--- বিজ্ঞাপন ---

এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধের মুখে ইউক্রেন

0

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট অ্যালেক্সান্দ্রো লুকাশেঙ্কোর তত্ত্বাবধানে অতি সাম্প্রতিক সময়ে কৌশলগত ও পারমাণবিক অনুশীলন চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এই স্পর্শকাতর সামরিক মহড়ায় রাশিয়ার সামরিক বাহিনী তাদের হাতে থাকা একেবারে নতুন প্রজন্মের এয়ার লাউঞ্চড বেসড হাইপারসনিক কিঞ্জাল এবং সিরকন ক্রুজ মিসাইলের বেশকিছু সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। আর রুশ সেনাদের এই সামরিক অনুশীলনের সরাসরি তদারকিতেও ছিলেন নাকি দেশটির প্রেসিডেন্ট পুতিন। ভয়ঙ্কর এই হাইপারসনিক মিসাইল পরীক্ষায় পশ্চিমা বিশ্বে এখন এক রকম চাপা উত্তেজনা ও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো প্রবল আশাঙ্কা প্রকাশ করেছে, যে কোন মুহুর্তে ও অজুহাতে ইউক্রেনে ভয়াবহ সামরিক অভিযান শুরু করে দিতে পারে রাশিয়া। আবার পশ্চিমা বিশ্বের মিডিয়া ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়ার চলমান এই সামরিক মহড়া ও কার্যকলাপকে বড় ধরণের যুদ্ধের উস্কানী বা অনেকটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর ইঙ্গিত হিসেবে ব্যাপকভাবে প্রচার করে যাচ্ছে। তাদের মতে, রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেন সীমান্ত জুড়ে প্রায় ২ লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করেছে এবং পূর্ব ইউক্রেনের ডানবাস ও অন্যান্য রুশ জাতিগোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলে সামরিক মিলিশিয়াদের হাতে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র তুলে দিয়েছে।

বিভিন্ন মিডিয়ার দেয়া তথ্যমতে, অত্র এলাকায় এখন ইউক্রেন সেনাবাহিনীর সাথে এক রকম ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে রুশ বিদ্রোহীদের সাথে। তাছাড়া উক্রেনের ডানবাস অঞ্চলে গত শনিবার রাতে থেকেই উভয় পক্ষের মধ্যে ভারি কামান ও মর্টারের গোলাবর্ষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই ভারী গোলাবর্ষণের কারণে অত্র অঞ্চলে বড় ধরণের যুদ্ধে রাশিয়া সরাসরি জড়িয়ে যেতে পারে বলে প্রবল আশাঙ্কা প্রকাশ করেছে আমেরিকা ও তার পশ্চিমা ইউরোপী ন্যাটো জোটের দেশগুলো। বর্তমানে ইউক্রেনকে ঘিরে রাশিয়ার ব্যাপক সেনা মোতায়েনের জেরে ইউরোপে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা দেশগুলো দাবি করে যে, ইউক্রেনে হামলা চালাতেই রাশিয়ার বড় ধরণের এই সামরিক তৎপরতা চালাচ্ছে পূর্ব ইউক্রেন সীমান্ত জুড়ে। তবে প্রথম থেকেই বার বার এসব দাবি নাকচ করে যাচ্ছে মস্কো।

যদিও চরম মাত্রায় যুদ্ধবাজ ও কূটকৌশলী আমেরিকা বিষয়টিকে এমন ভাবে উপস্থাপন করছে যেন, রাশিয়া এখনই ইউক্রেনে ভয়াবহ সামরিক আগ্রাসন শুরু হয়ে যাবে। এ নিয়ে রাশিয়ার তরফে তেমন গভীর উৎকণ্ঠা দেখা না গেলেও আমেরিকার ও তার পশ্চিমা বিশ্বের প্রপাগাণ্ডা মিডিয়া মেশিনে ব্যাপক হইচই শুরু হয়ে গেছে অনেক আগেই।

এদিকে রাশিয়া যে কোনো মুহূর্তে ইউক্রেনে ভয়াবহ সামরিক আগ্রাসন শুরু করতে পারে বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা বারবার যে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছে তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে ইউক্রেন এবং জার্মানি। মুলত গত ১৯শে ফেব্রুয়ারিতে শনিবার মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে দেয়া এক বক্তৃতায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ইউক্রেন সংকট নিয়ে অহেতুক যুদ্ধ-ভীতি তৈরি করার জন্য মার্কিন বাইডেন প্রশাসনের ব্যাপক সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা মনে করি না এই ধরনের অমুলক ও কৃত্রিম ভয়-ভীতি সৃষ্টির আদৌও কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

রাশিয়াকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলতে ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে অন্তভূক্ত করে আমেরিকা কিন্তু অনেক আগে থেকেই দেশটিতে সামরিক ঘাটি স্থাপনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে রাশিয়া কিন্তু পশ্চিমাদের এহেন অপ তৎপরতা কোন ভাবেই মেনে নিবে না। শুধু রাশিয়া কেন, বিশ্বের প্রথম সারির কোম শক্তিধর দেশই এটা মেনে নিবে না। তাছাড়া ৬০ এর দশকে কিউবাতে সভিয়েত ইউনিয়নের নিউক্লিয়ার মিসাইল মোতায়েন করা নিয়ে আমেরিকার সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। শেষমেশ সারা বিশ্বে ভয়াবহ পারমাণবিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার মতো ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার নগ্ন সামরিক আগ্রাসনকে ঘিরে ব্যাপক উত্তেজন এবং উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হলেও রাশিয়ার সামরিক বাহিনীকে সরাসরি মোকাবেলায় ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে অস্বীকার করেছে আমেরিকা এবং তার তার পশ্চিমা ন্যাটো জোটের দেশগুলো। তারা মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক না কেন যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে মোকাবেলা করার মতো শক্ত কোন অবস্থানে এ মুহুর্তে রয়েছে বলে মনে হয় না। তবে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক পরাশক্তি এবং অতি মাত্রয় যুদ্ধপ্রিয় দেশ আমেরিকা কিন্তু প্রকাশ্যে না বললেও মনে প্রাণে চায় রাশিয়া ইউক্রেনে সরাসরি আক্রমন করুক। আর পিছনে কিন্তু লুকিয়ে রয়েছে অতি ভয়ঙ্কর শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বানিজ্য এবং তার পাশাপাশি একক মাতব্বরি করার এক মহা সুযোগ। এখন আমেরিকা তো দূরের কথা রাশিয়ার পরমাণু ভবিষ্যতে যুদ্ধকে ঘিরে পরমাণু অস্ত্র হামলা চালিয়ে বসতে পারে এমন প্রবল আশাঙ্কায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স,জার্মান বা অন্য কোন দেশই এখন ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে অপারগত প্রকাশ করেছে। তাছাড়া ফ্রান্স ও জার্মান অনেক আগে থেকেই কিন্তু ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সাথে কোন ধরণের ঝামেলায় জড়াতে চায় না।

২০০৩ সালে ইরাক দখলের সময় আমেরিকা ও তার পশ্চিমা বিশ্বের প্রপাগাণ্ডা মিডিয়া মেশিন অপপ্রচার চালায় যে, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পরমাণু অস্ত্র তৈরির উপকরণ, রসায়নিক ও জীবানু অস্ত্রের সুবিশাল মজুত রয়েছে। অথচ ২০০৩ সালের দিকে সাদ্দামের অনুসারী হাজার হাজার আরব মিলিশিয়া ও সাধারণ জনগোষ্ঠী হত্যা করে ইরাক দখল করলে দেখা গেল যে, পরমাণু অস্ত্র তো দূরের কথা এক কেজিও রসায়নিক বা জীবাণু অস্ত্রের মজুত খুঁজে পাওয়া যায় নি। ঠিক একই ভাবে এবং মিথ্যা অজুহাতে ২০০১ সালে আফগানিস্থান দখল করে সুশাসন প্রতিষ্ঠার নামে দীর্ঘ ২০ বছর যুদ্ধ ও গণহত্যা চালিয়ে গেছে আমেরিকা ও তার নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্বের ন্যাটো জোট।

রাশিয়া তার পার্শ্ববর্তী দেশ বা অন্য দেশে নগ্ন হস্তক্ষেপ, গোপনে ষড়যন্ত্র কিংবা মিথ্যা অপপ্রচারের দক্ষতায় আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়াও কম যায় না। রাশিয়া কিন্তু ঠিকই তার পার্শবর্তী প্রায় সকল দেশকেই পরমাণূ অস্ত্রের ভয় ও সামরিক আগ্রাসনের এক পরোক্ষ হুমকী দিয়ে হলেও নিজের আনুগত্য স্বীকারে বাধ্য করে রেখেছে। এখানে রাশিয়ার পার্শ্ববর্তী যে দেশই পশ্চিমা বিশ্বের সাথে অতি ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছে, তার সাথেই রাশিয়ার চরম দ্বন্দ বিরাজ করে। এক্ষেত্রে জর্জিয়া এবং ইউক্রেন একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

তাছাড়া ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর দিকে জার্মানির নাৎসি বাহিনীর হামলায় গোটা ইউরোপে অন্ধকার নেমে আসলে সেই সুযোগে সাবেক সভিয়েত ইউনিয়নের স্টালিন বাহিনী অত্যন্ত সুকৌশলে ফিনল্যাণ্ড দখল করতে প্রায় ৪ লক্ষ ৫০ হাজার সেনা পাঠিয়ে বড় ধরণের সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দেয়। যদিও ফিনল্যাণ্ড আগ্রাসনের স্বল্প মেয়াদী এই যুদ্ধে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার সেনা মৃত্যুবরণ করলে সভিয়েত ইউনিয়ন এই যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করে সামরিক অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হয়। যদিও ফিনল্যান্ড যুদ্ধের মাধ্যমে ইউরোপের গোটা স্কেনেভিয়া অঞ্চল দখল করে নিতে বড় ধরণের সামরিক অভিযান শুরুর মহা পরিকল্পনা প্রনয়ন করেছিল সাবেক সভিয়েত ইউনিয়ন তথা বর্তমান হালের রাশিয়া।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.