০০ কিলোমিটার রেঞ্জের এআইএম-২৬০ (বিভিআরএএএম) সুপার এডভান্স এয়ার টু এয়ার মিসাইল উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে। আবার বিশেষ করে ২০১৯ সালের ২৭ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি এফ-১৬ ভারতের একটি মিগ-২১ এআইএম-১২০সি ক্যাটাগরির মিসাইল ফায়ার করে শুট ডাউন করলে ভারতের আকাশ সক্ষমতাকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ফেলে দেয়। যদিও ভারতের বিমান বাহিনীতে ২৬০ এর কাছাকাছি হেভী ওয়েট এণ্ড লং রেঞ্জের এসইউ-৩০ এমকেআই এডভান্স জেট ফাইটার থাকলেও সীমিত আকাশ যুদ্ধে পাকিস্তানের এফ-১৬ ভারতের সীমানা পেড়িয়ে এলেও কোন ধরণের শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল এমন নজির খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তাছাড়া ২০২০ সালে নার্গানো-কারাবাখ অঞ্চলের দখল নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া ৪৪ দিনের সংক্ষিপ্ত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে রণক্ষেত্রে তুর্কী এফ-১৬ আর্মেনিয়া বিমান বাহিনীর দুটি এসইউ-২৫ যুদ্ধবিমান মিসাইলের আঘাতে শুট ডাউন করে বসলে আর্মেনিয়ার বিমান বাহিনীতে থাকা ৪টি রাশিয়ার তৈরি এসিউ-৩০ জেট ফাইটারগুলো কোন এক আজানা কারণে আকাশ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে।

তাই ভবিষ্যতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে ১৬টি লং রেঞ্জের ইউরোফাইটার তাইফুন এডভান্স জেট ফাইটার থাকার পাশাপাশি কমপক্ষে ৩৬টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াম রেঞ্জের এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট ফাইটার সার্ভিসে আনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরত্ব সহকারে বিবেচনা করা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। এজন্য আগে অবশ্য ৫ থেকে ৭ বছর মেয়াদে কমপক্ষে ৮ বিলিয়ন ডালারের সামরিক বাজেটের বাহিরে অতিরক্ত বিশেষ ফাণ্ড বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। ১৬টি ইউরোফাইটার তাইফুনের পাশাপাশি ৩৬টি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন ব্লক-৭০/৭২ সিরিজের জেট ফাইটার ভবিষ্যতে সার্ভিসে আনার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে আগামী ২০৬০ সাল পর্যন্ত বাংলার আকাশ কার্যকরভাবে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। এদিকে যুদ্ধবিমান ক্রয়ের পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদী প্যাকেজের আওতায় রিপিয়ার, মেইনটেন্যান্স, সার্ভিসিং, ট্রেনিং, ইঞ্জিন ওভারহোলিং এবং পরবর্তীতে আপগ্রেডিং এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দক্ষতার সাথে নিশ্চিত করতে হবে। তার সাথে অবশ্যই পর্যাপ্ত সংখ্যক এয়ার টু এয়ার মিসাইল, এয়ার টু গ্রাউণ্ড এবং এন্টিশীপ মিসাইলের মজুতের বিষয়টি কিন্তু মাথায় রাখা জরুরি।

বর্তমানে আমাদের দেশের পাশ্ববর্তী দেশগুলোর বিমান বাহিনীতে আমাদের বিমান বাহিনী অপেক্ষা অনেক উন্নত এবং নতুন প্রজন্মের যুদ্ধবিমান সার্ভিসে রয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের বিমান বাহিনী গত এক যুগ আগেও বাংলাদেশ অপেক্ষা অনেকটাই পিছিয়ে থাকলেও বর্তমানে চীন এবং রাশিয়ার সাথে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করে রাশিয়া থেকে ৩১টি মিগ-২৯ ৬টি এসইউ-৩০ (অর্ডারকৃত) এবং চীন থেকে ৭টি জেএফ-১৭ জেট ফাইটার সংগ্রহ করায় আকাশ সক্ষমতায় আমাদের অপেক্ষা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। তাই বর্তমান পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা এবং আমাদের শত্রুভাবাপন্ন দেশের সম্ভাব্য আকাশ আগ্রাসন ও হুমকি মোকাবেলায় নিজ দেশের মাটিতে আধুনিক মানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকার পাশাপাশি ৪++ প্রজন্মের অত্যাধুনিক এবং ব্যাটল প্রুভেন (এমআরসিএ) জেট ফাইটারের একাধিক স্কোয়াডন সার্বক্ষণিক মোতায়েন থাকা দরকার।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.