--- বিজ্ঞাপন ---

হিজবুল্লাহ’র অস্ত্রভান্ডার নিয়ে মিডিয়ায় ইসরাইলের প্রোপাগান্ডা

0

ইসরাইলের রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম ‘হারেৎজ’ ও ‘ওয়ালা’ নিউজ এজেন্সির প্রকাশিত তথ্য মতে, বর্তমানে লেবাননের থাকা ইসরাইল বিরোধী মিলিশিয়া সংগঠন ‘হিজবুল্লাহ’ এর অস্ত্র ভাণ্ডারে আনুমানিক ১ লক্ষ ৫০ হাজারের কাছাকাছি বিভিন্ন পাল্লার রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল মজুত রয়েছে। যেগুলো কিনা ১৫ কিলোমিটার থেকে ৭০০ কিলোমিটার দুরুত্ব পর্যন্ত আঘাত হানতে সক্ষম। তাদের ভাষ্যমতে, ভবিষ্যতে ইসরাইলের সাথে হেজবুল্লাহ বড় ধরণের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন কমপক্ষে এক হাজার থেকে তিন হাজার পর্যন্ত রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রাখে হেজবুল্লাহ। তাছাড়া হেজবুল্লাহ তাদের নিখুঁত ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে এতটাই এগিয়েছে যে, বর্তমানে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা বিভাগ এবং এজিন্সিগুলো এখন তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।

আসলে ইসরাইল নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াগুলো গাজার হামাস এবং লেবাননের হেজবুল্লাহর মতো সশস্ত্র মিলিশিয়া সংগঠনগুলোকে বিশ্বের চোখে অতি ভয়ঙ্কর এবং শক্তিশালী বলে প্রচার করে। আর যুদ্ধের আবহ সৃষ্টি করে বাস্তবে ইসরাইলের সরকার বিভিন্নভাবে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের অংশ আস্তে আস্তে নিজ দখলে নেওয়ার এক মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি ইসরাইল নিজেকে অসহায় ও যুদ্ধ কবলিত দেশ হিসেবে প্রচার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পশ্চিমা দেশগুলোর সহানুভূতি এবং আর্থিক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে কৌশলে। এখানে প্রকাশ থাকে যে, ইসরাইল বর্তমানে প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩.৮০ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়াতা পাওয়ার পাশাপাশি আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে নুন্যতম ১০-১৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বিভিন্ন খাতে আর্থিক সুবিধা বা অনুদান পেয়ে থাকে।

চলতি ২০২১ সালের মে মাসের এক সংক্ষিপ্ত সামরিক সংঘর্ষে গাজা থেকে হামাস সশস্ত্র গ্রুপ ইসরাইলে প্রায় ৪,২৬০ এর কাছাকাছি রকেট নিক্ষেপ করে। যদিও ইসরাইলের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বরাবরের মতো প্রায় ৮০% রকেট আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। এদিকে প্যালেস্টাইন হামাস গ্রুপের রকেট হামলার পাল্টা জবাবে ইসরাইলের বিমান বাহিনী হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজায় অস্ত্র কারখানাসহ অর্ধ শতাধিক স্থাপনায় কিম্বা ভবনে বাপক মাত্রায় বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ধ্বংস করে দেয়। এতে করে গাজা ও পশ্চীম তীরে প্রায় ৩৭০ জনের কাছাকাছি ফিলিস্তিন মৃত্যুবরণ করলেও গাজা থেকে নিক্ষেপ করা অনেকটা পুরাতন প্রযুক্তির ও অচল রকেট হামলায় ইসরাইলে মোট ৯ জন নিহত হয়। আসলে হামাস কিংবা হেজবুল্লাহর রকেট পশ্চিমা মিডিয়ায় কৃত্রিম আতঙ্ক ও গুজব ছড়ানো ব্যাতিত ইসরাইলের সামরিক সক্ষমতা বা মেরুদণ্ড বিপর্যস্থ করার মতো কোন প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রাখে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

ইহুদীবাদি ইসরাইল রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকে আরব দেশগুলো একত্রে ভয়াবহ যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে ১৯৪৮, ১৯৬৭ এবং ১৯৭৩ সালে তিন তিন বার শচনীয়ভাবে পরাজয় বরণ করার পর তারা এখন তারা আর ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কিংবা যুদ্ধ করার সাহস পায় না। বরং আরব বিশ্বের দেশগুলো বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মিনি সুপার পাওয়ার খ্যাত ইসরাইলকে জমের মতো ভয় করে। এদিকে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে সভিয়েত ইউনিয়ন প্রতি বারই আরব দেশগুলোকে সমর্থন করার পাশাপাশি বিলিয়ন ডলারের যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম সরবরাহ ও বিক্রি করে গেলেও কার্যত পরোক্ষভাবে ইসরালের দীর্ঘ মেয়াদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে গেছে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে।

তবে বিগত দুই দশকে ইরান সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং গাজায় হামাসের সাথে বেশ কয়েকবার সামরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে ইসরাইল। আর প্রতিটি যুদ্ধের পর পরই কিছু না কিছু নতুন এলাকা কিংবা ফিলিস্তিন পবিত্র ভূমি ইসরাইল নতুন করে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক নিজ দখলে নিয়েছে। আর ইসরাইলের ফিলিস্তিন ভূমি দখল কিন্তু এক রকম চলমান কাজের অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে ১৯৪৮ সাল থেকেই। এভাবে ভূমি দখল প্রক্রিয়া চলতে থাকলে আগামী ২০৩৫ সালের মধ্যে ফিলিস্তিনের শতকরা ৯৫ এলাকা বা ভূমি ইসরাইলের দখলে চলে যাবে। আবার ২০৫০ সালের দিকে হয়ত পুরো প্যালেস্টাইন এলাকা বিলীন হয়ে এবং তার পাশাপাশি সিরিয়া, লেবানন এবং জর্দানের একটি বড় অংশ দখল করে ইসরাইলের আয়তন দুই থেকে তিন লক্ষ বর্গ কিলোমিটারে পৌছে যাওয়ার প্রবল আশাঙ্খা থেকেই যাচ্ছে। এদিকে বেশ কয়েক বার সীমিত যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে হিজবুল্লাহ এবং হামাসের ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়লেও ইসরাইলের ডিফেন্স ব্যাকবোন একেবারেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার মতো কোন পরিস্থিতি কোনদিনই সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হয় না।

তাছাড়া হামাস ও অন্যান্য বিদ্রোহী সামরিক গ্রুপ গুলো সাম্প্রিতক সময়ে ব্যাপক মাত্রায় ইসরাইলের বেশ কিছু শহরে রাশিয়া কিম্বা ইরানের সরবরাহ করা আল ফজর বা কাতিউশা মার্কা হাজারো রকেট নিক্ষেপ করে গেলেও তাতে ইসরাইলের প্রাণহানী ও হতাহতের ঘটনা একেবারে নগন্যই বলা চলে। তাছাড়া এসব রকেট ইসরাইলের অবকাঠামো এবং সামরিক স্থাপনার বড় ধরণের কোন ক্ষতি করার সামর্থ রাখে কি না তা নিয়ে যথেষ্ঠ সন্দেহের অবকাশ থেকে যাচ্ছে। অথচ তার বিপরীতে ইসরাইল কিন্তু ঠিকই পাল্টা আঘাত করে আরব ভূমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন এবং হাজারো নিরীহ প্রাণহাণির ঘটনা এক রকম নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের ধনী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরান প্রকাশ্যেই ইসরাইলের সাথে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে দেশটিতে দূতাবাস খুলেছে। আর অন্যদিকে অন্যান্য আরব দেশগুলো গোপনে হলেও ইসরাইলের সাথে আপোষ রফা করে এবং গোপন সম্পর্ক স্থাপন করে মধ্যপ্রাচ্যে টিকে আছে। এমনকী মুখে তীব্র প্রতিবাদ করে গেলেও বিশ্বের কথিত নব্য সুলতানের দেশ তুরস্কের সাথে ইসরাইলের বানিজ্যিক সম্পর্ক ২৫ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। আর ইরান প্রতিদিন একশো বার করে আমেরিকা-ইসরাইলে হামলা ও ধ্বংসের ভয় দেখালেও সিরিয়াতে অবস্থানরত ইরানের সামরিক বাহিনী শক্ত কোন জবাব না দিয়েই এক রকম নিরবে সিরিয়ায় মাটিতে ইসরাইলের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হজম করে যাচ্ছে।

ইসরাইলের অস্ত্র ভাণ্ডারে বর্তমানে আনুমানিক ২ শতাধিক নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকার বিষয়টি বিশ্বের সামনে প্রকাশ পাওয়ায় বিশ্বের প্রথম সারির সুপার পাওয়ার দেশগুলো পর্যন্ত পরোক্ষভাবে হলেও সমীহ করে চলতে বাধ্য হচ্ছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ইসরাইলের কোন এক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রদের নিজস্বভাবে ডিজাইন এবং তৈরিকৃত রকেট মহাকাশে প্রেরণ করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। অথচ মুসলিম বিশ্বের ষাট এর কাছাকাছি দেশ এবং সারা বিশ্বে ১.৭ বিলিয়ন সুবিশাল জনসংখ্যা থাকলেও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ইসলামীক দেশগুলো বিশ্বের প্রথম শারির দেশগুলোর পর্যায়ে নিজেদের যোগ্য স্থান আজো করে নিতে পারেনি। যা কিনা মুসলিম বিশ্বের জন্য খুবই হতাশাজনক একটি বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে। আবার মুসলিম বিশ্বে শত শত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও এগুলো আসলে দেশ ও জাতিকে কার্যকরভাবে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে ব্যার্থ হচ্ছে। তাই সারা বিশ্বে আজো অসংখ্য মুসলিম জনপদ ধ্বংস ও হাজারো নিরহ মানুষের মৃত্যু হলেও তা প্রতিরোধে আদৌ কেউ আছে কিনা সন্দেহ থেকে যায়।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.