--- বিজ্ঞাপন ---

রাশিয়ার কাছ থেকে জেট ফাইটার কিনছে মিশর

0

সামরিক শক্তি আরও বেড়েছে মিশরের। জেট ফাইটারসহ নানা সামরিক সরঞ্জাম কিনছে এ দেশটি। তবে আমেরিকার চেয়ে রাশিয়ার কাছ থেকেই সামরিক সরঞ্জাম বেশি কিনতে আগ্রহী মিশর। আর বিষয়টি নিয়ে নাখোশ আমেরিকা। রাশিয়ার কাছ থেকে জেট ফাইটার কেনা নিয়ে আমেরিকার চাপ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সুত্র জানায়,মিশরীয় বিমান বাহিনী চলতি ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত প্রথম ব্যাচে ৫টি রাশিয়ার তৈরি এসইউ-৩৫এসই এডভান্স মাল্টিরোল জেট ফাইটার হাতে পেয়েছে। মিশর মুলত ২০১৯ সালের মার্চ মাসে রাশিয়ার সুখোই কর্পোরেশনের কাছ থেকে ২.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে মোট ২৪টি রাশিয়ান সুপার এডভান্স এণ্ড মাল্টিরোল এসইউ-৩৫এসই জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে। যার মধ্যে সুখোই প্রথম ব্যাচে মোট ৫টি এসইউ-৩৫এসই জেট ফাইটার মিশরের কাছে হস্তান্তর সম্পন্ন করেছে এবং অবশিষ্ট ১৯টি যুদ্ধবিমান চলতি ২০২২-২৩ সালের মধ্যে সরবরাহ সম্পন্ন করা হতে পারে।

মিশরের আল ফাত্তাহ আল সিসি প্রশাসন তাদের বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ফ্রান্স থেকে মোট ৫৪টি রাফাল এবং রাশিয়া থেকে মোট ২৪টি এসইউ-৩৫এসই এডভান্স এণ্ড মাল্টিরোল জেট ফাইটার ক্রয় করতে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশটির বিমান বাহিনীতে এখনো পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি ২১৮টি এফ-১৬ জেট ফাইটার সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে।

মিশর আসলে ২০১৯ সালে রাশিয়ার সুখোই কর্পোরেশনের সাথে ২.০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ২৪টি এসইউ-৩৫এসই সুপার ম্যানুভারেবল এডভান্স জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছিল। সে হিসেবে প্রতিটি এসইউ-৩৫এসই জেট ফাইটারের মূল্য ৮৩.৩৪ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়। যদিও প্রয়োজনীয় ট্রেনিং, মেইন্টেনেন্স, মিসাইল ও ওয়েপন্স প্যাকেজসহ ক্রয় করা হয়েছে কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের পর এসইউ-৩৫এসই জেট ফাইটারের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা হচ্ছে মিশর।

এদিকে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগেই মিশরকে রাশিয়ার কাছ থেকে যুদ্ধবিমান ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম ক্রয়ের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছে। তাছাড়া রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে তুরস্কের মতো মিশরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারিং আমেরিকা’স এডভারসারিজ থ্রু সেনেকশন এক্ট (সিএএটিএসএ) Countering America’s Adversaries Through Sanctions Act (CAATSA) আইনের আওতায় বড় ধরণের নিষেধাজ্ঞা জারির হুমকী দেয় মার্কিন বাইডেন প্রশাসন। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর মিশরকে যে ১.০০ বিলিয়ন ডলার সামরিক সহায়তা প্রদান করে তাও বন্ধ করে দেওয়ার হুমকী দিয়ে রেখেছে। যদিও অবশ্য মিশরের সিসি প্রশাসন মার্কিন বাইডেন সরকারের প্রবল আপত্তি এবং হুমকীকে পাত্তা না দিয়ে অনেক আগেই রাশিয়া থেকে এসইউ-৩৫এসই জেট ফাইটার ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে এবং চুক্তি মোতাবেক প্রথম ব্যাচে ৫টি জেট ফাইটার হাতে পেয়েছে। এদিকে মিশর তার মিস্ত্রাল ক্লাস এম্ফিবিয়াস এসাল্ট ক্যারিয়ার শীপের জন্য রাশিয়ার থেকে ৪৬টি কেমভ কেএ-৫২ কমব্যাট হেলিকপ্টার ক্রয় করেছে।

আসলে রাশিয়ার তৈরি নতুন প্রজন্মের এসইউ-৩৫এসই ফ্ল্যাংকার-ই সুপার ম্যানুভারেবল মাল্টিরোল জেট ফাইটারটিকে আকাশ পথে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর আক্রমন ক্ষমতা সম্পন্ন এবং এয়ার টু এয়ার ডগ ফাইটে বিশেষ উপযোগী করে ডিজাইন করেছে রাশিয়ান সুখোই কর্পোরেশন। এই জেট ফাইটারের সর্বোচ্চ টেক অফ ওয়েট ৩৪,৫০০ কেজি এবং যে কোন প্রতিকূল আবহাওয়া ও পরিবেশে সর্বোচ্চ ১৮,০০০ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করতে সক্ষম। তাছাড়া এটির সর্বোচ্চ গতিসীমা সুপারসনিক অর্থ্যাৎ প্রতি ঘন্টায় গতিবেগ ২,৭৭৮ কিলোমিটার এবং একটিভ অপারেশনাল রেঞ্জ ৩,৬০০ কিলোমিটার।

১৯ টন ওজনের অত্যাধুনিক এই যুদ্ধবিমানে ২টি অত্যন্ত শক্তিশালী ১১৭এস/এএল-৪১এফ১এস থ্রাস্ট ভেক্টোরিং আফটার টার্বো ফ্যান ইঞ্জিন এবং পাশাপাশি উড্ডয়নরত অবস্থায় রি-ফুয়েলিং প্রোব সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে। এডভান্স এভিয়োনিক এবং ইলেকট্রনিক্স সিস্টেম সমৃদ্ধ এই জেট ফাইটারে উচ্চ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ নতুন প্রজন্মের প্যাসিভ ইলেকট্রনিক্যালি স্ক্যানড এ্যারি (পিইএসএ) রাডার সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়েছে। যা এটিকে একাধারে যুগৎপত ভাবে ৩ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ মাইলের মধ্যে ৩০টি টার্গেট ট্রাকিং করা ও বিশেষ করে স্টিলথ টেকনোলজি বেসড এফ-২২ বা এফ-৩৫ স্টিলথ জেট ফাইটারের বিরুদ্ধে কার্যকর ডগ ফাইট সক্ষমতা প্রদান করেছে। এতে ইলেকট্রনিক ওয়ারফার সুইট এবং মাল্টি ফাংশন এলইডি মনিটর ডিসপ্লে সুবিধা সহ অত্যাধুনিক এভিয়েশন সিস্টেম সংযুক্ত করা হয়েছে। তাছাড়া এসইউ-৩৫এস ফ্ল্যাংকার-ই সিরিজের প্রতিটি জেট ফাইটারের মূল্য আনুমানিক ৮০-১০০ মিলিয়ন ডলার বা তার কাছাকাছি হতে পারে।

এই জেট ফাইটারের ১২টি হার্ড পয়েন্টে সর্বোচ্চ ৮,০০০ কেজি পর্যন্ত এয়ার টু এয়ার এন্ড এয়ার টু গ্রাউণ্ড মিসাইল, গাইডেড এন্ড আন গাইডেড বম্বস ও জ্যামার পডস ইনস্টল করা হয়েছে। বিশেষ করে এটি ১২০ মাইল রেঞ্জের কে-৭৭এম রাডার গাইডেড বিভিআর মিসাইল (ন্যাটো রিপোটেড কোড নেম এএ-১২ এড্যার) ব্যাবহার করে। তাছাড়া ক্লোজড এয়ার এট্যাকের জন্য ২৫ মাইল স্বল্প পাল্লার আর-৭৪ (এএ-১১ আর্চার) মিসাইল এবং মিডিয়াম রেঞ্জে আর-৩৭ (এএ-১৩ এ্যারো) মিসাইল ব্যাবহার করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া আকাশ পথে কার্যকর ডগ ফাইটিং এর উপযোগী করে ইন্টান্যাল ইউপন্স হিসেবে ১৫০ রাউন্ডের ৩০ মিলিমিটার স্মার্ট স্মুথবোর ক্যানন সংযুক্ত করা হয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.