--- বিজ্ঞাপন ---

নামমাত্র বিয়ের দিকে ঝুকছে সৌদিআরবের তরুন-তরুনীরা

0

বর্তমানে সৌদি আরবে তরুন-তরুণীদের মধ্যে একেবারে সাময়িক বা চুক্তি ভিত্তিক নামমাত্র বিবাহের হার ও প্রবণতা ভয়াবহ পর্যায়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর একেবারে সাময়িক ও শর্তহীন এহেন বিবাহকে সৌদি সমাজে ‘মিসইয়ার’ বিয়ে নামে ডাকা হয়। যদিও এই ধরণের স্বল্প সময়ের চুক্তির বিয়ে নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন সৌদি আরবের ‘ধর্মীয়’ চিন্তাবিদেরা।

সৌদি স্কলার্স বা ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, এই জাতীয় ‘মিসইয়ার’ বিয়ে যুব সমাজের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খলতাকেই উস্কে দিচ্ছে এবং ধ্বংস হয়ে যেতে বসেছে শুদ্ধ ইসলামী শরিয়ত সম্মত বিবাহ প্রথা। আর এখন সৌদি যুব সমাজের মধ্যে আজীবন বা স্থায়ী বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার বিপরীতে শর্তহীন এবং নামমাত্র সময়ে জীবনকে উপভোগ করার জন্য ‘মিসইয়ার’ বিবাহের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আর এখন কিনা সৌদি আরবের যুব সমাজে শর্তহীন বা নামমাত্র ‘মিসইয়ার’ বিয়ের ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশজুড়ে। সৌদি সমাজে প্রচলিত বিয়ের খরচ মেটানোর সামর্থ্য না থাকা পুরুষদের জন্য গোপনে এ ধরনের ‘মিসইয়ার’ বিয়ে যেন ‘আশীর্বাদ’ হয়ে উঠছে।

ইসলামী শরিয়ত এবং আইন মতে, মুসলিম ধর্মের অনুসারী সকল নারী ও পুরুষের বিবাহের আগে সকল ধরণের শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সহবাস একেবারেই অবৈধ বা হারাম। এই নিয়ন অমান্য করলে তাকে আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হয়। তবে অত্যন্ত দূঃখজনক হলেও সত্য যে, সৌদি আরবে বর্তমান যুব সমাজ সাময়িক ‘মিসইয়ার’ বিয়ের আড়ালে লিভ টু-গেদার বা ‘লিভ-ইন’ কিংবা এক সর্বনাসী পরকীয়ায় মেতে উঠেছে। এজন্য এমনকি সোস্যাল মিডিয়ায় এবং অনলাইনে অসংখ্য বিশেষ ‘ম্যাচ-মেকিং’ কিংবা ‘খাতবা’ সাইট বা গ্রুপ মিডিয়া চালু হয়ে গেছে অনেক আগেই। আর এই সমস্ত সাইটে এসে সৌদি যুব সমাজ তার মনের মতো সঙ্গী খুজে নিয়ে একেবারে শর্তহীন এবং সামরিক সময়ের জন্য কথিত বৈধ পন্থায় ‘মিসইয়ার’ বিয়ে করে সমাজে চরম এক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।

আনেক আগে থেকেই সৌদি আরবে বহুবিবাহ প্রথা প্রচলন থাকলেও বর্তমানে ‘মিসইয়ার’ নামে নতুন করে সৌদি যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের মতে, ইসলামী বিয়ের নিয়ম মেনে যে কোন সময়ের জন্য ‘মিসইয়ার’ বিয়ে করা যায়। ‘মিসইয়ার’ বিবাহে আবদ্ধ নারী ও পুরুষ যে কোনো সময় একে অন্যকে ছেড়ে চলে যেতে পারেন। এতে তাদের আইনগত কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না। তবে প্রকাশ থাকে যে, ‘মিসইয়ার’ বিয়ের পুরো বিষয়টি গোপন রাখা হয়।

তবে সৌদি আরবের অনেকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান যে, সৌদি আরবে প্রাচীন কাল থেকে প্রচলিত বহুবিবাহে আগ্রহীদের জন্যই এই নতুন সংক্ষিপ্ত সময়ের ‘মিসইয়ার’ বিবাহ ব্যবস্থা খুবই উপযোগী এবং মানানসয়ী। এদিকে মহিলারাও এই ব্যবস্থার মাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক নানা জটিলতা থেকে নিজেকে দূরে থাকতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘মিসইয়ার’ বিয়ের মেয়াদ হয়ে থাকে ১৪ দিন থেকে ৬০ দিন পর্যন্ত। সৌদি আরবে যুব সমাজের মধ্যে যারা কার্যত বিবাহের পর স্ত্রী সম্পূর্ণ দায়িত্ব কাঁধে রাখতে চান না, তারাই এ ধরনের অনৈতিক বিয়েতে বেশি ঝুঁকে থাকেন। তাছাড়া বহুগামী নারী-পুরুষ দ্বিতীয় সংসারের ভার বহন করে বেড়ানোর চাপ এড়িয়ে নতুন সম্পর্কের সুবিধা উপভোগ করতে ‘মিসইয়ার’ নামক বিবাহ প্রথায় উৎসাহী হয়ে পড়ছেন সৌদি যুব সমাজ। আর এখন কিনা সৌদি আরবের সমাজের বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্তা নারীদের মধ্যেও ‘মিসইয়ার’ বিয়ে প্রথা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অনেক কিছু সৌদি নাগরিকের ভাষ্যমতে, সৌদি আরবের প্রচলিত আইন ও নিয়ম মেনে ‘মিসইয়ার’ বিয়েতে খরচ হয় খুবই কম এবং এতে পাত্রী পক্ষকে কোন যৌতুক দিতে হয় না। তাছাড়া সোস্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে ম্যাচ মেকার বা ‘খাতবা’ এর মাধ্যমে ‘মিসইয়ার’ বিবাহে সম্মত পাত্র বা পাত্রী খোঁজা হয়। আর এক্ষেত্রে পছন্দ মতো সঙ্গী পেলে ‘খাতবা’কে ৫,০০০ রিয়াল তার কাছাকাছি ফি প্রদান করতে হয়।

এদিকে এক ৪০ বছর বয়সী এক সৌদি কর্মকর্তা দাবি করেন যে, ‘মিসইয়ার’ বিবাহ প্রথা সম্পূর্ণ বৈধ এবং হালাল। তিনি নিজেও ‘মিসইয়ার’ বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। রিয়াদে তার এক ‘মিসইয়ার’ স্ত্রী রয়েছেন এবং সেই স্ত্রীর আবার তিন সন্তানও রয়েছে। এর পাশাপাশি তিনি আরও দাবি করেন যে, তাঁর এক বন্ধুর ‘মিসইয়ার’ বিয়েতে আবদ্ধ এ রকম ১১ জন গোপন স্ত্রী রয়েছেন।#

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.