--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকার কাছ থেকে লং রেঞ্জের আধুনিক এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনছে সৌদিআরব

0

সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে যে, সৌদি আরব প্রযুক্তিসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হাইলী এডভান্স ‘টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউট এরিয়া ডিফেন্স’ (টিএইচএএডি) লং রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেছে। তথ্যটি মোটামুটি সত্য। তবে প্রকাশ থাকে যে, ২০১৭-১৮ সালের দিকে সাবেক মার্কিন ট্রাম্প প্রশাসন সৌদি আরবের কাছে ১৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যে ‘টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউট এরিয়া ডিফেন্স’ (টিএইচএএডি) লং রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম বিক্রয়ের চুক্তি সম্পন্ন করে। আর চুক্তির আলোকে সৌদি আরবের কাছে পর্যায়ক্রমে ৪৪টি লঞ্চার, ৩৬০টি ইন্টারসেপ্টর মিসাইল এবং বেশকিছু ৭ এএন/টিপিওয়াই-২ সিরজের নতুন প্রজন্মের রাডার সিস্টেম তুলে দেয়া হবে। আর আন্তর্জাতিক ডিফেন্স রিলেটেড নিউজের কোন স্থানেই সৌদি আরবকে প্রযুক্তিসহ সরবরাহ করা হবে এমন তথ্য কোথাও দেয়া নেই।

তবে সেই ১৫ বিলিয়ন ডলারের সুবিশাল চুক্তির আলোকে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ ‘পেন্টাগন’ সাম্প্রতিক সময়ে লকহীড মার্টিন কর্পোরেশনকে এই ডিফেন্স সিস্টেম তৈরির প্রাথমিক প্রক্রিয়া বা প্রথম ধাপ শুরু করার জন্য ১.০০ বিলিয়ন ডলারের কন্ট্রাক দিয়েছে। যা পর্যায়ক্রমে কাজ শেষ করে ২০২৩ সালের দিকে প্রথম ব্যাচে কিছু সংখ্যক ‘টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউট এরিয়া ডিফেন্স’ (টিএইচএএডি) লং রেঞ্জের এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ইউনিট সৌদি সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর শুরু করা হবে। এক্ষেত্রে আমেরিকা সৌদি আরবের কাছে প্রযুক্তি সরবরাহ না করলেও ডিফেন্স সিস্টেমগুলো খোলা অবস্থায় সৌদিতে এনে কোন ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে এ্যাসেম্বলী করা হতে পারে।

‘টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা থাড (টিএইচএডি) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লকহিড মার্টিন করপোরেশনের তৈরি উচ্চ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একটি অত্যাধুনিক ও অত্যন্ত শক্তিশালী এন্ট্রি ব্যালেস্টিক মিসাইল ডিভেন্স সিস্টেম বা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা মুলত ৯০ এর দশকের ইরাক যুদ্ধে প্রেট্রিয়ট ক্ষেপনাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যাবস্থার প্রযুক্তিগত সফলতা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে অতি উচ্চতায় আক্রমনকারী শত্রু পক্ষের নিউক্লিয়ার বা থার্মো-নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডবাহী ব্যালেস্টিক মিসাইলকে কার্যকর ভাবে প্রতিহত বা ইন্টারসেপ্ট করার জন্য বিশেষ ভাবে ডিজাইন করা হয়েছে।

টিএইচএডি বা ‘টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স আসলে লং রেঞ্জ ভূমি ভিত্তিক ভ্রাম্যমান মিসাইল লাউঞ্চিং সিস্টেম যা মুলত ব্যালেস্টিক মিসাইলকে অতি উচ্চতায় এমনকি বায়ু মন্ডলের বাহিরে সরাসরি আঘাতের মাধ্যমে ধ্বংস বা প্রতিহত করতে সক্ষম। এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সাধারনত প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্রে নিদিষ্ট ক্ষমতার বিস্ফোরকবাহী ওয়ারহেড থাকলেও থাড কিন্তু এর সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম। অর্থ্যাত্ত্র থাড এ কোন ওয়ারহেড থাকে না বা নেই। থাড সাধারণত আগত ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্রকে লেট মিড কোর্স বা ফাইনাল স্টেজে ক্ষিপ্ত গতিতে সরাসরি আঘাতের মাধ্যমে অতি উচতায় এমনকি বায়ু মন্ডলের বাহিরে ধ্বংস বা প্রতিহত করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। আর সেই অর্থে থাড মিসাইলকে একটি বিশাল আকারের বুলেট বলা চলে।

আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৮ সাল থেকে ‘টার্মিনাল হাই অ্যাল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্স’ বা ‘থাড’ এর উতপাদন এবং কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও গোপনীয় স্থানে মোতায়েন করতে থাকে। থাড মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের প্রতিটি ক্ষেপনাস্ত্রের ওজন ৯০০ কেজি এবং এর দৈর্ঘ্য ৬.১৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ব্যাস ৩৪ সেন্টিমিটার। এছাড়া থাড এর ক্ষেপনাস্ত্র ৮.২৪ ম্যাক গতিতে অতি উচ্চতায় ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে যে কোন ব্যালেস্টিক ক্ষেপনাস্ত্র ইন্টারসেপ্ট বা প্রতিহত করতে সক্ষম। এদিকে থাড ডিফেন্স সিস্টেমের রাডার ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে ১০০ টি টার্গেট সনাক্ত করার পাশাপাশি একই সাথে যুগতপতভাবে ডজন খানেক আক্রমন সরাসরি প্রতিহত করতে সক্ষম। আবার থাড মিসাইল ইনফ্রায়েড সীকার হেড সিস্টেমের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ব্যালেস্টিক মিসাইল সনাক্ত করে তা ধ্বংস করতে পারে বলে মনে করা হয়।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.