--- বিজ্ঞাপন ---

ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রস্তত হচ্ছে হামাসের কাসাম ব্রিগেড

0

কাজী আবুল মনসুর / সিরাজুর রহমান

চলতি ২০২১ সালের ১০ই মে থেকে ২০শে মে পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী ও মিনি সামরিক পরাশক্তি ইসরায়েল ফিলিস্তিনের হামাসের সাথে এক অসম ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। উভয় পক্ষের ব্যাপক প্রাণহানি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বাস্তবে গাজায় ফিলিস্তিন সাধারণ মানুষেরা ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে যায়। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপে অবশেষে অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার চলা ১১ দিনের ভয়ংকর যুদ্ধের অবসান ঘটে।

অসম এই ১১ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল ও হামাস একে অপরের বিরুদ্ধে তাদের সর্বোচ্চ সামরিক সক্ষমতা প্রয়োগ করে। একদিকে ইসরাইল খুবই দক্ষতার সাথে তার বিমান বাহিনী এবং আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার গাজার বড় বড় ভবন, টানেল ধ্বংস করে দেয়। অন্যদিকে ইসরাইলের বিমান হামলার জবাবে হামাস গাজা থেকে প্রায় ৪,৩৬০টি স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার রকেট নিক্ষেপ করে। ধারনা করা হয় ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ৫০০০০ হাজারের বেশি রকেট আর্টিলারি ও মাল্টিপল রকেট এবং মিসাইল মজুদ আছে । কয়দিন আগে ইসরাইলের মিডিয়া এই ব্যাপারে Isreal Defence Force বা IDF কে সর্তক করেছে ।

তবে এই যুদ্ধে হামাস নজিরবিহীনভাবে চার হাজারের অধিক স্বল্প সক্ষমতার ও পাল্লার রকেট ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে নিক্ষেপ করে। যদিও ইসরাইলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ৮৫% পর্যন্ত রকেট আকাশেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়। ফিলিস্তিনের সামরিক গ্রুপ হামাসের অস্ত্র ভাণ্ডারে বর্তমানে বিভিন্ন সিরিজের স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার রকেট মজুত রয়েছে। যা দিয়ে তারা কার্যত ইসরাইলের সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধ করে থাকে।

১৯৮৭ সালে হামাস কে তৈরি করেন ইয়াহিয়া আয়াশ । যিনি একাধারে অত্যান্ত মেধাবী , পদার্থবিদ ও IED বা উচ্চমাত্রার বিস্ফোরক তৈরির বিশেষজ্ঞ ছিলেন । তিনিই সর্বপ্রথম হামাসের সুইসাইড বোমা ও লোকবল তৈরি করেন যাতে ইসরাইল কে উপযুক্ত শিক্ষা দিতে পারে । তবে শুরুতে হামাস কোন সশস্ত্র সংগঠন ছিল না । ১৯৯৩ সালে হামাস নিজেদের সংগঠন থেকে তৈরি করে Izz ad-Din al-Qassam । যারা সমরাস্ত্র বিষয়ে বেশি জানেন তাদের কাছে এরা কাসাম ব্রিগেড নামে বেশি পরিচিত।

ইজ আদ দিন আল কাসাম হচ্ছে এই হামাসের সশস্ত্র শাখা । যাদের কে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলা হয় । Izz ad-Din al-Qassam বা কাসাম ব্রিগেডে ৫০০০০ হাজারের বেশি যোদ্ধা রয়েছে । তবে নিয়মিত যোদ্ধা রয়েছে ৩০০০০ হাজার । তবে ধারনা করা হয় এই সংখ্যা বর্তমানে আরো অনেক বেশি এবং এদের পরিচয় কি , কোন পরিবার , কে এদের বাবা মা অথবা ভাই বোন তা অত্যান্ত কাছের মানুষরাও জানে না । এদের পরিচয় মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই কাসাম ব্রিগেডে ৩টি স্পেশাল অপারেশন বিভাগ দেখা যায় । এগুলো হচ্ছে ,স্পেশাল অপারেশন কমান্ডো ব্যাটালিয়ন, সুইসাইড বোম্বার বা আত্মঘাতী হামলায় দক্ষ একটি গ্রুপ , স্নাইপার স্কোয়াড ব্রিগেড । যারা স্নাইপিং এ বিশেষভাবে দক্ষ ।
হামাস যেসব ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করে থাকে, AK-47 অ্যাসল্ট রাইফেল,AK-74 অ্যাসল্ট রাইফেল,M4A1 কারবাইন রাইফেল,PKM জেনারেল পারপোজ মেশিনগান,MG-3 জেনারেল পারপোজ মেশিনগান,Dshk হেভি মেশিনগান ছাড়াও আরো বেশকিছু মেশিনগান ও অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করে থাকে । Sniper Rifle এর মধ্যে ,Dragonov SVD স্নাইপার রাইফেল,PGS-1 স্নাইপার রাইফেল,HS-.50 অ্যান্টি মেটারিয়াল লং রেঞ্জ স্নাইপার রাইফেল বেশি ব্যবহার করে থাকে ।
এগুলা ছাড়াও আরো বেশ কিছু Sniper Rifle ব্যবহার করে থাকে যেগুলার নাম জানা যায় না । অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল Bulsae-2, Konkurs-M,9K11 Malyutka,Milan, RPG-7 ও নিজেদের তৈরি Yasin অ্যান্টি ট্যাংক ওয়েপন ব্যবহার করে থাকে এছাড়া অত্যাধুনিক Kornet-E ব্যবহার করে থাকে । ধারনা করা হয় হামাসের কাছে ৮০০০ হাজারের মত অ্যান্টি ট্যাংক মিসাইল মজুদ আছে । Air Defence বা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, SA-7B ম্যানপ্যাড, SA-18 ম্যানপ্যাড, SA-24 ম্যানপ্যাড ছাড়াও বেশ কিছু মোবাইল বেশ অ্যান্টি এয়াক্রাফট মিসাইল ব্যবহার করে । হামাস M-302 নামে দূরপাল্লার রকেট ব্যবহার করে যেটা R-160 নামে পরিচিত । মূলত M-302 ইসরাইলের জন্য ব্যাপক ভয়ের কারন । M-302 মোবাইল বেস রকেটগুলো ১৬০ কিঃমিঃ দূরে নিখুতভাবে আঘাত হানতে পারে ।

তবে ধারনা করা হচ্ছে, হামাসের অস্ত্র ভাণ্ডারে কাসাম সিরিজের অজানা সংখ্যক শর্ট রেঞ্জের রকেট রয়েছে। কাসাম রকেটের রেঞ্জ মাত্র ১০কিলোমিটার। ১৬ কিলোমিটার পাল্লার কুদস-১০১ শর্ট রেঞ্জের রকেট ব্যবহার করে। হামাসের স্বল্প মধ্যম পাল্লার গ্রাড রকেটের রেঞ্জ ৫৫ কিলোমিটার। ডাব্লুএস-ওয়ানই এবং সেজিল নামের মিডিয়াম রেঞ্জের রিকেট দুটি ৫৫ কিলোমিটার দূরুত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। তাছাড়া হামাস এম-৭৫, ফজর এবং জে-৮০ নামের তিনটি মিডিয়াম রেঞ্জের রকেট ব্যবহার করে থাকে। যেগুলোর রেঞ্জ ১০০ কিলোমিটার। দীর্ঘ পাল্লার প্রজেক্টাইল হিসেবে হামাস দুটি সিরিজের অত্যাধুনিক রকেট ব্যবহার করে থাকে। যার মধ্যে আর-১৬০ রকেটের রেঞ্জ ১২০ কিলোমিটার এবং এম-৩০২ লং রেঞ্জের রকেটের রেঞ্জ প্রায় ২০০কিলোমিটার।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.