করোনার কারনে বিশ্বে ভারতীয়দের প্রবেশ সীমিত হয়ে আসছে। দুটি বড় দেশে এখন ভারতীয়দের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আমেরিকা ও বৃটেনে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে এখন কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। ভারতে করোনা বৃদ্ধির কারনে একের পর এক দেশ ভারতীয়দের জন্য এ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, ভারতে আছড়ে পড়েছে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ। দৈনিক সংক্রমণ ইতিমধ্যেই লাগামছাড়া হয়েছে দেশে। এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার নাগরিকদের ভারতে না যাওয়ার পরামর্শ দিল আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। আমেরিকার এই সংস্থার জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের কোভিড পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সিডিসি-র জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, ‘ভারতের বর্তমান কোভিড পরিস্থিতি যে আকার নিয়েছে, তাতে টিকা নেওয়া পর্যটকেরও কোভিডে সংক্রমিত হওয়ার এবং সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে। সে জন্যই পর্যটকদের এখন ভারতে না যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে। যদি ভারতে যেতেই হয়, তা হলে ভ্রমণের আগে টিকার ডোজ অবশ্যই নিতে হবে। প্রত্যেক পর্যটকের উচিত মাস্ক পরা, ৬ ফুটের দূরত্ব বজায় রাখা, ভিড় এড়ানো এবং হাত ধোয়া’।
আমেরিকা তার দেশের পর্যটকদের ভারতে না আসার পরামর্শ দিয়েছে। ব্রিটেন এক ধাপ এগিয়ে ভারতীয়দের ব্রিটেনে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ইতিমধ্যেই বাতিল করেছেন ভারত সফর। সোমবার সে দেশের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক জানিয়েছেন, করোনা অতিমারির বাড়বাড়ন্তের জেরে কোনও ভারতীয় ব্রিটেনে ঢুকতে পারবেন না। যদিও ভারত থেকে কোনও ব্রিটিশ নাগরিক সে দেশে ফিরে গেলে তাঁকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়তে হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভারত সফর বাতিলের পর এ বার সে দেশে ভারতীয়দের পা রাখায় নিষেধাজ্ঞা চাপাল ব্রিটেন। সোমবার ব্রিটেনের পার্লামেন্টে এই ঘোষণা করেছেন সে দেশের স্বাস্থ্যসচিব ম্যাট হ্যানকক। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে কোনও ভারতীয় ব্রিটেনে ঢুকতে পারবেন না বলে জানিয়েছে সে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে ভারত থেকে কোনও আইরিশ তথা ব্রিটিশ নাগরিকেরা সে দেশে গেলে, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বেন না। যদিও ভারতের উপর এই নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন ওই নাগরিকেরা ব্রিটেনে পা রাখলে তাঁদের মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে বাধ্যতামূলক ভাবে ১০ দিনের কোয়রান্টিনে থাকতে হবে।
সোমবার ব্রিটেনের পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্স-এ দাঁড়িয়ে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে জানিয়েছেন হ্যানকক। তিনি আরও জানিয়েছেন, ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের নাগরিকদের উপরেও একই নিষেধাজ্ঞা বহাল করা হয়েছে। ব্রিটেনে সফরের বিধিনিষেধ আরোপ করে এ সব দেশের নাগরিকদের লাল তালিকায় রাখা হয়েছে। সম্প্রতি ব্রিটেনে করোনার ভারতীয় প্রজাতির ১০৩টি সংক্রমণের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সে কারণেই ভারতীয়দের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে কোভিড আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২ হাজার ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। একদিনে মৃত্যুর হিসাবে এটি দেশটিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৭শ’র কিছু বেশি। সবমিলিয়ে ভারতে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ১৩০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৫৫৩ জনের।