--- বিজ্ঞাপন ---

ক্রিক ভিলেজের নির্জনতায়…

0

কাজী ফেরদৌস, কানাডা থেকে

বাসা থেকে বের হয়ে দশ মিনিটের ও কম সময় হেঁটে একটি পার্কের সন্ধান পাওয়া গেল। পার্কটি এখনো সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক বলাযায়। কারণ এখনো মনুষ্য রচিত পরিকল্পনা একে সমৃদ্ধ করে নি।অথচ এর প্রাকৃতিক নিসর্গ মুগ্ধ হওয়ার মতো আমার তো মনে হয়। মানুষের পরিকল্পনা ছাড়াই একে বেড়ে উঠতে দেওয়া হলেই ভালো হতো। প্রকৃতি আপন হাতে একে নিজস্ব রূপ দিয়েছে।সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফুটে আছে অজস্র ঘাসফুল। সাদ লাল হলুদ। মনে হয় কার্পেট বিছিয়ে রেখেছে কেউ। চারপাশে এখনো ঘন জঙ্গল। একপাশে একটি চেরি ফলের জমি ও দেখতে পেলাম। পার্কে মানুষের সমাগম খুব কম। তাই কেউ মাস্ক পড়ে না।এখানে একমাত্র জনসমাগম যেখানে হয় বিশেষ করে বদ্ধ গৃহে -যেমন সুপার মল, বাস রেল বিমানবন্দর, বাস টার্মিনাল বা কোন পাবলিক হলে মাস্ক পড়া বাধ্যতা মূলক।খোলা জায়গায় যেখানে কোন জনসমাগম নেই, যেখানে শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখা সম্ভব সেখানে মাস্ক পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই। রাস্তায় জনসমাগম নেই বললেই চলে।আবাসিক এলাকার ঘর বাড়ি গুলোর সামনে সারি সারি গাড়ি দাঁড়ানো। কিন্তু সহজে মানুষ চোখে পড়ে না।বিকেলে হালকা পাতলা দু’চার জন মানুষ হয়ত দেখা যায় ঘরের সামনে। কেউ বা একাকী ওয়াক ওয়ে ধরে হেঁটে যায়। মুখোমুখি হলে ছোট্ট করে বলবে হাই! বাছ এতটুকু!
বিকেলে একা একা ঘুরে বেড়াতে দারুণ ভালো লাগে। নিরব নিস্তব্ধ প্রান্তর! মনের মাঝে একান্তে হারিয়ে যেতে পারে যে কেউ। হাঁটতে হাঁটতে গুণ গুণ করে গানের কলি আওড়ড়ালেই বা ক্ষতি কি? পার্কের এক কোনায় ছোট্ট একটি এক্সক্লুসিভ জোন আছে কুকুর এর জন্য। যারা কুকুর নিয়ে হাঁটতে বের হয় তারা কুকুর গুলো কে এখানে ছেড়ে দেয়।তারা-ও সঙ্গী সাথীদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করে একটু শরীর চাঙা করে এবং বদ্ধ গৃহকোণে বন্দী জীবনের একঘেয়েমি দুর করে। আমাদের দেশে শিশুদের জন্য কোন পর্যাপ্ত খোলা জায়গা নেই আর ওরা কুকুরের জন্য ও পার্ক তৈরি করেছে!
ক্রিকভিলেজ এখনো নতুন একটি আবাসিক এলাকা। সবেমাত্র আবাসন গড়ে উঠেছে। এখনো তেমন গাছপালা জন্মে নি । বাড়ি গুলোর সামনে পেছনে সবুজ ঘাসের কার্পেট অধিকাংশ বাড়িতে লাগানো হয়নি । ফেন্সিং ওয়াল বা ডিমার্কেসান ওয়াল ও তৈরি হয়নি । ধারণা করা হচ্ছে এই সামারে অধিকাংশ কাজ শেষ হবে। তবে পুরোপুরি সৌন্দর্য বিকশিত হতে হয়ত আগামী সামার পর্যন্ত সময় লাগবে।তবে দু’চার বছর না গেলে পুরোপুরি সবুজ আবাসিক এলাকার রূপ নেবে না। গত বছর যখন এসেছিলাম তখন ছিলাম ক্যাসেল ফ্রান্ক এলাায়। এলাকাটি ছিল বেশ পুরনো। তাই চারদিকে অনেক সবুজের সমারোহ ছিল। ছিল অনেক গুলো পার্ক এবং দৃষ্টি নন্দন সব বাড়িঘর। সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে ক্রিক ভিলেজের এক বা দুই দশক লাগবে। তখন এই নুতন আবাসন প্রকল্প একটা দৃষ্টি নন্দন রূপ নেবে। তবে এলাকাটার চারপাশে সবুজ বনবাদাড় থাকার কারণে সবুজের সমারোহ মুগ্ধ করবে যে কোন আগন্তুক কে। কারণ এই সৌন্দর্য্য একেবাড়ে প্রাকৃতিক। কোন রুক্ষতা চোখে পড়েনা।
আবাসিক এলাকা হবার কারণে এখানে কোন সুউচ্চ ভবনের চিহ্ন মাত্র নেই। ফলে দৃষ্টি বাধাগ্রস্ত হয়না কোথাও। অবারিত আকাশের বিস্তৃতি জনকোলাহলহীন নিস্তব্ধতা, সারি সারি গাড়ির নিঃশব্দ চলাচল অন্য একধরনের ভালো লাগার আবেশ জাগায়। রাস্তার পাস দিয়ে সমান্তরাল চলে যাওয়া মসৃণ ঝকঝকে তকতকে প্রসস্থ ওয়াক ওয়ে ধরে হেঁটে যাবার মজাই আলাদ।
তবে খুব বেশিদিন ভালো লাগবে কি এই নির্জনতা ও নিসর্গ ? শব্দ ও জনকোলাহলে অব্যস্হ মানুষ একদিন ঠিকই নিঃশব্দ নির্জনতার চাপে প্রান আনচান করবে শব্দ আর কোলাহলের সুরধ্বনি শুনতে। হয়তো মন হাহাকার করে উঠবে স্বদেশ স্বজনের সান্নিধ্যের প্রত্যাশায়। কথায় আছে না বন্যরা বনে সুন্দর!
ক্রিক ভিলেজ,অটোয়া।
১৫/৭/২০২১

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.