--- বিজ্ঞাপন ---

তুরস্কের আকেনসি কমব্যাট ড্রোন আসলে কি?

0

তুরস্কের ড্রোন ম্যানিফ্যাকচারিং কোম্পানি বায়কার মাকিনার তৈরি বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনটি ২০২১ সালের ২৯শে আগস্ট প্রথম সার্ভিসে আসে। এটিকে একটি সিঙ্গেল ইঞ্জিন এডভান্স জেট ফাইটারের সমপর্যায়ের এরিয়াল সিস্টেমের মতো কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হতে যাচ্ছে বলে প্রতিয়মান হয়। মুলত বায়রাক্তার টিবি-২ কমব্যাট ড্রোনের উপর ভিত্তি করে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ড্রোনের প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তুরস্ক এবার আরো শক্তিশালী এবং উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর বায়রাক্তার আকেনসি ড্রোন বিশ্বের সামনে প্রকাশ করেছে।

২০০১ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে কমব্যাট ড্রোনের কার্যকর ব্যবহার বিশ্বের সামনে প্রকাশ পেলেও যুদ্ধক্ষেত্রে একেবারে এয়ার টু এয়ার মিসাইল ফায়ারের সক্ষমতা নিয়ে অতি সাম্প্রতিক সময়ে সার্ভিসে এসেছে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অত্যাধুনিক হেভি কমব্যাট ড্রোন আকেনসি। মুলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইসরাইল এবং চীন ড্রোন প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়ে গেলেও বিশ্বের প্রথম কোন দেশ হিসেবে আকাশে সরাসরি এয়ার টু এয়ার মিসাইল ফায়ারে শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং হেলিকপ্টার ধ্বংসের ব্যাপক ক্ষমতা নিয়ে মঞ্চে উঠে এসেছে তুরস্কের আকেনসি কমব্যাট ড্রোন।

তুরস্কের তৈরি বায়রাক্তার আকিঞ্চি হচ্ছে মুলত হাই অল্টিটিউট এণ্ড লং ইন্ডিউরেন্স কমব্যাট ড্রোন (ইউএভি)। যেটিকে মুলত আকাশের অত্যন্ত উচ্চতায় উড্ডয়নের পাশাপাশি দীর্ঘ সময় পর্যন্ত আকাশে তার কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে পারে। তাছাড়া এটি হতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ আকৃতির কমব্যাট ড্রোন। যা কিনা এয়ার লঞ্চড ক্রুজ মিসাইল বহন ও হামলার করতে সক্ষম এবং এমনকি এটি থেকে স্বল্প সক্ষমতা ও ওজনের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সমৃদ্ধ ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়েছে। এটি ২০১৯ সালের ৬ই ডিসেম্বর প্রথম পরীক্ষামুলক সফল উড্ডয়ন সম্পন্ন করে।

আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনের দৈর্ঘ্য ১২.৫ মিটার, দুই ডানার মাঝের দূরত্ব ২০ মিটার এবং উচ্চতা ৪.১০ মিটা্র। এর ম্যাক্সিমাম টেকঅফ ওয়েট ৫,৫০০ কেজি। এই ড্রোনে দুটি ইউক্রেনের ইভশেঙ্কো প্রগ্রেসের তৈরি ৭৫০ হর্স পাওয়ারের এআই-৪৫০টি টার্বোপ্রোপ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে। যা ড্রোনটিকে ভূমি থেকে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ হাজার ফিট উচ্চতায় সর্বোচ্চ ১৩০ থেকে ১৯৫ নটিক্যাল মাইল বা ৩৬১.১৪ কিলোমিটার বেগে উড়ার ব্যাপক সক্ষমতা প্রদান করে। এটি একবার জ্বালানী নিয়ে আকাশে একটানা ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত কমব্যাট মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম। আর বর্তমানে ড্রোন প্রযুক্তির বিচারে আকিঞ্চির ৩৬১.১৪ কিলোমিটার গতিকে অনেকটাই বেশি গতি সম্পন্ন এরিয়াল সিস্টেম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এভিয়নিক্স সিস্টেম হিসেবে বায়রাক্তার আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনে নিজস্ব দেশীয় প্রযুক্তির (এইএসএ) রাডার, ইলেকট্রনিক্স সাপোর্ট পড এবং সাইট এণ্ড স্যাটালাইট কমিউনিকেশন সিস্টেম, এসানসাল কমন এপারচার টার্গেটিং সিস্টেম এবং ইলেকট্রনিক্স ওয়ারফার সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে।

আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনের ৬টি হার্ড পয়েন্টে ১,৩৫০ কেজি পর্যন্ত মিসাইল, গাইডেড এণ্ড আনগাইডেড বম্বস বহন করতে সক্ষম। তাছাড়া ক্রুজ মিসাইল বহন করার পাশাপাশি এয়ার টু এয়ার মিসাইল হীটে আকাশেই শত্রু পক্ষের যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার ধ্বংস করার সক্ষমতা তুরস্কের এই কমব্যাট ড্রোনটিকে বিশ্বের বুকে একটি শ্রেষ্ঠ কমব্যাট ড্রোনের স্থানে নিয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। এই ড্রোনটিতে তুরস্কের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি এমএএম-এল, এমএএম-সি, জাভেলিন, এল-ইউএমটিএএস, বোজক, এমকে-৮১, এমকে-৮২, এমকে-৮৩, উইংড গাইডেন্স কিট (ইউপিএস) এমকে-৮২ ডিভাইসের পাশাপাশি গুলুকান, বোজডোয়ান এবং এসওএম-এ স্ট্যাণ্ড অ ক্রুজ মিসাইল (এয়ার লাউঞ্চ ক্রুজ মিসাইল) দ্বারা সজ্জিত করা হবে। তাছাড়া রকেটসানের তৈরি (এল-ইউএমটিএএস) এন্টি ট্যাংক মিসাইল এটিতে ইনস্টল করা হবে। তুরস্কের এসওএম এয়ার লাউঞ্চ ক্রুজ মিসাইল নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বহণ করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হলেও তুরস্ক কিন্তু এখনো পর্যন্ত নিজস্বভাবে নিউক্লিয়ার ওয়েপন্স টেকনোলজি অর্জন করতে সক্ষম হয় নি।

এই কমব্যাট ড্রোনটিকে পূর্বের টিবি-২ ড্রোনের মতোই এডভান্স অটোনোমাস কন্ট্রোলিং সিস্টেমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এটি রোবটের মতো নিজে নিজেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে টেকঅফ এবং ল্যাণ্ডিং করার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তাছাড়া ড্রোনটির রানওয়ে বা বেইস নির্দিষ্ট করা থাকে এবং আগে থেকেই এটির ভৌগলিক অবস্থান ড্রোনটির সফটওয়ার প্রোগ্রামে ইনস্টল থাকে৷ তাই আপদকালীন মুহুর্তে কমাণ্ড সেন্টারের সাথে ড্রোনটির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, সেক্ষেত্রে ড্রোনটি তার স্যাটালাইট নেটওয়ার্কিং সিস্টেম ও নিজস্ব জিপিএস সিস্টেম ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নির্ধারিত রানওয়ে বা ঘাঁটিতে ফিরে আসার উপযোগী করে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে।

আকিঞ্চি কমব্যাট ড্রোনের উৎপাদন খরচ বা আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য কত হতে পারে তার সঠিক কোন তথ্য প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ না করলেও মনে করা হয় এর আনুমানিক উৎপাদন ব্যয় খুব সম্ভবত ২০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.