--- বিজ্ঞাপন ---

ইলেক্ট্রিক এ্যাটাক সাবমেরিন তৈরি করবে ভারত, ৫০ হাজার কোটি রুপি বরাদ্দ

0

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নৌবাহিনীর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে নতুন করে ৬টি অত্যাধুনিক বড় আকারের সাবমেরিন তৈরির ছাড়পত্র দিয়েছে। মুলত ৭৫-ইন্ডিয়া প্রজেক্টের আওতায় বিশাল আকারের ৬টি বিশ্ব মানের ডিজেল ইলেক্ট্রিক এ্যাটাক সাবমেরিন তৈরি করা হবে ভারতের মাটিতেই। এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায়।  প্রজেক্ট বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার কোটি ভারতীয় রুপি বা ৬.৭৫ বিলিয়ন ডলার। দীর্ঘদিন থেকেই সাবমেরিন তৈরির এই বিশাল প্রকল্পটি লাল ফিতায় আঁটকে ছিল এবং অতি সাম্প্রতিক সময়ে ভারত মহাসাগরে চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক উপস্থিতি ও সামরিক উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করায় ভারতের মোদি সরকার এটি বাস্তবায়নে সবুজ সংকেত প্রদান করেন।

এক বিংশ শতাব্দীর বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ভারতের সরকার তাদের নৌবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি এবং আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বেশকিছু বড় আকারের প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। সেই ইন্ডিয়া-৭৫ প্রজেক্টের আওতায় এবার দেশের মাটিতেই তৈরি হবে নিজস্ব প্রযুক্তির অত্যাধুনিক ডিজেল ইলেক্ট্রিক এ্যাটাক সাবমেরিন। এই সাবমেরিনগুলো বর্তমানে সার্ভিসে থাকা প্রচলিত ডিজেট ইলেক্ট্রিক সাবমেরিন অপেক্ষা আকারে অনেকটাই ৫০ শতাংশ বেশি বড় হবে।

ভারতীয় নৌবাহিনীর নিজস্ব চাহিদার ভিত্তিতে নতুন করে তৈরি করা সাবমেরিনগুলোকে বিশ্ব মানের প্রযুক্তি এবং ক্ষেপণাস্ত্র দ্বারা সজ্জিত করা হবে। প্রাথমিকভাবে ৭৫-ইন্ডিয়া প্রজেক্ট এর আওতায় ৬টি সাবমেরিন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি ভারতীয় রুপী। ৭৫-ইন্ডিয়া প্রজেক্টের ৬টি সাবমেরিন নির্মাণ করবে ভারতীয় দুটি প্রতিষ্ঠান। একটির নাম মাজাগন ডকস লিমিটেড এবং অপরটি এলঅ্যান্ডটি। ভারতের দেশীয় দুটি প্রতিষ্ঠান মাজাগন ডকস লিমিটেড এবং এলঅ্যান্ডটি উভয় বিদেশী শিপইয়ার্ডগুলির প্রযুক্তিগত সহযোগিতায় এই বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।

মূলত ভারত মহাসাগরে নৌবাহিনীর শক্তি কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে এই বিশাল সাবমেরিন তৈরির প্রকল্প শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। নতুন এই ৬টি সাবমেরিন হবে কনভেনশনাল ডিজেল ইলেক্ট্রিক পাওয়ারড চালিত এবং এগুলো আকারে বর্তমানে সার্ভিসে থাকা সাবমেরিন অপেক্ষা ৫০ শতাংশ বড় হতে যাচ্ছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, ভারী অস্ত্র সজ্জিত করার পাশাপাশি আধুনিক অস্ত্র ব্যবস্থাপনা এবং প্রচলিত সব সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করে তৈরি করা হবে ৭৫-ইন্ডিয়া প্রজেক্টের ৬টি বিশ্ব মানের সাবমেরিন।

ভারতীয় নৌবাহিনীর তরফ থেকে দীর্ঘ দিন থেকেই সরকারের কাছে সাবমেরিনে হেভি ডিউটি ফায়ার পাওয়ার সমৃদ্ধ নতুন প্রজন্মের এ্যাটাক সাবমেরিনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে চাহিদা প্রদান করে আসছিল। এখন নতুন পরিকল্পনার আওতায় অত্যাধুনিক সাবমেরিন নিজ দেশেই তৈরি করার বিষয়টি এক রকম নিশ্চিত হওয়ায় নৌবাহিনীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে। নৌবাহিনীর চাহিদা মাফিক সাবমেরিনে অ্যান্টি শিপ ক্রুজ মিসাইলের পাশাপাশি ১২টি সাবমেরিন ভিত্তিক ল্যান্ড অ্যাটাক ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করার উপযোগী করে তৈরি করা হবে। তার সাথে থাকবে ১৮টি হেভি-ওয়েট টর্পেডো নিক্ষেপ এবং সমুদ্রের বুকে মাইন স্থাপনের মতো বিশেষ সুবিধা। আর সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিশ্ব মানের প্রযুক্তি ও অস্ত্র ব্যবহার করে তৈরি করা হবে সাবমেরিনগুলি।

বর্তমানে ভারতের নৌবাহিনীতে মোট ১৩৪টির কাছাকাছি যুদ্ধজাহাজ এবং ১৬টি সাবমেরিন রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দুটি পারমাণবিক শক্তি চালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্ত এবং রাশিয়া থেকে ১০ বছরের লিজ নেওয়া আইনএস চক্র। তবে রাশিয়ার সাথে চুক্তি মোতাবেক ভারতের নৌবাহিনী আকুলা ক্লাস-২ শ্রেণির আইএনএস চক্র নিউক্লিয়ারড পাওয়ারড সাবমেরিনে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বেসড ব্যালেস্টিক মিসাইল বহন করতে পারেনা এবং খুব সম্ভবত ১০ বছরের লিজের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এটি এখন রাশিয়ায় ফিরে গেছে। তাছাড়া জার্মানীর তৈরি ৪টি শিশুমার ক্লাস এ্যাটাক সাবমেরিন, ১৮৭০ টন ওজনের ফ্রান্সের তৈরি কালভারী ক্লাসের এট্যাক সাবমেরিন ৩টি এবং আরো ৩টি এই জাতীয় ফ্রান্সের স্কোপিয়ান ক্লাসের সাবমেরিন ভারতের মাটিতেই নির্মাণাধীন রয়েছে। তাছাড়া রাশিয়ার তৈরি ৮টি কিলোক্লাস বা সিন্ধুঘোস ক্লাসের ডিজেল ইলেক্ট্রিক এট্যাক সাবমেরিন সার্ভিসে রয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.