--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্বে কার কতো নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র

0

১৯৯১ সালে তৎকালীন পরাক্রমশালী সভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে তাদের অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা ১০ হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বা অস্ত্রের একটি অংশ ইউক্রেন এবং কাজাখাস্থানের হাতে থেকে যায়। তবে সভিয়েত ইউনিয়নের এই পারমাণবিক অস্ত্রের ৮০% পর্যন্ত রাশিয়ার নিজ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তখন ইউক্রেনের অধিকারে মোট ১,৯০০টি নিউক্লিয়ার অস্ত্র ও ওয়ারহেড, ১৭৬টি ইন্টারকন্টিন্যান্টাল ব্যালেস্টিক মিসাইল এবং ৪৪টি স্ট্যাটিজিক বোম্বার বিমান ছিল। যা কিনা দেশটিকে সেই সময়ে বিশ্বের বুকে তৃতীয় সর্বোচ্চ কৌশলগত নিউক্লিয়ার অস্ত্রের অধিকারী দেশে পরিণত করেছিল। অবশ্য কাজাখাস্তানের কাছে খুব সম্ভবত ২৩০টি নিউক্লিয়ার অস্ত্র থেকে গেলেও তারা পরবর্তীতে সকল অস্ত্র ধ্বংস করে কিংবা রাশিয়ার হাতে তুলে দেয়।
তবে ১৯৯১ সালে সারা বিশ্বের দেশগুলোর অস্ত্র ভাণ্ডারে মজুত থাকা মোট নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্রের মধ্যে রাশিয়ার ৮,১০০টি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭,৮০০টি, ইউক্রেনের ১,৯০০টি, যুক্তরাজ্যের ১৫০টি, ফ্রান্সের ১৮০টি, চিনের ৮০টি, ইসরাইলের ৩০টি, ভারতের ১৫-২০টি। আরও আছে পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়ার কাছে।   তবে পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৭৯ সালে নিজের যোগ্যতায় পারমাণবিক প্রযুক্তি অর্জন করলেও ১৯৮৯ সালে স্বেচ্ছায় তাদের অস্ত্র ভাণ্ডারে থাকা ৬টি নিউক্লিয়ার অস্ত্র ধ্বংস করে দেয়।
ইউকিপিডিয়ার দেয়া এক আপডেট তথ্যমতে, ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ ৯টি দেশের কাছে মোট ১৩,১৩২টি নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র ও ওয়ারহেড মজুত রয়েছে। যার মধ্যে রাশিয়ার অস্ত্র ভাণ্ডারে মোট ৬,২৫৭টি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ৫,৫৫০টি, যুক্তরাজ্যের (ইউকে) কাছে ২২৫টি, ফ্রান্সের কাছে ২৯০টি, চিনের কাছে ৩৫০টি, ভারতের কাছে ১৬০টি, পাকিস্তানের কাছে ১৬৫টি, ইসরাইলের কাছে ৯০টি এবং উত্তর কোরিয়ার কাছে খুব সম্ভবত ৪৫টি স্বল্প ক্ষমতার পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে। যদিও বর্তমানে বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ দেশগুলোর কাছে প্রকৃত অস্ত্রের সংখ্যা আরো অনেক বেশি থাকতে পারে বলে আশাঙ্খা করা হয়।
তবে এটা ঠিক যে, নিউক্লিয়ার এণ্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্রের মজুত বর্তমানে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার হাতে না থেকে বিশ্বব্যাপী একাধিক দেশের হাতে স্বল্প পরিমানে হলেও ছড়িয়ে থাকার জন্য সারা বিশ্বে আপাতত এক রকম ভারসাম্যপূর্ণ সামরিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী চরম সংঘাত ও যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও, শুধুমাত্র একাধিক দেশের কাছে নিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকার জন্য বিশ্বে এখনো পর্যম্ত সাত দশকের মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো অতি ভয়ানক যুদ্ধ শুরু হচ্ছে না বা নিকট ভবিষ্যতেও হবে না বলে আশা করা যায়।
বর্তমানে সারা বিশ্বে যুদ্ধের নামে যা হচ্ছে, তা শুধু কৌশলগত প্রভাব বিস্তার, সামরিক ও পেশীশক্তি প্রদর্শন এবং কৌশলে নিজেদের অস্ত্র বানিজ্য চলিয়ে যাওয়া। যদি এখনো পর্যন্ত একমাত্র মার্কিনী বা রাশিয়ানদের হাতেই নিউক্লিয়ার অস্ত্র থাকত, তাহলে হয়ত নিশ্চিতভাবেই বিশ্বের আরো বেশকিছু শহর বা দেশকে হিরোশিমা বা নাগাসাকির মতো অতি ভয়ানক ও প্রাণঘাতী ধ্বংসাত্বক অবস্থা বরণ করতে হতো। তবে আশার কথা, বর্তমান বৈশ্বিক ভারসাম্যপূর্ণ সামরিক অবস্থার পেক্ষাপটে আপাতত ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধ বা বিশ্বযুদ্ধ লেগে যাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.