--- বিজ্ঞাপন ---

বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী একটি যুদ্ধ ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ

0

আফগানিস্তান থেকেও হাত গুটিয়ে চলে গেলো আমেরিকা। অনেকটা ভিয়েতনাম যুদ্ধের মতো। একই কায়দায় মার্কিন বাহিনী ঢুকেছিল ভিয়েতনামে। শেষপর্যন্ত টিকতে পারেনি। ফলাফল ছিল খুব খারাপ। ভিয়েতনামিরা ১৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়ে যায়। ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়ে। প্যারিসে শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ সালের মধ্যে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে বেশ কিছু বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভিয়েতনামের পক্ষ থেকে জুয়ান থুই, লি ডাক থো এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার ফেব্রুয়ারি, ১৯৭০ থেকে শান্তি চুক্তির ব্যাপারে গোপনে আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছিলেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ জানুয়ারী প্যারিসে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে ৮০দিনের মধ্যে মার্কিন যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেয়া; যুদ্ধবিরতি; দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাধারণ নির্বাচন; দক্ষিণ ভিয়েতনামে মার্কিন সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং উত্তর ভিয়েতনামের সেনাদের দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থান অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৯৭৩ সালের ২৩ জানুয়ারি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও সময়ের প্রয়োজনে আলাপ-আলোচনা অব্যাহত থাকে। কিছু অঞ্চলে তখনও যুদ্ধ চলছিল।  একই বছরের ২৯ মার্চের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার করে। উত্তর ভিয়েতনামে বোমাবর্ষণ হতে থাকে। উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে। মে ও জুন, ১৯৭৩ সালে কিসিঞ্জার এবং থো শান্তি চুক্তির উত্তরণে প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। ১৩ জুন, ১৯৭৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর ভিয়েতনাম যৌথভাবে প্যারিস চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বাক্ষর করে।

১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনামি সরকারের পতন রোধকল্পে সেখানে সৈন্য পাঠায়, কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি। ১৯৭৫ সালে সাম্যবাদী শাসনের অধীনে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে এটি সরকারীভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র নাম ধারণ করে। ১৯৫৫ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৯ বছর ৫ মাস ব্যাপী চলা এই ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮ হাজারের অধিক সেনার মৃত্যুর পাশাপাশি প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি যুদ্ধবিমান, বোম্বার ইউএভি ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছিল। যার মধ্যে ৩,৭২০টি যুদ্ধবিমান ও বোম্বার, ৫,৬০৭টি হেলিকপ্টার এবং ৫৭৮টি ইউএভি যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রাস বা ধ্বংস হয়ে যায়।

যদিও ভিয়েতনাম যুদ্ধের দীর্ঘ সময় জুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোট ১১,৮৩৫টি হেলিকপ্টার মোতায়েন এবং মিশনে পাঠিয়েছিল। আর আর্থিক ক্ষতির মহিসেবটি সামনে আনলে যে কেউ চমকে যেতে পারে। তবে তৎকালীন সময়ে মার্কিন প্রশাসন কি পরিমাণ অর্থ ভিয়েতনাম যুদ্ধে ব্যয় করেছিল তার হিসাব কোন দিনই মিডিয়ার সামনে প্রকাশ করেনি। তবে মনে করা হয় দীর্ঘ ২০ বছর ব্যাপী ভিয়েতনাম যুদ্ধ পরিচালনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুমানিক ২,০০০ বিলিয়ন ডলার নির্বিচারে ব্যয় করে শুধুমাত্র মার্কিন বিরোধী শিবির সভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীনকে প্রতিহত করার জন্য। তৎকালীন সময়ের ভিয়েতনাম যুদ্ধে বিশ্বের প্রথম স্থানীয় সুপার পাওয়ার সভিয়েত ইউনিয়ন কিন্তু চীনকে সাথে নিয়ে বেশ ভালো ভাবেই মার্কিন শিবিরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল।

বিশেষ করে তৎকালীন সময়ে সভিয়েত ইউনিয়নের সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান মিগ-২১ দিয়ে প্রায় তিন শতাধিকের অধিক মার্কিন যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার আকাশেই ধ্বংস করে এক বিরল রেকর্ডের সৃষ্টি করে। তাছাড়া ল্যাণ্ড বেসড সারফেস টু এয়ার মিসাইল এবং এন্টি এয়ার ক্রাফট গান দিয়ে হাজার হাজার মার্কিন জোটের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার নজিরবিহীনভাবে ধ্বংস হতে থাকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর সামনেই। এদিকে মার্কিন মদদপুষ্ট রিপাবলিক অফ ভিয়েতনাম এই যুদ্ধে ১,০১৮টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার হারায়। আর সভিয়েত পক্ষের উত্তর ভিয়েতনামের মাত্র দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস হয়েছিল। যার অধিকাংশ সরবরাহ করেছিল সভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৭৫ সালে যুদ্ধ শেষে উত্তর ভিয়েতনাম বাহিনী নজিরবিহীনভাবে মার্কিন জোটের প্রায় ২৭৫০টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার দখল করে নেয়। অন্যদিকে মাত্র ৩০৮টি মার্কিন জোটের যুদ্ধবিমান ভিয়েতনাম থেকে পালাতে সক্ষম হয়। যার মধ্যে ২৪০টি থাইল্যাণ্ডে পালিয়ে যায় এবং মাত্র ৬৮টি যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার বিভিন্ন ক্যারিয়ারে করে ভিয়েতনাম থেকে পালিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যেতে সক্ষম হয়। তাছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধে মার্কিন শিবিরে রিপাবলিক অব ভিয়েতনামের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যাণ্ড, নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সীমিত পরিসরে হলেও অংশগ্রহণ করে। তাদের সম্মিলিতভাবে মোট প্রায় ১২,৫০০টি যুদ্ধবিমান, বোম্বার, হেলকপ্টার এবং ইউএভি ধ্বংস হয়। অবশ্য মার্কিন শিবিরের রিপাবলিক অব ভিয়েতনাম বাদে সকল দেশই এক রকম তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই এবং মার্কি যুক্তরাষ্টের চাপে এই ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাদ্ধ হয়েছিল বলে মনে করা হয়।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.