--- বিজ্ঞাপন ---

ন্যানো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, এক বিংশ শতাব্দীর নতুন চমক

0

এক বিংশ শতাব্দীর এক নতুন চমক হতে যাচ্ছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর ব্যবহৃত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টগুলোর আকার ও কার্য ক্ষমতা একেবারে ছোট হয়ে আসা। আর এই জটিল প্রযুক্তিগত অসাধ্য সাধন করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সামরিক গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন একেবারে ক্ষুদ্র আকারের মোবাইল নিউক্লিয়ার রিএক্টর ডিজাইন এবং তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা এখন মাইক্রো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ডিজাইন এবং তৈরিতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছে না।

মুলত এই নতুন প্রযুক্তির ভ্রাম্যমান ন্যানো পরমাণু চুল্লি যে কোন স্থানে খুব সহজেই জাহাজ, বিমান কিংবা ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং পাশাপাশি এর ব্যবহার হবে শতভাগ নিরাপদ। বিশেষ করে এর মাধ্যমে যাতে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধকালীন যে কোন পরিস্থিতিতে দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা এবং সরকারি দপ্তরে খুব সহজেই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ধরণের ক্ষুদ্র আকারের মোবাইল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট তৈরি করতে চায় মার্কিন সেনাবাহিনী।

আর এই নতুন প্রযুক্তির ন্যানো নিউক্লিয়ার রিএক্টর ডিজাইন করার জন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ইতোমধ্যেই তিনটি প্রযুক্তি কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পন্ন করেছে। চুক্তি মোতাবেক এই তিনটি কোম্পানি দুই বছর সময় পাবে মোবাইল নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ডিজাইন করার। আর এই তিন কোম্পানির ডিজাইন থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন বেছে নিবে সর্বোচ্চ মানের ক্ষুদ্র আকারের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট তৈরির চূড়ান্ত নকশা। এই প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘পিলি’ এবং এটি নিয়ে পেন্টাগন ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু করে এবং এটি বাস্তবায়নে মার্কিন প্রশাসন ইতোমধ্যেই ৩৯.৭০ মিলিয়ন ডলার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।

তাছাড়া পেন্টাগনের স্ট্যাটিজিক ক্যাপাবিলিটিজ অফিস (এসসিও) ‘পিলি’ প্রকল্পটি নজরদারি করছে। এই জাতীয় ন্যানো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট আকারে ছোট এবং হালকা হওয়ায় এটিকে যে কোন স্থানে দ্রুত বহন করে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনে আবার খুব অল্প সময়ের মধ্যে বন্ধ করে দেয়া যাবে। তাছাড়া একেবারে স্বল্প খরচে ২ মেগাওয়াট থেকে সর্বোচ্চ ২০ মেগাওয়াট নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা এবং এটি ব্যবহারে সর্বোচ্চভাবে নিরাপদ হবে এমনটি নিশ্চিত করে ডিজাইন করার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে সামরিক উদ্দেশ্যে এটিকে তৈরির পরিকল্পনা করা হলেও এই জাতীয় ন্যানো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট ভবিষ্যতে বানিজ্যিক ব্যবহারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তবে সত্তরের দশকে সভিয়েত ইউনিয়ন অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের মোবাইল নিউক্লিয়ার রিএক্টর বানালেও সেগুলো ছিল যথেষ্ঠ ভারি এবং পুরোনো প্রযুক্তির। তাছাড়া এগুলো পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ছিল খুবই জটিল আকারের। তারা খুব সম্ভবত এই জাতীয় মোবাইল নিউক্লিয়ার রিএক্টর আর্কটিক অঞ্চলে ব্যবহার করত। সভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি রিএক্টরগুলো মোবাইল হলেও তখনকার প্রযুক্তি ততটা উন্নত না হওয়ায় সেগুলো ছিল অত্যাধিক ভারি এবং মেন্টেইনেন্সের ঝামেলাও ছিল প্রচুর। তাছাড়া সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে রাশিয়া আর পরবর্তীতে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়।

আসলে আমরা বর্তমানে সারা বিশ্বের ৩ বিলিয়ন মানুষ যে ইন্টারনেট ব্যবহার করছি, তার পিছনে মূল অবদান এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠান (ডিএআরপিএ) বা ডারপা। ১৯৬২ সাল থেকে ১৬৬৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময়ের ব্যাপক গবেষণা এবং প্রচুর অর্থ ব্যয় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ইন্টারনেট পরিসেবা বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। প্রথম দিকে সামরিক ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ইন্টারনেট উদ্ভাবন করা হলে ঠিক কয়েক দশক পরেই সারা বিশ্বের বানিজ্যিক এবং ব্যক্তিগত অনলাইনের যোগাযোগ এবং তথ্য সংগ্রহের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি।

ঠিক এই ভাবেই হয়ত আগামী ২০৪৫ সালের মধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্ভাবিত মাইক্রো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট আরও নিরাপদ, কম খরচ এবং ছোট আকার হয়ে এসে তা সারা বিশ্বের শহর এবং প্রত্যন্ত গ্রামে বানিজ্যিক কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ে বাসা বাড়িতে ব্যবহার শুরু হয়ে গেলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। এমনো হতে পারে ভবিষ্যতে অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং বড় আকারের কয়লা, গ্যাস এবং নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের ব্যবহার হ্রাস করে দিয়ে কিংবা তার পাশাপাশি একেবারেই ক্ষুদ্র আকারের মাইক্রো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদিত নিরবিচ্ছিন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেশের এলাকা ভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণ করবে।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.