--- বিজ্ঞাপন ---

ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান, করোনাকালে কার কেমন অর্থনৈতিক অবস্থা

0

করোনায় বিপর্যস্ত সারা বিশ্বের অর্থনীতি। প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত। শ্রীলঙ্কাসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। সে তুলনায় ভালো আছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের অর্থনীতির আসলে কি অবস্থা? করোনায় এসব দেশের রির্জাভে কি টান পড়েছে। এমনতর অনেক প্রশ্ন ঘুরে ফিরছে বিভিন্ন মহলে।

২০২০ সালের শুরু থেকে করোনা মহামারির ধাক্কায় ভারতের জাতীয় অর্থনীতি এবং বিশেষ করে বৈশ্বিক রপ্তানি খাত মারাত্মক ভাবে বিপর্যস্ত হলেও ২০২১ সালের শুরু থেকেই দেশটির সার্বিক বৈদেশিক বানিজ্য এবং রপ্তানি খাত অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ভারতের বৈশ্বিক রপ্তানি বিষয়ক এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১২ মাসে ভারত ৩৮৯.৫৫ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। যেখনে শুধু ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত ৩৭.২৯ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। অবশ্য গত ২০২০ সালে ভারতের মোট পন্য রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩২৩ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে ২০২০-২১ (১ এপ্রিল/২০২০ থেকে ৩১শে মার্চ/২০২১ পর্যন্ত) ভারত মোট ৩৯৪.৪৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্ব থেকে আমদানি করে এবং ঠিক একই সময়ে ২৯১.৮০ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। তাছাড়া চীনের জেনারেল এডমিনিস্ট্রেশন অফ কাস্টমস (জিএসি) এর দেয়া তথ্যমতে, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মোট ১১ মাসে চীন-ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য হয়েছে ১১৪.২৬৩ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা গত ২০২০ সালের ঠিক একই সময় থেকে ৪৬.৪% বেশি। ভারত ২০২১ সালের প্রথম ১১ মাসে চীনে মোট পন্য রপ্তানি করে ২৬.৩৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং যা কিনা গত ২০২০ সাল অপেক্ষা ৩৮.৫% বেশি ছিল। এদিকে চীন কিন্তু একাই ভারতে মোট পন্য রপ্তানি করেছে ৮৭.৯০৫ বিলিয়ন ডলার এবং যা কিনা ২০২০ সাল থেকে ৪৯% বেশি ছিল।

২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশটির ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়ে ৬৩৩.৮৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। যদিও অবশ্য ভারতের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমান ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে প্রায় ৫৯৩.১ বিলিয়ন ডলার ছিল। যেখানে ২০২১ সালের জুন মাসে ভারতের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ৫৭১.৩ বিলিয়ন ডলার। তবে এক্ষেত্রে প্রকৃত হিসাব কিছুটা কম বা বেশি হতে পারে। আবার বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আয় অর্জনকারী দেশ হিসেবে ২০২১ সালে ভারতের প্রবাসী কর্মীরা ৮৭ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই/২১ থেকে ডিসেম্বর/২১) মোট রপ্তানি আয় অর্জন করে ২৪.৬৯ বিলিয়ন ডলার। যা কিনা পাকিস্তানের এক বছরের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় সমান এবং দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জনকারী দেশ বাংলাদেশ। তাছাড়া বাংলাদেশ গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সারা বিশ্বে ৩৮.৭৫ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করে সারা বিশ্বে। তবে করোনা আপদকালীন পরবর্তী সময়ে ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ প্রথম বারের মতো ৫২ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করতে পারে বলে আশাবাদী। অবশ্য ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ সারা বিশ্ব থেকে রেকর্ড পরিমাণে মোট ৬০.৬৮ বিলিয়ন ডলারের পন্য আমদানি করেছে।

২০২১ সালের নভেম্বর মাস শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির পরিমাণ ছিল ৪৪.৮৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের জুন মাসের হিসেব অনুযায়ী বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ ছিল ৪৯ বিলিয়ন ডলার। এদিকে বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী প্রবাসী কর্মীরা ২০২১ সালে দেশে সর্বোচ্চ ২২.০৭ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন।

গত ২০২১ সালে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে পাকিস্তান মোট রপ্তানি আয় অর্জন করেছে মাত্র ১২.৭ বিলিয়ন ডলার। যেখানে দেশটি ২০২১ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় করে ২৫.৬৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে মোট রপ্তানি আয় করে ২৩.৮২ বিলিয়ন ডলার। আর এই রপ্তানির বিপরীতে ২০২১ অর্থবছরে পাকিস্তান মোট ৫৬ বিলিয়ন ডলারের পন্য বিদেশ থেকে আমদানি করে। তাছাড়া ২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বরের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্থানের কাছে ১৭.৬৯ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল। যদিও ২০২১ সালে পাকিস্তান ২৯.৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে রেমিট্যান্স খাত থেকে।

এদিকে চীনের কথিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের নামে ঋনের ফাঁদে পা দিয়ে পাকিস্তান আজ বৈদেশিক ঋন ও দেনার মহাসাগরে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ১২০ বিলিয়ন ডলারে কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। দেশটি শুধু ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট ১৫.৩২ বিলিয়ন ডলার বিভিন্ন উৎস থেকে বৈদেশিক ঋন নেয়। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি ১০.৪৫ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋন নিয়েছিল।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.