--- বিজ্ঞাপন ---

চাইলে বাংলাদেশও কিনতে পারে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট

0

কাজী আবুল মনসুর / সিরাজুর রহমান

এক বিংশ শতাব্দীতে এসেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমান বাহিনীতে সক্রিয় থাকা যুদ্ধবিমান বা জেট ফাইটারের তালিকায় একেবারে শীর্ষে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সত্তরের দশকে সার্ভিসে আসা এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট ফাইটার। চাইলে বাংলাদেশও এই ফাইটার বিমান কিনতে পারেন। বাংলাদেশের আকাশ নিরাপত্তা জোরদার করা এখন সময়ের ব্যাপার। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন অন্য মাত্রায় রয়েছে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের পার্শ্বতী দেশগুলো যখন সামরিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশের বসে থাকার কোন মানে নেই।

আশার কথা যে, বাংলাদেশের বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত সস্ত্রীক ও দুজন সফরসঙ্গীসহ ছয়দিনের এক সরকারি সফরে শুক্রবার (১৪ মে) যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন। রোববার (১৬ মে) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এরই মধ্যে তিনি প্রধান এভিয়েশন কোম্পানি লকহিড মার্টিন এবং বোয়িংসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সামরিক ও অসামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করেন। বোয়িং কোম্পানি পরিদর্শনকালে এভিয়েশন এবং সামরিক সরঞ্জামাদির ওপর উপস্থাপিত আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান সেখানে বাংলাদেশ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

চাইলে বাংলাদেশও কিনতে পারে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্র জানায়, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ২৫টি দেশের বিমান বাহিনীতে এখনো পর্যন্ত নতুন এবং পুরাতন মিলিয়ে মোট ২,৬০০টি এর কাছাকাছি সিঙ্গেল ইঞ্জিনের এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট ফাইটার সক্রিয় রয়েছে এবং ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট ৪,৫৮৮টি বিভিন্ন ব্লক এবং সিরিজের এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট ফাইটার তৈরি করে মার্কিন জায়ান্ট এভিয়েশন কর্পোরেশনগুলো।

এফ-১৬ জেট ফাইটারের মেইন ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে এবং এর বর্তমান নির্মাতা মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন। তবে মার্কিন লাইসেন্স এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে তুরস্ক, বেলজিয়াম, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং নেদারল্যাণ্ড এই ৫টি দেশ তাদের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং বা এসেমব্লী প্লান্টে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন তাদের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে তৈরি করে থাকে।

অন্যদিকে তুরস্ক তার নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যাবহার করে এফ-১৬ এর অধিকাংশ যন্ত্রাংশ নিজেই তৈরি করে এবং বর্তমানে পুরনো এফ-১৬ এর আধুনিকায়ন এবং আপগ্রেডেশনের কাজ নিজেই করতে সক্ষম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে তুরস্ক মিশরের কাছে এর আগে মোট ৪০টি এফ-১৬ জেট ফাইটার বিক্রয় করে এবং পাকিস্তানের পুরনো এফ-১৬ জেট ফাইটার বহরের একটি বড় অংশ তুরস্কের সরকারি মালিকানাধীন তুর্কী এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) নতুন প্রযুক্তি ইনস্টল এণ্ড আপগ্রেড করে দিয়েছে। তবে এফ-১৬ এর ইঞ্জিন এবং রাডারসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা হয়।

বর্তমানে মার্কিন লকহীড মার্কিন কর্পোরেশনের তৈরি চতুর্থ প্রজন্মের একেবারে সর্বশেষ সিরিজের এফ-১৬ ভাইপার ব্লক-৭০/৭২ এর সার্ভিস লাইফ টাইম ধরা হয়েছে ২০৭২ সাল পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ এপিজি-৮৩ এইএসএ রাডার সমৃদ্ধ এফ-১৬ ব্লক ৭২ জেট ফাইটার আগামী চার দশক পর্যন্ত আকাশে রাজত্ব করে যেতে পারে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ থাকে না। আবার মার্কিন লকহীড মার্টিন ভারতের ভবিষ্যতের (এমআরসিএ) ১১৪টি জেট ফাইটারের আন্তর্জাতিক টেন্ডার প্রতিযোগিতায় জেতার জন্য এফ-১৬আইএন সুপার ভাইপার জেট ফাইটার প্রকাশ্যে আনে। যদিও ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এখনো পর্যন্ত এফ-১৬ ক্রয়ে কোন রকম আগ্রহ প্রকাশ করেনি।

এদিকে এফ-১৬ ব্লক-৬০ বিশেষভাবে তৈরি করা হয় শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের এক ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্য। এই ব্লক-৬০ তে আমিরাতের মোট বিনিয়োগ ৩.০০ বিলিয়ন ডলার এবং মার্কিন বিমান বাহিনী যে এফ-১৬ জেট ফাইটার রয়েছে তার চেয়ে আরো অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয় এফ-১৬ ব্লক-৬০ এর জেট ফাইটারগুলো। আর এই প্রডাকশন লাইনে তৈরিকৃত এফ-১৬ এর পুরোটাই ব্যাবহার করে সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাছাড়া প্রাট এণ্ড হুইটনী এফ-১০০-পিডাব্লিউ-২২৯ কিংবা জেনারেল ইলেক্ট্রিক এফ-১১০-জিই-১২৯ আফটার টার্বোফ্যান ইঞ্জিন সমৃদ্ধ সর্বশেষ সিরিজের এফ-১৬ ব্লক ৭২ এর পার ইউনিট কস্ট আনুমানিক ১০০ মিলিয়ন ডলার (মিসাইল, ওয়েপন্স, ট্রেনিং, মেইনটেনেন্স প্যাকেজসহ) পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই মূল্য অবশ্য প্রথমে এফ-১৬ ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং পরবর্তীতে ক্রয়ের ক্ষেত্রে আর দাম ৬০ মিলিয়ন ডালারের নিচে নেমে আসতে পারে।

এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট ফাইটারের এর অন্যতম অস্ত্র হলো মার্কিন রেইথন কোম্পানির ১৬২ কিলোমিটার রেঞ্জের এআইএম-১২০সি/ডি (বিভিআর) এডভান্স মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার টু এয়ার মিসাইল (এএমআরএএএম) এবং তার পাশাপাশি রয়েছে এ আই এম-৯ সাইডউইণ্ডার ও এআইএম-৭ স্প্যারো। আবার গ্রাউণ্ড এ্যাটাক ফ্যাসালিটির জন্য এজিএম-৮৮/১৫০ এয়ার টু সারফেস মিসাইল এবং এন্টিশীপ মিসাইল হিসেবে এজিএম-৮৪ হারপুন মিসাইল ব্যাবহার করে।

তবে সার্ভিসে আসার পর ১৯৭৭ সাল থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত মোট ৬৭৮টির কাছাকাছি এফ-১৬ জেট ফাইটার বিভিন্ন কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট মিশনে ধ্বংস হয়েছে। প্রডাকশন লাইন শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট ১৫টি ব্লকে এবং এ, বি, সি, ডি, ই এফ, আইএন সিরিজে ধাপে ধাপে আপগ্রেডেশন এবং নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আরো অত্যাধুনিক এফ-১৬ভি বা ব্লক-৭০/৭২ পর্যায়ে এসে পৌছেছে। ১৯৭৩ সালে এফ-১৬ এর ম্যাসিভ প্রডাকশন লাইন শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ১, ৫, ১০, ১৫, ২০, ২৫, ৩০, ৩২, ৪০, ৪২, ৫০, ৫২, ৬০, ৭০ এবং ৭২ ব্লকে তৈরি হয়েছে। যা আজ পর্যন্ত বিশ্বের কোন যুদ্ধবিমান এতগুলো ব্লকে এবং ভ্যারিয়েন্টে তৈরি করা সম্ভব হয়নি।

বিগত চার দশকে এফ-১৬ আনুমানিক মোট ৯০টি শত্রু পক্ষের জেট ফাইটার, বোম্বার, হেলিকপ্টার এবং বিভিন্ন ধরণের এরিয়াল সিস্টেম সরাসরি এয়ার টু এয়ার মিসাইল হীটে ধ্বংস করার রেকর্ড রয়েছে। তাছাড়া ২০১৯ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি ভারত পাকিস্তান আকাশ যুদ্ধে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একটি এফ-১৬ ভারতের মিগ-২১ শুট ডাউন করে।

মার্কিন এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন এ পর্যন্ত ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ, ১৯৯৪-৯৫ সালে বসনিয়ায় সার্বিয়া সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধে, কসভো স্বাধীনতা যুদ্ধে, গ্রীক-তুর্কী সামরিক সংঘর্ষ ছাড়াও আফগানিস্থান, লিবিয়া, সিরিয়া, লেবানন এবং ইরাকের আকাশে ব্যাপকভাবে ব্যাবহার করা হয়েছে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট ফাইটার। তাছাড়া ২০২০ সালের শেষের দিকে নার্গানো-কারাবাখ যুদ্ধে আজারবাইজানের পক্ষে তুর্কী এফ-১৬ জেট ফাইটার আর্মেনিয়া বিমান বাহিনীর মোট ২টি মিগ-২৫ যুদ্ধবিমান শুট ডাউন করে এবং ২০১৬ সালে সিরিয়ার আকাশে রাশিয়ার একটি এসইউ-২৪ যুদ্ধবিমান এয়ার টু এয়ার মিসাইলের আঘাতে ধ্বংস করে দেয়।

মার্কিন এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন জেট ফাইটারের কমব্যাট এয়ার মিশনে কিলিং রেকর্ডের তালিকায় মিগ-২১, মিগ-২৩, মিগ-২৯, এফ-৪, এফ-১৬ এমআই-৮ ও এম আই-১৭ হেলিকপ্টার, মিরেজ-৩, এফ-১ এসইউ-২২, এসইউ-২৫, এসইউ-২৪, এটি-২৭ টুকনো, অরিয়ন-১০ ড্রোন ছাড়াও বেশকিছু (ইউভিএ) এণ্ড এরিয়্যাল সিস্টেম রয়েছে।

এফ-১৬ জেট ফাইটারের ক্রয় মূল্য যাই হোক না কেন এর পার আওয়ার অপারেটিং কস্ট মাত্র ৭,০০০ ডলার এবং রিপিয়ার এণ্ড মেইন্টেনেন্স ব্যবস্থাপনা যথেষ্ঠ কম ব্যয়, সময় এবং অনেকটাই সহজ একটি প্রক্রিয়া বলা চলে। একটি কমব্যাট মিশন পরিচালনা শেষে খুব কম সময়ের মধ্যেই পরবর্তী মিশনের জন্য প্রস্তুত করা যায়।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.