--- বিজ্ঞাপন ---

করোনা থেকে মুক্ত হয়েছে অনেক দেশ

0

বিশেষ প্রতিনিধি

করোনা মোকাবেলায় উন্নত দেশের চেয়ে অনুন্নত, দরিদ্র দেশগুলো ভালো অবস্থানে আছে। অনেক দেশ এখন করোনা শূন্য। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছে দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো। কিছু উন্নত দেশ নিজেদের করোনা মুক্ত ঘোষণা করলেও রয়ে গেছে আতঙ্ক। তারপরও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দেশগুলো।করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২২০টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ১৮ হাজার ৪৭০। এর মধ্যে ৩৭ লাখ ২৭ হাজার ২৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়ে চলেছে বিশ্বের প্রতিটি দেশ। কিছু কিছু দেশ সেই লড়াইয়ে সাফল্য পেয়েছে। তবে অনেক দেশই জয় থেকে এখনও অনেক দূরে।

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে করোনা সামাল দিতে বেগ পেতে হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় চলতি বছর ইতোমধ্যে পদ হারিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আট স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ইকুয়েডরের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন রোডল্ফো ফারফান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ— টিকাকরণের ক্ষেত্রে তিনি স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছেন। পদত্যাগের মাসতিনেক আগেই ওই পদে বসেছিলেন রোডল্ফো। করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারায় পদত্যাগ করেছিলেন অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোডল্ফো অ্যান্সচোবার। ইরাকের একটি কোভিড হাসপাতালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রাণ গেছে ৮০ জনের। এ ঘটনার জেরে পদত্যাগ করেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান আল-তামিমি। টিকাকরণ কর্মসূচিতে অসঙ্গতি প্রকাশ্যে আসতেই পদত্যাগ করেন আর্জেন্টিনার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জিনেস গোলজালেস গার্সিয়া। সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে ছয় কোভিড রোগীর মৃত্যু হওয়ায় চাপে পড়ে পদত্যাগ করতে হয় জর্ডানের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। টিকা নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ জোরালো হতেই ইস্তফা দিতে হয় পেরুর স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে। রুশ টিকা স্পুটনিক ভি নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করায় শরিক দলের চাপে পড়ে পদত্যাগ করেন স্লোভাকিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী। চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে মা ও তার সদ্যোজাতের মৃত্যু হওয়ায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে গোটা মন্ত্রিসভাই পদত্যাগ করেছিল মঙ্গোলিয়ায়। গত বছর কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হওয়ায় নিউজিল্যান্ড, ব্রাজিল ও চেক প্রজাতন্ত্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছিলেন।

কোন কোন দেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই জয়ের কাছে পৌঁছে গিয়েছে। ইসরায়েল অনেক আগেই করোনামুক্ত বলে ঘোষিত হয়েছে। মূলত দেশের প্রতিটি নাগরিককে প্রতিষেধক দিয়েই এই অসাধ্য সাধন করে ফেলেছে দেশটি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ২৪ জন। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় একজনও আক্রান্ত হননি সে দেশে। কোভিডে মৃত্যুও সেখানে উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। তবে করোনামুক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানে মোট আক্রান্ত হয়েছিল ৮ লাখেরও বেশি মানুষ। মৃত্যু হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার জনের। ইজরায়েলের পথে হেঁটে আরও বেশ কিছু দেশ নিজেদের করোনামুক্ত করতে সমর্থ হয়েছে বা তার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে। অন্তত গত ২৪ ঘণ্টায় সে সমস্ত দেশে একটিও সংক্রমণ হয়নি। হলেও সেই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দেখে এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

বেলজিয়ামে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৬৬ হাজার ৯৫৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৪ হাজার ৯৯৫ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সে দেশে সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১ জনের। তার আগের ২৪ ঘণ্টায় এক জনও আক্রান্ত হননি ইউরোপের এই দেশে।

মধ্য এশিয়ার দেশ কাজাখস্তান। এখনও পর্যন্ত মোট ৪ লাখ ৪১ হাজার ৮০১ জন আক্রান্ত হয়েছেন এই দেশে। প্রাণ গিয়েছে ৭ হাজার ৩২১ জনের। কাজাখস্তানেও গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মেলেনি। কোভিডের জেরে কারও মৃত্যুও হয়নি সেখানে।

একই ছবি দেখা গিয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরে। সেখানেও গত ২৪ ঘণ্টায় কেউ সংক্রমিত হননি। করোনার জেরে মৃত্যুও হয়নি কারও। এই দেশে এখনও অবধি আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৮৬৫ জন এবং প্রাণ গিয়েছে ২০ হাজার ৬৮১ জনের।

আয়ারল্যান্ডে মোট ২ লাখ ৬২ হাজার ৭৪৪ জন কোভিড আক্রান্ত ছিলেন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৯৪১ জনের। কিন্তু গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে কেউ আক্রান্ত হননি এবং মৃতের সংখ্যায় নেমেছে শূন্যতে।

ইউরোপের একটি ছোট দেশ মন্টেনেগ্রো। এই দেশেও গত দু’দিন ধরে নতুন কেউ আক্রান্ত হননি। এমনকি কারও মৃত্যুও হয়নি। গোটা অতিমারি পর্বে ৯৯ হাজার ৭০৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সেখানে। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৭ জনের।পশ্চিম আফ্রিকার দেশ ঘানায় মোট আক্রান্ত ৯৪ হাজার ছাড়িয়েছে। গোটা অতিমারি পর্বে মাত্র ৭৮৫ জন মারা গিয়েছেন সেখানে। গত দু’দিন ধরে এই দেশে কেউ নতুন করে আক্রান্ত হননি। করোনার জেরে মারাও যাননি কেউ।

ঘানার মতো অবস্থা ইউরোপের ফিনল্যান্ডে। সেখানেও গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। অতিমারি পর্বে সেখানে মোট আক্রান্ত হয়েছন ৯২ হাজার ৭৭০ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৯৫৯ জনের।

মধ্য আফ্রিকার দেশ ক্যামেরুনও করোনাকে পরাস্ত করতে অনেকটাই সাফল্য পেয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানেও কোনও নতুন আক্রান্তের খবর নেই। কেউ মারাও যাননি সেখানে।মধ্য আমেরিকার এল সালভাদর। উপকূলবর্তী এই ছোট্ট দেশেও গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হননি কেউ। তবে আগে আক্রান্ত হওয়া ৫ রোগীর মৃত্যু হয়ছে সেখানে। সব মিলিয়ে সেখানে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ২৬০ জনের। এখনও অবধি সে দেশে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৩ হাজার ৭০২ জন।

এ ছাড়া বৎসোয়ানা, গ্যাবন, সুদান, কম্বোডিয়া, তাজিকিস্তান, কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, মালি, চাদ, গাম্বিয়া, নিকারাগুয়া, সান মেরিনো, সেন্ট লুসিয়া, বারবাডোজ, বারমুডা, সেন্ট মার্টিন, ডমিনিকা, পাপুয়া নিউ গিনি ইত্যাদি দেশগুলিতে গত ২৪ ঘণ্টায় একটিও সংক্রমণ হয়নি এবং মৃত্যুর সংখ্যাও শূন্য।দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত দ্বীপরাষ্ট্র তুভালু, মধ্য এশিয়ার দেশ তুর্কমেনিস্তান, ওশিয়ানিয়ার দ্বীপরাষ্ট্র তোঙ্গা, দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত সেন্ট হেলেনা-সহ বেশ কিছু দেশে অতিমারি এখনও পর্যন্ত তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। এই সমস্ত দেশগুলিতে একজনও আক্রান্ত হননি। এগুলির বেশির ভাগই দ্বীপ। জনসংখ্যাও তুলনায় খুবই কম।

এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত এবং মৃত্যুর নিরিখে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে আমেরিকা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৩ কোটি ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৩০৭ জন। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টাতেই সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫ হাজার ৯৮৯। অতিমারিতে সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৯০ হাজার ৯৫ জনের। যা গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে মারা গিয়েছেন ৫৪০ জন।

আক্রান্তের তালিকায় বিশ্বের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। এখনও পর্যন্ত ভারতে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২ কোটি ৮৬ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৮২ জনের। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার ৫২৯ এবং মৃতের সংখ্যা ৩ হাজার ৩৮০।

ভারতের পরেই রয়েছে ব্রাজিল। দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশে এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৬৭ লাখ ২৪ হাজার ২০ হাজার ৮১। মোট মৃত্যু ৪ লাখ ৬৭ হাজার ৭০৬। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট আক্রান্তের হয়েছেন ৯৫ হাজার ৬০১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৫০৭ জনের।

ইউরোপের দেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোভিড ১৯ প্রভাব ফেলেছে ফ্রান্সে এবং ব্রিটেনে। ফ্রান্সে এখনও পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৫৫ লাখ ৯২ হাজার ২১০ এবং মোট মৃত্যু ১ লাখ ৮ হাজার ৯৯৪। গত ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সে মারা গিয়েছেন ১৩৫ জন এবং নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ৭ হাজার ৯৭৮ জন।# সূত্রঃ আনন্দবাজার

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.