--- বিজ্ঞাপন ---

অস্ত্র রফতানিতে তুরস্কের বড় ধরনের সাফল্য

0

কাজী আবুল মনসুর / সিরাজুর রহমান

অস্ত্র রফতানি বিশ্বে এবার নাম উঠে এসেছে তুরস্কের। পৃথিবীর অন্যতম মুসলিম দেশ হিসেবে তুরস্কের অস্ত্র রফতানি অনেককে হতবাক করেছে। ২০২১ সালে মাত্র তিন মাসে শুধু আমেরিকাতে তুরস্ক ৩৮৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রফতানি করেছে। তুরস্কের হাতে এখনও অনেক অর্ডার আছে। অচিরেই দেশটি বিশ্বের অস্ত্র রফতানি বাজারে অন্যতম স্থান দখল করবে।

তুরস্কের ডেইলী সাবাহ নিউজ এজেন্সির দেয়া তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানিতে বড় ধরণের সাফল্য পেতে যাচ্ছে এরদোয়ানের দেশ তুরস্ক। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তুরস্ক মোট ২.৭২ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম বিশ্বেরে বিভিন্ন দেশের কাছে রপ্তানি করেছিল। যেখানে ২০১৯ সালে তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.০০ বিলিয়ন ডলার।

২০২০ সালের শুরু থেকেই ভয়াবহ করোনা মহামারির কারণে তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানি অনেকটা হ্রাস পেলেও ২০২০ সালের সারা বছরে তুরস্ক বিশ্বের বেশকিছু দেশের কাছে ১.৪১ বিলিয়ন ডলারের ব্যাপক আকারের অস্ত্র রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। তবে মার্কিন প্রশাসন তুরস্ককে এফ-৩৫ প্রজেক্ট থেকে বাদ দিয়ে দিলে বড় ধরণের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে যায় তুর্কী এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হাব গুলো। বিশেষ করে তুরস্ক এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ফাইটারের ল্যাণ্ডিং গিয়ার, ফিউসলেসসহ শতাধিক স্পেয়ার পার্টস তৈরি করে লকহীড মার্টিনের এভিয়েশন কর্পোরেশনের ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে রপ্তানি বা সরবরাহ করত। এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২.০০ বিলিয়ন ডলার।

তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে তুরস্ক ২০২১ সালের শুরু থেকেই সারা বিশ্বে আবারো বিপুল পরিমাণ উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম বিশ্বের বেশকিছু দেশে রপ্তানি করতে শুরু করে। তাছাড়া তুরস্কের অস্ত্র রপ্তানির দেশের তালিকায় সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাম। তুরস্ক কার্যত ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম প্রান্তিকে ৩৮৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে। আর এই রপ্তানি বিগত ২০২০ সাল অপেক্ষা ৫৬% পর্যন্ত বেশি ছিল।

তাছাড়া ঠিক একই সময়ে আজারবাইজানে ১১৭ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করে দ্বিতীয় অবস্থানে এবং ৯০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অস্ত্র রপ্তানি করেছে মধ্যপ্রচ্যের অন্যতম ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ২০২১ সালের প্রথম প্রান্তিকে তুরস্কের সামরিক সাজ সরঞ্জাম আমদানিকারী দেশগুলোর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

তুরস্কের নিউজ এজেন্সি আনাদোলুর প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রথম ত্রৈমাসিকে বিশ্ব অস্ত্র বাজারে তুরস্কের অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি ২০২০ সাল অপেক্ষা ৪৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া তুরস্কের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং এক্সপোর্ট কাউন্সিলের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তুরস্ক অস্ত্র রপ্তানি করে ১৬৭ মিলিয়ন ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ২৩৩ মিলিয়ন ডলার এবং মার্চে ২৪৭ মিলিয়ন ডলারের সম্পরিমাণ অর্থ আয় করে। তাছাড়া চলতি বছরের এপ্রিল মাসে তুরস্কের সার্বিক অস্ত্র রপ্তানি ছিল প্রায় ৩০২.৫০ মিলিয়ন ডলার।

এদিকে সুইডেন ভিত্তিক স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পীস রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের এক গবেষণামুলক প্রতিবেদনের তত্যমতে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তুরস্কের বিশ্ব বাজারে অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানি আশ্চর্যজনকভাবে ২৪০% বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটি বর্তমানে ইউরোপের অনেক উন্নত এবং প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশকে পিছনে ফেলে বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানি বানিজ্যে নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি প্রতিরক্ষা সামগ্রী এবং ডিফেন্স হার্ডওয়ার সিস্টেম তৈরি এবং রপ্তানিতে বিশ্বের সর্বোচ্চ ১০টি দেশের মধ্যে নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে।

দেশটির নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) বায়রাক্তার টিবি-২, আনকা-এস জাতীয় ড্রোন সিরিয়া, লিবিয়া এবং নার্গানো-কারাবাখ যুদ্ধে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করায় বিশ্বে বর্তমানে এর চাহিদা এবং জনপ্রিয়তা একেবারে আকাশ্চুম্বী বলা চলে। তুরস্ক আসলে বর্তমানে নিজস্ব প্রযুক্তির কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন, এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, যুদ্ধজাহাজ, ট্যাংক, মাল্টিপল রকেট সিস্টেম (এমএলআরএস), গাইডেড এন্টি-ট্যাংক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল এবং বিভিন্ন ধরণের উচ্চ প্রযুক্তির ডিফেন্স সলিউশন সিস্টেম তৈরি এবং রপ্তানি করে থাকে। মনে করা হচ্ছে ২০২৫ সালের মধ্যেই তুরস্কের সার্বিক অস্ত্র রপ্তানি ৬.০০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করতে পারে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.