--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক শক্তিতে নাম্বার ওয়ান এখন চীন

0

কাজী আবুল মনসুর / সিরাজুর রহমান

ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিটিউট (এসআইপিআরআই) দেয়া প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছরে চীনের অস্ত্র রপ্তানির ৩৮% পাকিস্তানে, ১৭% বাংলাদেশে, ৮.২% আলজেরিয়ায় করেছে। আবার ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৪০টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে এবং ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই ৫ বছরে চীন ৫৩টি দেশে অস্ত্র রপ্তানি করেছে। তাছাড়া ২০১১ সাল থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের পাশাপাশি চীন বিশ্ব বাজারে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি কমব্যাট এণ্ড নন-কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি) রপ্তানি করে যাচ্ছে। চীন এ পর্যন্ত প্রায় ১৮টি দেশে ড্রোন রপ্তানি করেছে। চীনের ড্রোন ক্রয়ের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, মিশর, উজবেকিস্তান, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়াসহ বেশ কিছু দেশের নাম।

বিশ্বে সামরিক শক্তিতে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন। আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ওয়েবসাইট মিলিটারি ডাইরেক্টে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘বিশাল সামরিক বাজেট সত্ত্বেও ৭৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া, ৬১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে ভারত এবং ৫৮ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে রয়েছে ফ্রান্স। যুক্তরাজ্য শীর্ষ দশে স্থান পেলেও ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে তারা রয়েছে নবম স্থানে।’ সমীক্ষায় স্থান নির্ণায়ক ১০০ পয়েন্টের মধ্যে চীন পেয়েছে ৮২ পয়েন্ট।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে অবিশ্বাস্যভাবে ওঠে-পড়ে লেগেছে। চীনের বর্তমান শি জিং পিং সরকার মুলত এ লক্ষ্য অর্জনে নিজস্ব প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি এবং বিভিন্ন দেশের প্রযুক্তি হাতিয়ে নিয়ে এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ক্লোনকপি করার কাজে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় ও বিনিয়োগ করে যাচ্ছে। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার পর বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে চীন নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এদিকে তারা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বে সর্বোচ্চ অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অত্যন্ত পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে যাচ্ছে।

চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি ডিফেন্স সিস্টেম বা সামরিক সাজ সরঞ্জামের কথা আসলে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তা একেবারে নিম্ন মানের কিংবা অচল বলে অভিমত প্রকাশ করে থাকেন। যা বাস্তবে কিন্তু মোটেও সত্য নয়। অবশ্য চীনের ডিফেন্স সিস্টেমের মান এখনো পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। তবে রেড জায়ান্ট চীন অতি সাম্প্রতিক সময়ে তাদের সুবিশাল অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং তার পাশাপাশি নিজস্ব প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে বাস্তবে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যদিও চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের একটি বড় অংশ অন্য দেশ থেকে হাতিয়ে নেয়া প্রযুক্তি এবং ক্লোনকপির উপর নির্ভর করে দাঁড়িয়ে আছে।

চীনের শি জিং পিং সরকার ২০২১ সালে তাদের প্রতিরক্ষা ও সামরিক খাতে বাজেট বরাদ্দ করেছে ২০৯ বিলিয়ন ডলার এবং শুধুমাত্র নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন, ডিফেন্স সিস্টেম রিসার্চ এণ্ড ডেভলপমেন্টের জন্য আলাদা করে প্রায় ২৫-৩০ বিলিয়ন ডলার প্রতি বছর ব্যয় করে থাকে। যা কিনা বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর বিশ্বের বুকে সামরিক উন্নয়ন ও গবেষণায় সর্বোচ্চ একক ব্যয়কারী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে রেড জায়ান্ট চীন। এদিক দিয়ে ভারত তো দূরের কথা আপাতত রাশিয়ার পক্ষেও ডিফেন্স সিস্টেম গবেষণা ও উন্নয়নে চীনের মতো এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করার কোন আর্থিক সামর্থ্য রাখেনা। তাই কিছুটা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও চীনের তার নিজস্ব প্রযুক্তির ডিফেন্স সিস্টেম উন্নয়নে খুব দ্রুতই বিশ্ব মানের পর্যায়ে চলে যাচ্ছে অভিমত প্রকাশ করেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক গবেষক এবং বিশ্লেষকেরা।

তাছাড়া চীন মহাকাশ বিজ্ঞান এবং গবেষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছে বিগত মাত্র কয়েক বছরে। বর্তমানে বিশ্বের একক কোন দেশ হিসেবে মহাশুন্যে নিজস্ব ব্যয়বহুল স্পেস স্যাটালাইট স্টেশন স্থাপনের কাজ বেশ জোরেশোরেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি মঙ্গলগ্রহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাসার রোভার পার্সিভেন্সের পাশাপাশি বিশ্বের দ্বিতীয় কোন দেশ হিসেবে চীন তার নিজস্ব প্রযুক্তির রোভার পাঠিয়ে নিজের মতো করে গবেষণামুলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে মঙ্গলের মাটিতে। এমনকি চাঁদের উল্টো অন্ধকার পার্শ্বে মহাকাশ যানে করে রোভার নামিয়ে নতুন এক নজির সৃষ্টি করে চীন। যে কাজটি এখনো পর্যন্ত অন্য কোন দেশ করে দেখাতে পেরেছে বলে মনে হয় না।

বর্তমানে আন্তজার্তিক অস্ত্র রপ্তানি বানিজ্যে চীনের বৈপ্লবিক সাফল্য বেশ চোখে পড়ার মতো। আর বৈশ্বিক অস্ত্র রপ্তানি বানিজ্যে চীনের নব্য উত্থান এবং অংশগ্রহণ বিশ্বের প্রথম সারির অস্ত্র রপ্তানিকারক দেশ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও রাশিয়ার ভবিষ্যত অস্ত্র রপ্তানির বানিজ্যে একচেটিয়া প্রাধান্য নিশ্চিতভাবেই হুমকীর মুখে ফেলে দিতে পারে বলে আশাঙ্খা প্রকাশ করা হয়। যদিও বর্তমানে বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যের ৩৫% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ২৩% রাশিয়া এবং ২১% ইউরোপীয় দেশগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে চীনের অবদান মাত্র ৩%। এদিকে চীনের নিজস্ব উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত এক দশকে বিদেশ থেকে অস্ত্র আমদানি ১০% এর নিচে নেমে এসেছে।

চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অস্ত্রের বাজার মূল্য ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় যথেষ্ট সস্তা এবং অনেকটাই শর্তহীন হয়ে থাকে। তার পাশাপাশি এগুলো প্রযুক্তিগত কম জটিল সম্পন্ন এবং পরিচালনা অধিকতর সহজতর হওয়ার কারণে বিশ্বের অস্ত্র বাজারে চীনের প্রযুক্তি নির্ভর অস্ত্র ও সামরিক সাজ সরঞ্জামের চাহিদা ও সরবরাহ সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেই প্রতিয়মান হয়।

এদিকে স্টকহোম ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিটিউট দেয়া তথ্যমতে, চীন ২০১৯ সালে বিশ্ব বাজারে ১.৪৭২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছিল তবে করোনা মহামারির সংকটে মুখে ২০২০ সালে চীনের অস্ত্র রপ্তানি অনেকটাই কমে এসে ৭৬০ মিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। যদিও বাস্তবে ২০২০ সালে চীন প্রায় ২.০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছিল। তাছাড়া সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধরত মিলিশিয়া সংগঠন এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে ব্লাক মার্কেটিং এর মাধ্যমে মোট অস্ত্রের ৮০% পর্যন্ত সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে চীন এবং রাশিয়া। আর এই দেশ দুটি প্রতি বছর কি পরিমাণ অস্ত্র তাদের হাতে তুলে দেয় তার সঠিক কোন আর্থিক মূল্যের তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়। তবে অবৈধ পথে আর্মস ব্লাক মার্কেটিং এর বাজার মূল্য প্রায় ৩-৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে বলে ধারণা করা যায়।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.