--- বিজ্ঞাপন ---

ভারতের মন্ত্রী সভার রদবদলের ঝড় শেষপর্যন্ত থামলো

বাদ গেলেন ১৫ জন, ৫৩ থেকে এখন ৭৪ মন্ত্রী

0

ভারতের মন্ত্রী সভার রদবদলের ঝড় শেষপর্যন্ত থামলো। বাদ গেলো ১৫ জন। সবাই একসঙ্গে পদত্যাগ করেন নি। কিছু পর পর পদত্যাগ করলেন তারা। মোদী চাননি তারা আর থাকুক। ২০১৯ সালে মন্ত্রীসভা গঠনের পর কোভিডের ধাক্কায় ভারতের অনেক কিছু এলোমেলো হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক মন্ত্রণালয় নিয়ে মোদী ছিলেন বিব্রত। মন্ত্রীসভার আকার বড় করার বিষয়টি ভারতের রাজনৈতিক মহলে বেশ আগেভাগে প্রকাশ পায়। কিন্ত কত বড় হবে এমনটি নিয়ে ছিল সংশয়। শেষপর্যন্ত ৫৩ সদস্যের মন্ত্রীসভা ৭৪ এ রূপ নিল।

ভারতের মন্ত্রীসভার রদবদলের বিষয়টি বেশ নজরে রেখেছে বিরোধী দলগুলো। কারা আসছেন আর কারা যাচ্ছেন এ নিয়ে কৌতুহলের অন্ত ছিল না। তবে মোদীর ঘনিষ্ঠ বলে অনেকের বাদ পড়া নিয়ে মহল বিশেষে আলোচনার অন্ত ছিল না। নতুন মন্ত্রী সভায় অনেক তরুন ও নতুন মূখ স্থান পেয়েছে বলে জানা গেছে।

আনন্দবাজার সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসার পরে ৫৩ জনের মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২ বছর পরে মন্ত্রিসভায় বদল করলেন তিনি। এক দিকে যেমন অনেকে বাদ গেলেন, তেমনই অন্য দিকে জায়গা পেলেন অনেকে। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্বও পেলেন অনেকে। মোদীর নতুন মন্ত্রিসভায় সদস্য সংখ্যা বেড়ে হল ৭৪। আগামী বছরের গোড়াতেই উত্তরাখণ্ডে বিধানসভা ভোট। তাই এ বারের মন্ত্রিসভার রদবদলে হিমালয়ঘেরা রাজ্য থেকে আরেক প্রভাবশালী ব্রাহ্মণ নেতা অজয় ভট্টকে মন্ত্রী করেছেন মোদী। উত্তরাখণ্ডের সঙ্গেই বিধানসভা ভোট উত্তরপ্রদেশে। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানার মন্ত্রী সন্তোষ গাঙ্গোয়ারের মতো প্রবীণকে সরিয়ে এস পি সিংহ বাঘেল, ভানুপ্রতাপ সিংহ বর্মা, কৌশল কিশোর, বি এল বর্মা, অজয়কুমার মিশ্রের মতো নেতাদের মন্ত্রিসভায় আনা হয়েছে। চেষ্টা হয়েছে উচ্চবর্ণ, অনগ্রসর এবং দলিত রাজনীতির ভারসাম্য রক্ষার।

পদত্যাগ করছেনে ১৫ জন

আগের মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন ১৫ জন মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ, তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর, স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, রাসায়নিক ও সার মন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া, শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার, শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্ক প্রমুখ। এ ছাড়াও উপভোক্তা বিষয়ক, খাদ্য ও গণবন্টন প্রতিমন্ত্রী রাওসাহেব, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধোত্রে, মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় প্রমুখও ইস্তফা দেন। থাওয়ারচাঁদ গহলৌতকে কর্নাটকের রাজ্যপাল করে পাঠানো হয়েছে।

নতুন মন্ত্রিসভায় মোট ৩০ জন

নতুন মন্ত্রিসভায় মোট ৩০ জন পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন আগে থেকেই ছিলেন। ৭ জন প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে ৮ জনকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভায় রয়েছেন ৪৪ জন প্রতিমন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন আগেই ছিলেন। ২৮ জনকে নতুন করে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় নতুন চার বাঙালি সদস্যের পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন আরও এক বাঙালি— ত্রিপুরার সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক।

আলোচনায় বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী

মোদী মন্ত্রীসভায় বেশ জনপ্রিয় ছিলেন বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরী। তারা কেন বাদ গেল এ নিয়ে অনেক কথা চলছে। পুরনো মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়া হলো বাবুল সুপ্রিয় ও দেবশ্রী চৌধুরীকে। বাবুল ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। অন্য দিকে দেবশ্রী ছিলেন মহিলা ও শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী।

বাংলা থেকে নতুন ৪ জন

বাংলা থেকে নতুন জায়গা পেয়েছেন ৪ জন। তাঁরা হলেন শান্তনু ঠাকুর, নিশীথ প্রামাণিক, সুভাষ সরকার ও জন বার্লা। নতুনদের জায়গা দেওয়া নয়, পুরনোদের মধ্যেও অনেককে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বাদ পড়লেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও

কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনের কাজ নিয়েও মোদী এবং অমিত শাহ খুশি ছিলেন না বলে বিজেপি-র অন্দরের খবর। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় চাঁদনি চকের সাংসদ দিল্লিতে অক্সিজেনের অপ্রতুল সরবরাহ নিয়ে সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীদের নিশানা হয়ে ওঠায় তাঁর বিদায় অনিবার্য হয়েছে। তাঁর জায়গায় দিল্লির নতুন প্রজন্মের নেত্রী মীনাক্ষী লেখিকে আনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়।

শিক্ষামন্ত্রীও ঝরে গেলেন

জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে বিতর্কে জড়ালেও কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়ালের বিদায়ের পিছনে স্বাস্থ্যের কারণই মুখ্য। মাস কয়েক আগে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পর উত্তরাখণ্ডের এই নেতা মন্ত্রক ও দলের কাজে কার্যত কোনও সময়ই দিতে পারছিলেন না।

তথ্য নিয়ে বিতর্কে বাদ গেলেন তথ্যমন্ত্রীও

নয়া তথ্যপ্রযুক্তি আইন প্রণয়ন এবং ‘ব্যক্তিগত তথ্য গোপনের স্বাধীনতা’ ঘিরে বিতর্কের বিষয়টি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর ঠিক ভাবে সামলাতে পারেননি বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষত, টুইটার-বিবাদ যে ভাবে আন্তর্জাতিক খবর হয়ে উঠেছিল, তা রবিশঙ্করের বিদায় প্রশস্ত করেছে বলেই অনেকের ধারণা। অন্যদিকে, কাজে অনীহা এবং আলটপকা মন্তব্য করার স্বভাব অশ্বিনীর বিপক্ষে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিহার থেকেই সহযোগী দুই দলের মন্ত্রী এসেছেন মোদীর ক্যাবিনেটে— জেডি(ইউ)-র রামচন্দ্রপ্রসাদ সিংহ এবং এলজেপি-র সাংসদ পশুপতি পারস।

প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন ৮ জন

প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন সহযোগী আপনা দল (এস) নেত্রী অনুপ্রিয়া পটেলও। উত্তরপ্রদেশ থেকে এ বার মন্ত্রিসভায় এসেছেন মোট ৮ জন।মন্ত্রিসভার রদবদলে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মহারাষ্ট্রকেও। মহারাষ্ট্রের প্রকাশ জাভড়েকর, সঞ্জয় ধোত্রে, রাওসাহেব দানবে পাটিলের মতো মন্ত্রীরা বাদ পড়েছেন। এঁদের মধ্যে দক্ষ সংগঠক হিসেবে পরিচিত রাওসাহেব রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস জোটের মোকাবিলায় তাঁকে রাজ্য রাজনীতিতে ফেরানো হতে পারে বলেই বিজেপি সূত্রের খবর। মহারাষ্ট্র থেকে মোদীর মন্ত্রিসভায় এসেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রানে, প্রাক্তন এনসিপি নেতা কপিল পাটিল, ঔরঙ্গাবাদের প্রাক্তন মেয়ার ভগবত কারাডের মতো ‘আঞ্চলিক প্রভাবশালী’রা। তুলনায় অপরিচিত ডিন্ডোরির সাংসদ ভারতী পওয়ারের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তি অবশ্য অবাক করেছে অনেককেই। দক্ষিণের রাজ্য কর্নাটক থেকে মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার ‘ঘনিষ্ঠ’ শোভা করন্ডলাজে প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন। রাজীব চন্দ্রশেখর, এ নারায়ণস্বামী, ভগবন্ত খুবার মতো নতুন প্রজন্মের নেতাদের ঠাঁই হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়।মন্ত্রিসভার রদবদলে বিহার থেকে বাদ পড়েছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ, অশ্বিনী চৌবের মতো প্রবীণ বিজেপি নেতারা।

ভাগ্য খুলল ৭ জনের

এ বারের রদবদলে মোট সাত জন প্রতিমন্ত্রীর পদোন্নতি হয়েছে। বুধবার পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া এই নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নাম অনুরাগ ঠাকুর। অনুরাগের বাবা তথা হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রেমকুমার ধুমল সে রাজ্যের বিজেপি-র গোষ্ঠী সমীকরণে বর্তমান সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডার বিরোধী হিসেবে পরিচিত। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সন্ত্রাস মোকাবিলায় বিশেষ তৎপরতা দেখিয়েছেন তেলঙ্গানার নেতা জি কৃষ্ণ রেড্ডি। তাঁকেও পূর্ণমন্ত্রী করা হয়েছে। মোদীর গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত পুরুষোত্তম রূপালা। প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন তিনিও। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব আর কে সিংহেরও প্রশাসনিক দক্ষতার কারণেই প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রিত্বে পদোন্নতি হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর। তবে আরেক প্রাক্তন আমলা হরদীপ সিংহ পুরীর পূর্ণমন্ত্রী পদে উত্তরণ অবাক করেছে অনেককেই। কারণ, বিমান মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তাঁর পারফরম্যান্স আহামরি কিছু ছিল না বলেই অভিমত অনেকের। প্রকাশ্যে গো মাংস ভক্ষণ বা ধর্মান্তকরণের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের দায়ে অভিযুক্ত হলেও অরুণাচল প্রদেশের নেতা কিরেন রিজিজু উত্তর-পূর্ব ভারতে সাংগঠনিক বিস্তারে অবদানের জন্যই প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী হলেন। অন্যদিকে, অসমে হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে হেরে যাওয়া সর্বানন্দ সোনওয়ালকে কেন্দ্রে আনা কার্যত ‘পুনর্বাসন’ বলেই মনে করছে বিজেপি-র একাংশ।##

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.