--- বিজ্ঞাপন ---

পশ্চিমা দেশগুলোর আদলে গড়া রাশিয়ার যুদ্ধবিমান তৈরির কোম্পানি ‘মিকোয়ান এণ্ড গ্রুভিচ’

0

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে যুদ্ধবিমান এবং হেভি স্ট্যাটিজিক বোম্বার সার্ভিসে আনতে থাকে সভিয়েত ইউনিয়ন। পশ্চিমা শিবিরকে টেক্কা দিতেই সভিয়েত ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠা করে এভিয়েশন জায়ান্ট মিকোয়ান এণ্ড গ্রুভিচ কোম্পানি। সেই আমলে বিশ্বের অন্যতম সেরা মিগ সিরিজের যুদ্ধবিমান প্রস্তুতকারী কোম্পানি মিকোয়ান এণ্ড গ্রুভিচ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে ১৯৩৯ সালের ৮ই ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করা হয়। মিকোয়ান এণ্ড গ্রুভিচ কোম্পানি তাদের প্রথম একেবারে হালকা যুদ্ধবিমান হিসেবে মিগ-১ সার্ভিসে আনে ১৯৪০ সালে।
সেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চলাকালীন সময় ১৯৪০ সাল থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ১৫টি সিরিজের জেট ফাইটার, লাইট বোম্বার এবং ইন্টারসেপ্টর যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে মিগ কর্পোরেশন। মিগ-১, মিগ-৩, মিগ-৯, মিগ-১৫, মিগ-১৭, মিগ-১৯, মিগ-২১, মিগ-২৩ মিগ-২৫, মিগ-৩১, মিগ-২৭, মিগ-২৯, মিগ-২৯এম, মিগ-২৯কে (ক্যারিয়ার বেসড ফুলক্রাম এয়ারক্রাফট) এবং সর্বশেষ মিগ-৩৫ ফুলক্রাম-এফ।
তবে মিগ সিরিজের সকল যুদ্ধবিমানের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং অত্যন্ত শক্তিশালী ইন্টারসেপ্টর যুদ্ধবিমান হিসেবে মিগ-৩১ ফক্সহাউণ্ড কে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়। এর ন্যাটো রিপোর্টেড কোড নেম হচ্ছে ফক্সহাউণ্ড। এটি প্রথম ১৯৮১ সাল সার্ভিসে আসে এবং ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৫ শতাধিক মিগ-৩১ ইন্টারসেপ্টর এয়ারক্রাফট তৈরি করেছে মিকোয়ান কোম্পানি। এর ম্যাক্সিমাম গতি ২.৮৩ ম্যাক বা প্রতি ঘন্টায় ৩ হাজার কিলোমিটার এবং এটি অবিশ্বাস্যভাবে আকাশে সর্বোচ্চ ৮২ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়ন করতে সক্ষম। যা কিনা ট্যার্বোফ্যান জেট ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমানের একটি বিরল রেকর্ড হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মিগ কর্পোরেশন ১৯৪০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৮২ বছরে অবিশ্বাস্যভাবে মোট প্রায় ৫৬,000টি যুদ্ধবিমান (জেট ফাইটারর এবং ইন্টারসেপ্টর) উৎপাদন করে সভিয়েত ইউনিয়ন এবং বর্তমানে রাশিয়া নিজে ব্যবহার করে এবং সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। তবে একক যুদ্ধবিমান হিসেবে সবচেয়ে বেশি মিগ-১৫ যুদ্ধবিমান তৈরি করে মিকোয়ান গ্রুভিচ। যার মোট পরিমাণ কিনা ১৭,৩১০টি এবং সভিয়েত ইউনিয়ন থেকে লাইসেন্স নিয়ে চীনসহ বিশ্বের বেশিছু দেশ ৪,১৮০টি এই জাতীয় যুদ্ধবিমান তৈরি করে।
সভিয়েত ইউনিয়ন ভিত্তিক মিকোয়ান গ্রুএভিচ এভিয়েশন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত মোট সমকালীন বিশ্বের সেরা এবং সুপারসনিক গতির মিগ-২১ যুদ্ধবিমান তৈরি করে মোট ১১,৪৯৬টি। যদিও এর মধ্যে সভিয়েত ইউনিয়ন নিজে তৈরি কয়রে ১০,৬৪৫টি এবং লাইসেন্স নিয়ে ভারতে ৮৪০টি এবং চেকোস্লোভাকিয়ায় তৈরি করা হয় ১৯৪টি মিগ-২১ সিরিজের যুদ্ধবিমান। যদিও চীন লাইসেন্স নিয়ে ২০১৩ সাল পর্যন্ত মিগ-২১ এর চাইনিজ কপি চেংদু জে/এফ-৭ তৈরি করে মোট প্রায় ২,৪০০টির অধিক।
ষাট ও সত্তর ও আশির দশক পর্যন্ত মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের প্রায় তিন শতাধিক অন্যান্য যুদ্ধবিমান, বোম্বার এবং হেলিকপ্টার আকাশেই শুট ডাউন বা ধ্বংস করার এক বিরল রেকর্ড রয়েছে। যদিও বর্তমানে ব্যাপক ক্রাসিং রিপোর্টের কারণে মিগ-২১ কে ফ্লাইং কফিন ফাইটার জেট হিসেবে ডাকা হয়। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ১৯৭২ সালের ২৭শে ডিসেম্বরের রাতে উত্তর ভিয়েতনাম বিমান বাহিনীর একটি মিগ-২১ এমএফ (সিরিয়াল নং ৫১২১) যুদ্ধবিমান আমেরিকার একটি বি-৫২ডি (Stratofortress) হেভি বোম্বারকে অবিশ্বাস্যভাবে আকাশেই ধ্বংস করে দিয়ে ব্যাপক হইচই ফেলে দেয়। মুলত উত্তর ভিয়েতনাম বিমান বাহিনীর সেই মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের পাইলট ছিলেন ফাম তুয়ান। মিগ-২১ এমএফ যুদ্ধবিমানের ক্যানন দিয়ে বি-৫২ডি বোম্বারের ইঞ্জিনে ফায়ার করে বিমানের চারটি ইঞ্জিনের মধ্যে তিনটি ইঞ্জিন অচল করে দিলে এতেই বিমানটি আকাশেই ধ্বংস হয়ে যায়। যদিও বি-৫২ডি (Stratofortress) হেভি বোম্বার বিমানে থাকা ১৩ জন ক্রু, পাইলট ও অফিসারের সকলেই দূঃখজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন।
অথচ বিশ্ব বিখ্যাত মিগ কোম্পনির আগের গৌরব ও ইমেজ বর্তমানে অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। বিগত কয়েক বছরে একটি নতুন তৈরি কোন মিগ সিরিজের যুদ্ধবিমান বিক্রি বা রপ্তানি করতে পারেনি অন্য কোন দেশে। এমনকি মিগ সিরিজের সর্বশেষ অত্যাধুনিক ভার্সন মিগ-৩৫ এর সীমিত প্রডাকশন লাইন চালু করার পাশাপাশি মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচারণা চালালেও তাতে বিশ্বের কোন দেশই এ পর্যন্ত সারা দেয়নি।
রাশিয়া আসলে মিগ-৩৫ (ফুলক্রাম-এফ) সিরিজের যুদ্ধবিমানটিকে পূর্বের মিগ-২৯এম/এম২ এবং মিগ-২৯কে/কেউইবি প্রযুক্তির উপর ভিত্তি কয়রে একটি উন্নত মানের আধুনিক সংস্করন হিসেবে সার্ভিসে এনেছে। এ পর্যন্ত মিগ-৩৫ (ফুলক্রাম-এফ) জেট ফাইটারের ২টি প্রটোটাইপ কপি এবং ৬টি সিরিয়াল প্রডাকশন কপি তৈরি করেছে মিকোয়ান গ্রুভিচ কোম্পানি। মিগ-৩৫ অনেকটাই ৮০ দশকের মিগ-২৯ এর গতানুগতিক টাইপের হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে তার পূর্বের শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারছে না রাশিয়ান মিকোয়ান এণ্ড গ্রুভিচ এভিয়েশন কর্পোরেশন।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.