--- বিজ্ঞাপন ---

ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পাকিস্তানের পাশে সৌদিআরব

0

পাকিস্তানের চলমান ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি মোকাবেলায় আবারো নতুন করে ৪.২০ বিলিয়ন ডলারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা বা দীর্ঘ মেয়াদে ঋন প্রদান করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। মুলত একাধিক বৈশ্বিক ইস্যুতে তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের ইমরান সরকারের অতি মাত্রায় সংশ্লিষ্ঠতার অভিযোগে ২০২০ সালে পাকিস্তানকে পূর্বের দেয়া সকল আর্থিক সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। তবে কোন এক অদৃশ্য কারণে এবার সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে মোহাম্মদ বিন সালমান শাসিত সৌদি আরব প্রশাসন পাকিস্তানকে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে যাচ্ছে। গত ২৭ই অক্টোবর সৌদির আর্থিক সহায়তা বা ঋন প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী।
প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের ডলার রিজার্ভের ঘাটতি মোকাবেলায় আগামী মাসের মধ্যেই স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে ৩.০০ বিলিয়ন ডলার ডিপোজিট করবে সৌদি আরব এবং বাকী ১.২০ বিলিয়ন ডলার পর্যায়ক্রমে সৌদি আরব থেকে ধারে জ্বালানী তেল সরবরাহের মাধ্যমে সমন্বয় করা হবে।
এদিকে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের দেয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের জুনের শেষে পাকিস্তানের মোট বৈদেশিক ঋন এবং দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ১২২.৩ বিলিয়ন ডলারে। যেখানে ২০২০ সালের একই সময়ে দেশটির বৈদেশিক ঋনের স্থিতির পরিমাণ ছিল ১১৩ বিলিয়ন ডলার।
তাছাড়া ২০০৮ সাল থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋন এবং দেনার বোঝা অবিশ্বাস্যভাবে ১৫০% পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে যায়। যেখানে দেশটির ২০০৮ সালে বৈদেশিক ঋনের পরিমাণ ছিল ৪৫.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থ বছরে পাকিস্তানের ইমরান সরকার নতুন করে আরও ১৬.০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বৈদেশিক ঋন প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। যা তারা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফএ সহ চীন ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে নিতে পারবে বলে আশাবাদী।
পাকিস্তানের ইমরান সরকার ২০২১-২২ অর্থ বছরের নতুন বাজেটে মোট ৩,০৬০ বিলিয়ন রুপী কিংবা ১৯.৪৮ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছে শুধুমাত্র দেশটির অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋন ও দেনা পরিশোধ করার জন্য। সে হিসেবে তাদের মোট বাজেটের একটি বড় অংশ বা ৩৬.০৯% পর্যন্ত সরাসরি ব্যয় হয়ে যাবে শুধুমাত্র ঋনের আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করতে। এতে করে দেশটির সঞ্চিত বৈদেশিক মুদ্রার উপর মারাত্বক চাপ পড়তে বাধ্য। যার ফলে দেশটির শিল্পায়ন, দরিদ্র বিমোচন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নমুলক কর্মকাণ্ড চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে।
পাকিস্তান নতুন করে ২০২১-২২ অর্থ বছরে যে বৈদেশিক ঋন নিবে তার ৬০% পর্যন্ত সরাসরি ব্যয় করতে হবে আগে থেকে অন্য দেশ এবং সংস্থা থেকে নেয়া বৈদেশিক ঋনের আসল ও সুদ বাবদ পরিশোধ করতে। তার মানে পাকিস্তান বর্তমানে অন্য দেশে থেকে নেয়া পূর্বের ঋনের কিস্তি এবং এর সুদ বাবদ পরিশোধ করতে নতুন করতে আরেক দেশ বা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা থেকে নির্বিচারে এবং কঠিন শর্তের মুখে ঋন নিতে বাধ্য হচ্ছে। যা বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বৈদেশিক ঋন ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিপদজনক সতর্ক বার্তা দেখা হচ্ছে।
তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান তার চীরবৈরী ভারতের সাথে সামরিক শক্তিতে পাল্লা দিতে গিয়ে আধুনিক ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ক্রয় এবং তার পাশাপাশি অপরিকল্পিত একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পসহ চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) প্রকল্পে নির্বিচারে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের কারণে বর্তমানে পাকিস্তানের পাহাড় সমান বৈদেশিক ঋন ও দেনার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পাকিস্তানে মাথাপিছু বৈদেশিক ঋন ও দেনার পরিমাণ আনুমানিক ১ লক্ষ ৪৫ হাজার পাকিস্তানী রুপীর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
২০২০-২১ অর্থ বছরে পাকিস্তান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি থেকে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ডলার মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী বৈদেশিক ঋন নিয়েছে। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে পাকিস্তান মোট ১০.৫০ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে মোট ৮.৪০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋন নিয়েছিল।
স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের তথ্য অনুযায়ী চলতি ২০২১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১২৩ মিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়ে ২০.০২ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। তবে প্রকাশ থাকে যে, পাকিস্তানের এই রিজার্ভের ৬০% কিনা আবার বৈদেশিক ঋন ও আর্থিক সহায়তার উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। আর দেশটির বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋন ও দেনার বিবেচনায় ফরেন কারেন্সি রিজার্ভ কিন্তু মোটেও যথেষ্ঠ নয়।
যদিও অবশ্য ২০২০ সাল থেকে চলা করোনা মহামারির মধ্যেও পাকিস্তান তার জাতীয় রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা কিছুটা হলেও অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে পাকিস্তানের মোট পন্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৫.৩ বিলিয়ন ডলার এবং তা গত বছরের তুলনায় ১৮% বেশি। দেশটি ঠিক একই সময়ে বিদেশ থেকে পন্য আমদানি করে ৪২.৩ বিলিয়ন ডলার।
এদিকে ২০২০-২১ (এপ্রিল-মার্চ) অর্থ বছরে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৯০.১৮ বিলিয়ন ডলার এবং যা আগের অর্থ বছর অপেক্ষা ৭.৪% কম ছিল। যেখনে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ভারতের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩১৩.৩৬ বিলিয়ন ডলার। তবে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলতি ২০২১ সালের ১৫ই অক্টোবরে ৬৪১ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। যা কিনা দেশটির ইতিহাসে এটিকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী দেশটির বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ৫৭০ বিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.