--- বিজ্ঞাপন ---

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ডারপা’র কারনে ইন্টারনেট বিশ্বে সহজলভ্য

0

কাজী আবুল মনসুর / সিরাজুর রহমান

ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ডিআরপিএ) বা ‘ডারপা’ মুলত একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি নতুন ডিফেন্স রিলেটেড প্রযুক্তির গবেষণামুলক সংস্থা। আজকের ইন্টারনেট তৈরিতে DARPA সহায়ক ছিল, পাশাপাশি ইমেলগুলিতে এ্যাট (@) চিহ্ন ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও ছিল। ব্যবহারকারীর নাম নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত, @ প্রতীকটি নির্দিষ্ট হোস্টের নামের সাথে সংযুক্ত ইমেল ঠিকানাগুলিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। রে টমলিনসন, একজন প্রকৌশলী দ্বারা DARPA এর জন্য ডিজিটাল কোনও ইউটিলিটির ইমেলের পরে এটি নকশা করা হয়েছিল। মূলত স্নায়ুযুদ্ধ না থাকলে ইন্টারনেট আজকের সিস্টেমে বিকশিত হতে পারে না। মার্কিন প্রতিরক্ষা সংস্থা এবং ঠিকাদাররা মূলত অনেকগুলি অন্তর্নিহিত নোডের ক্ষয়ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকতে সক্ষম একটি বিকেন্দ্রীভূত নেটওয়ার্ক তৈরি করতে প্রাথমিক গবেষণা পরিচালনা করেছিল। কেউ কেউ দাবি করেছেন যে মার্কিন সরকার এমন একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চেয়েছিল যা পারমাণবিক হামলার হাত থেকে বাঁচতে পারে। পরে এটি এমন পর্যায়ে যায় যা ছিল নিয়ন্ত্রনের বাইরে।

বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এবং ব্যক্তিগত জীবনে ইন্টারনেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। ব্যাংকিং থেকে শুরু করে অনলাইন কেনাকাটা, পড়াশোনা, বানিজ্য, ফ্রিল্যান্সিং এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সব কিছুই আজ ইন্টারনেটর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। বিশ্বের প্রায় ৪.০০ বিলিয়ন মানুষ বিভিন্নভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন কিংবা জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের প্রযুক্তিগত সুবিধা প্রতিনিয়ত ভোগ করে যাচ্ছেন। তাছাড়া ইন্টারনেটে প্রতিদিন প্রায় ৩.০ মিলিয়ন টেরাবাইট নতুন ডেটা ও ইনফরমেশন ইন্টারনেটের ভার্চুয়াল জগতে যুক্ত হচ্ছে। আর শুধুমাত্র গুগলের ইউটিউবে প্রতিদিন প্রায় ৪.৩ মিলিয়ন ডাটার সমপরিমাণ ভিডিও আপলোড করা হয়ে থাকে সারা বিশ্ব থেকে।

এটা ঠিক যে, ইন্টারনেটের শুরুটা কিন্তু মোটেও এত সহজ কোন বিষয় ছিল না। ইন্টারনেটের শুরুর ইতিহাস জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হতে সেই কোল্ড ওয়ার যুগের ১৯৬১-৬২ সালের দিকে। মুলত দীর্ঘ সময় ব্যাপী শতাধিক প্রযুক্তিবিদ, গবেষক এবং বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সাধনার ফলে আজ ইন্টারনেট অনেকটাই সহজলভ্য হয়ে আমাদের জীবনের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তবে যাই হোক না কেন, সারা বিশ্বে ইন্টারনেটের বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে একটি সামরিক প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ছিল একেবারেই চমকে দেবার মতো। আর সেটি হলো আমাদের চোখে যুদ্ধবাজ এবং কূটকৌশলী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ডিআরপিএ) বা ‘ডারপা’ নামক একটি সামরিক গবেষণামুলক প্রতিষ্ঠান।

ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি (ডিআরপিএ) বা ‘ডারপা’ মুলত একটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি নতুন ডিফেন্স রিলেটেড প্রযুক্তির গবেষণামুলক সংস্থা। যা কিনা সামরিক বাহিনীর জন্য বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে ভবিষ্যতের আরো উন্নত প্রযুক্তির সামরিক সাজ সরঞ্জাম এবং যুদ্ধাস্ত্র ডেভলপমেন্টের জন্য গবেষণা করে যায়। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই রিসার্চ সেন্টারকেই কিন্তু ইন্টারনেটের আঁতুড়ঘর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মার্কিন সেনাবাহিনীর এই ‘ডারপা’ গবেষণাগারে ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ব্যাপক গবেষণা, পরীক্ষা এবং রিসার্চের পর ১৯৬৯ সালের চুড়ান্তভাবে পরীক্ষা করে দেখা হয় আসলে ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের মাধম্যে ডাটা ট্রান্সফার বাস্তবে আদৌ সম্ভব হবে কি না।

তাই গবেষণার একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালির্ফোনিয়া বিশ্ববিদ্যায়ের গবেষণাগারে একটি নোড বসানো হয় এবং তার ৩৫০ মাইল দূরুত্বে স্টামফোর্ড বিশ্ববিহ্যালয়ের রিসার্চ সেন্টারে অপর একটি নোড বসানো হয়। আর এই দুই রিসার্চ সেন্টারের কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষামুলক মাত্র কয়েক কেবি ডাটা ট্রান্সাফারের মাধম্যে বিশ্ব এক নতুন ইন্টারনেট ভিত্তিক বৈপ্লবিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে প্রবেশ করে। প্রথম দিকে ইন্টারনেটের গবেষণা শুধুমাত্র সামরিক উদ্দেশ্যে নিয়ে শুরু হলেও তা কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডারপার গবেষণাগারে আটকে থাকেনি। বরং তা পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে ইন্টারনেটের বাস্তব ব্যবহার ও প্রয়োগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

বর্তমানে আমরা সোস্যাল নেটওয়ার্কিং, ব্যাংকিং, ওয়েব ভিত্তিক নিউজ পোর্টাল, বানিজ্য, শিক্ষা, বানিজ্য, স্বাস্থ্য সেবাসহ দেশ পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যাবহার করে যাচ্ছি এবং এর চূড়ান্ত সুফল ও সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে ওয়েব ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটিং (ফ্রীল্যান্সিং) এর মাধ্যমে আজ আমাদের দেশের প্রায় পাঁচ লক্ষের অধিক মেধাবী তরুণ তরুণীর অর্থ আয় করে নিজেকে আত্মনির্ভরশীল করার পাশাপাশি দুড়ন্ত গতিতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর এখন আমরা কিনা ডিজিটাল নির্ভর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে এসে ২০২৫ সালের মধ্যে ইন্টারনেট ভিত্তিক ইনফরমেশন এণ্ড টেকনোলজি সেক্টর থেকে নুন্যতম ৫.০০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের এক নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছি।

২০২০ সালের শুরু থেকে সারা বিশ্বে করোনা (কভিড-১৯) মহামারি ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ব অর্থনীতি এবং আমাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। তবে ইন্টারনেট প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন ভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং তথ্য প্রবাহের ব্যাপক ব্যাবহারের ফলে আজ কিন্তু বিশ্বের অর্থনীতি এবং যোগাযোগ ব্যাবস্থা অনেকটাই সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। এখন কিনা ইন্টারনেট সারা বিশ্বের পাওয়ার হাউজ অব ইনফরমেশন হিসেবে আনুমানিক কয়েক হাজার হাজার ট্রিলিয়ন টেরাবাইট ডাটা সংগ্রহ করে রেখেছে এবং আমাদের প্রয়োজনে তা ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.