--- বিজ্ঞাপন ---

সামরিক দিক দিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখনও শক্তিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

0

বিশ্বের প্রথম সারির সুপার পাওয়ার দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। তবে মহাসাগরের বুকে ও অন্য দেশের মাটিতে সামরিক কিংবা বিমান ঘাঁটি স্থাপন ও ব্যবহারের দিক দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আশেপাশে কেউ নেই। বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা প্রায় আট শতাধিক মার্কিন সামরিক বাহিনীর বেস ক্যাম্প এরিয়া প্রায় ১৫,৬৫৪ বর্গ মাইল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে রয়েছে। যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি, ম্যাসাচুসেট এবং নিউ জার্সিকে একত্র করলেও তার চেয়ে অনেক বড় হবে সম্মিলিত এই বেইস ক্যাম্প এরিয়া।

মোট কথা রাশিয়া এবং চীনকে কৌশলগতভাবে প্রতিহত করার জন্য সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা মোট বৈদেশিক সামরিক ঘাঁটির ৮০ শতাংশ একাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সামরিক বাহিনী। আর এই বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের খেলায় মেতে উঠে এসব সামরিক ঘাঁটি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় দেশটি বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার নির্বিচারে ব্যয় করে যাচ্ছে। অথচ এ সংক্রান্ত প্রকৃত ব্যয় এবং এর মূল উদ্দেশ্য দেশটির প্রশাসন কখনই জন সম্মুখে প্রকাশ করে না। অথচ কিনা এই ব্যয়ভারের শতভাগ বহন করতে হচ্ছে মার্কিন সাধারণ জনগণকে আর ফায়দা লুটে নিচ্ছে কিছু সংখ্যক অতি প্রভাবশালী অস্ত্র উৎপাদনকারী জায়ান্ট কোম্পানিগুলো।

এদিকে বিশ্বের এক নম্বর বৈদেশিক ঋনগ্রস্থ দেশ হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আত্মপ্রকাশ করার পেছনে এহেন অপব্যয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের দেশটির জিডিপি ২২.৭৯ ট্রিলিয়ন ডলার দেখানো হলেও দেশটির মোট ঋনের পরিমাণ কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ২২ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। আর এই বিপুল পরিমাণ মার্কিন ঋনের মধ্যে ৭.৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বিশাল আকারের বৈদেশিক ঋনের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ জনগণকে।

মার্কিন মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালের হিসেব অনুযায়ী মাথাপিছু আমারিকার নাগরিককের কাঁধে ঋণ ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৭২৬ ডলার এবং তা কিনা ২০২১ সালে এসে ২ লক্ষ ৩০ হাজার ডলারের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরণের আর্থিক কৌশলের পাশাপাশি আমেরিকার মুদ্রা ডলার আন্তর্জাতিক মুদ্রা হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হওয়ায় সুযোগে দেশটি বার বার বেল আউট এবং ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখ থেকে বেঁচে যাচ্ছে। অথচ বিশ্ব শান্তির নামে ২০২১ সালের অর্থবছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন বাইডেন প্রশাসন সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাত পরিচালনা ও উন্নয়নে নজিরবিহীনভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণে ৭৫৩.৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেট বরাদ্দ দিয়েছে এবং আবারো ঘুরে ফিরে এই বাজেটের একটি বড় অংশ চলে যাবে দেশটির সেই অস্ত্র উৎপাদনকারী জায়ান্ট কর্পোরেশনগুলোর পকেটে। আর এভাবে দেশটির মাত্র ৫% উচ্চ শ্রেণির লোক মোট ৯০% সম্পদের মালিক হয়ে বসে আছে।

নিজ দেশের অর্থনীতি বৈদেশিক ঋনের দায়ে জর্জরিত হলেও ইসরাইলের মতো কিছু পরাগাছা আকারের দেশ মার্কিন জনগণের ট্যাক্সের টাকা খেয়ে দিব্যি আরামে সময় পার করে দিচ্ছে। বর্তমানে ইসরাইল মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে বার্ষিক ৩.৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক অনুদান বা সহায়তা পায়। তার পাশাপাশি ইসরাইল তার শক্তিশালী মার্কিন ইহুদী লবিং কে কাজে লাগিয়ে আরো প্রায় ৫ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ মানবিক ও সামাজিক উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ভাবে পেয়ে থাকে। তাছাড়া অস্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথম অগ্রধিকারের ভিত্তিতে ইসরাইল সব সময় ৪০% থেকে ৫০% পর্যন্ত ছাড় বা বিশেষ আর্থিক সহায়তা পেয়ে থাকে আমেরিকার তরফে। এমনকি মার্কিন লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন ৮ দেশের সাথে যৌথভাবে এফ-৩৫ স্টেলথ জেট ফাইটার তৈরি করলেও এর প্রথম ব্যবহারকারী এবং সুবিধাভোগী দেশ হচ্ছে ইসরাইল। আমেরিকা কিন্তু নিজে ব্যবহার করার আগেই ইসরাইলকে তার চাহিদা মতো কাস্টোমাইজড করে ৫০টি এফ-৩৫ এডভান্স জেট ফাইটার সরবরাহ করেছে অনেক আগেই। অথচ ইসরাইল কিন্তু এই প্রজেক্টে এক ডলারও বিনিয়োগ করেনি। আর এ থেকে কিন্তু আমেরিকার নির্বিচারে অর্থ অপচয়ের সুস্পষ্ট প্রমান পাওয়া যায়।

মার্কিন মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইরাক যুদ্ধ পরিচালনার জন্য আমেরিকা প্রায় ১২ হাজার কোটি ডলার খরচ করেছিল। আর এদিকে ২০০১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দুই দশকে সন্ত্রাস দমনের নামে আফগানিস্তানে প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বসে আছে। শেষমেশ কিনা আবার একেবারে শুন্য হাতে আফগান যুদ্ধে রণে ভঙ্গ দিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে এসেছে দেশটি। যদিও এসব যুদ্ধের খরচের একটি বড় অংশ মার্কিন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের নির্বোধ আমীর এবং বাদশা শাসিত দেশগুলোর কাছা থেকে বিভিন্ন কৌশলে চাঁদাবাজি এবং অস্ত্র বিক্রি করে আদায় করে নিয়েছে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে এটি একটি একেবারেই ভূল ধারণা। আসলে এই বিপুল পরিমাণ অপব্যয়ের অর্থ শেষমেষ সাধারণ মার্কিন জনগণের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে এই ব্যয়ভার মেটাতে হচ্ছে।

এমনকী ইরাক যুদ্ধে এক জন মার্কিন সেনার পিছনে বছরে যে অর্থ খরচ করা হয়, তাতে ৬০টি মার্কিন পরিবার বছরভর আরামে তাঁদের সংসার চালিয়ে নিতে পারত। আরেক তথ্যমতে, মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন ২০৩৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর আহত সেনার জন্য ৫৯ হাজার কোটি ডলার খরচ করবে বলে জানিয়েছিল। ২০০৮ সালে ইরাক যুদ্ধের জন্য পেন্টাগন প্রতি পাঁচ সেকেন্ডে যে অর্থ খরচ করেছিল, সেটা ছিল মার্কিন নাগরিকদের বার্ষিক গড় আয়ের সমান ছিল।

অন্যদিকে রেডিয়েশন এক্সপোজার কমপেনসেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী মার্কিন সরকার ১৯৯৮ সালে ২ হাজার ৭০০ জন রেডিয়েশন আক্রান্ত কর্মীদের দিয়েছিল ২২.৫০ মিলিয়ন ডলার করে। আবার ১৯৪০-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসন ৫.৮০ ট্রিলিয়ন ডলার পারমাণবিক অস্ত্র এবং স্ট্যাটিজিক মিসাইল ডেভলপমেন্টে ব্যয় করে। যদি এই অর্থ আমেরিকার প্রত্যেক নাগরিককে সমান করে ভাগ করে দেওয়া হয়, তা হলে জন প্রতি ২১ হাজার ডলার করে পেতেন।

আর সারা বছরব্যাপী পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে যুদ্ধ পরিচালনা এবং কৌগলগত প্রভাব বিস্তারের স্বার্থে এই বিপুল পরিমাণ অর্থের যোগান দিতে মার্কিন নাগরিকের আয়করের একটি বড় অংশ ব্যয় করা হয় সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাত ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়নে। বিশেষ করে আমেরিকানদের অহেতুক অতি মাত্রায় যুদ্ধ প্রিয়তা এবং সারা বিশ্বব্যাপী কথিত সন্ত্রাস দমন কিংবা শান্তির নামে আগ্রাসী কার্যকলাপ পরিচালনা করতে গিয়ে প্রতি বছর গড়ে ৭২০ বিলিয়ন ডলারের অধিক অর্থ নির্বিচারে ব্যয় করে যাচ্ছে। তাছাড়া সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৮ শতাধিক সামরিক ঘাঁটি এবং ইরাক, সিরিয়া এবং আফগানিস্তানের মতো দেশে দীর্ঘ মেয়াদী যুদ্ধ পরিচালনায় এর ব্যয়ভার চূড়ান্তভাবে বহন করতে হচ্ছে প্রতিটি সাধারণ মার্কিন জনগণকে। যদিও কৌশলগত কারণে রাশিয়া ও চিনকে প্রতিহত করতে গিয়ে এসব সামরিক ঘাঁটির ৭০ শতাংশ পর্যন্ত আদৌ কোন দরকার আছে কিনা তার কোন উপযুক্ত জবাব মার্কিন প্রশাসনের আছে বলে মনে হয় না।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.