--- বিজ্ঞাপন ---

কোন পথে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ এবং দক্ষিণ এশিয়ার স্থিতিশীলতা?

0

মিয়ানমারে চলমান দীর্ঘ মেয়াদী গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের নিধনে সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ, অর্থ এবং লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম সুপার পাওয়ার রাশিয়া এবং চীন। তবে মিয়ানমারকে সামরিক সহায়তায় আমদের পার্শ্ববর্তী বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের নাম রয়েছে বেশ অনেক ওপরেই। তাছাড়া মুসলিম বিশ্বের পাকিস্তান এবং ইরান তাদের সাধ্য মতো ক্ষুদ্র অস্ত্র, যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে গোলাবারুদ নির্বিচারে সরবরাহ বা তুলে মিয়ানমারের স্বৈর সামরিক জান্তার হাতে। উত্তর কোরিয়াও মিয়ানমারের হাতে বিভিন্ন পাল্লার অতি বিপদজনক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে অনেক আগে থেকেই।

আগে অনেকটাই গোপনে বা কিছুটা রাখ ঢাক করে মিয়ানমারকে অস্ত্র দেয়া হলেও বর্তমানে রাশিয়া এবং চীনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখায় স্বার্থে এখন একেবারে প্রকাশ্যেই মিয়ানমারের হাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম তুলে দিচ্ছে ভারত, পাকিস্তান, উত্তর কোরিয়া এবং কথিত বিপ্লবী ইসলামী ইরানের মতো দেশগুলো। তাছাড়া চীন কিন্তু ঠিকই মিয়ানমার প্রশ্নে ডাবল গেম প্লে রোল করছে দীর্ঘ দিন থেকেই। একদিকে চীন প্রকাশ্যেই মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে, অন্যদিকে আবার মিয়ানমারে যুদ্ধরত বিদ্রোহী মিলিশিয়া গ্রুপদের কাছেও গোপনে অস্ত্র দিয়ে যাচ্ছে। চীন আসলে চায় মিয়ানমারের সম্পূর্ণ ধ্বংস।

যা হোক এখানে অতি উৎসাহী হয়ে মিয়ানমারের হাতে ভারতের অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেবার আসলে বাস্তব ও কৌশলগত কোন কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এক দিকে ভারত মুখে বলে তারা নাকি বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। আবার অন্যদিকে সেই দেশ আবার আমাদের স্বার্থ ক্ষুর্ণ করে হলেও মিয়ানমারের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে কার্যত ধূর্ত শিয়াল পণ্ডিত সেজে বসে আছে।

এখনে প্রকাশ থাকে যে, মিয়ানমার কিন্তু অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের প্রতি চরম মাত্রায় শত্রুভাবাপন্ন এবং প্রতিদ্বন্দী দেশ হিসেবে মনে করে থাকে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার ও প্রগাণ্ডায় সকল সহ্যের সীমাকে ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে আইস, ইয়াবা, কোকেন, হিরোইনের মতো ভয়ঙ্কর মাদক ও নেশা জাতীয় দ্রব্য চোরাচালাচের মাধ্যমে ও অবৈধ পথে চালান করে থাকে মিয়ানমার ও ভারত। আর বর্তমানে প্রতি বছর ঠিক কি পরিমাণ এবং কত আর্থিক মূল্যের মাদক ও নেশ জাতীয় দ্রব্য ভারত ও মিয়ানমার হয়ে আমাদের দেশে প্রবেশ করে তার সঠিক কোন তথ্য পাওয়া সম্ভব নয়।

তাই অদূর ভবিষ্যতে রোহিঙ্গা নিধন ইস্যুতে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের সীমিত সামরিক সংঘর্ষ শুরু হলে তাতে উভয় দেশকে উস্কানী এবং ডাবল গেম প্লে রোল করতে এই দেশগুলো চেষ্টার কোন কমতি করবে বলে মনে হয় না। আজ ২০২২ সাল হোক বিংবা ২০৩৫ সাল চীন কিন্তু ঠিকই মিয়ামানের যুদ্ধকবলিত বিশাল এলাকা বা ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটারে ভূমিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে দখল করে যে নিবে না তা কিন্তু নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। আর মিয়ানমার স্বৈর সেনা শাসক এবং একই সাথে বিদ্রোহীদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার মাধ্যমে চীনের এহেন অপকৌশলের স্পর্ষ্ট আলামত এখনই কিন্তু ফুঁটে উঠতে শুরু করেছে।

চীন আসলে যে কোন ভাবেই হোক না কেন, সুবিশাল এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বঙ্গপোসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে সরাসরি প্রবেশ করতে চাইছে। আর অন্যদিকে ভারত মিয়ানমারের সাথে গোপনে হোক বা প্রকাশ্যেই যতটা সম্ভব সখ্যতা বজায় রেখে বঙ্গপোসাগর হয়ে ভারত মহাসাগরে সরাসরি চীনের অনুপ্রবেশ রুখে দিতে হয়ত এক রকম বাধ্য হয়েই মিয়ানমারের হাতে অস্ত্র তুলে দিচ্ছে। যদিও মিয়ানমারের ভাগ্যে কি আছে তা ভবিষ্যতই বলে দিতে পারবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান ও অন্যতম সুবিধাভী হচ্ছে চীন, ভারত এবং রাশিয়া। ২০২১ চীন বাংলাদেশে প্রায় ১৩.৪০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করে। ভারত বৈধ অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও সেবা বাংলাদেশের রপ্তানি করে। তবে এর বিপরীতে বাংলাদেশ কিন্তু দুই দেশেই মোট ২.০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পন্য রপ্তানির কোন সুযোগ পায় না। এদিকে আবার রাশিয়া বাংলাদেশে চলমান ১২.৫০ বিলিয়ন ডলারের সুবিশাল প্রকল্প পাবনায় রুপপুরে ২,৪০০ মেগাওয়ার্ট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ৯০% পর্যন্ত ঋন সহায়তায় অর্থ বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা করে যাচ্ছে। যা কিনা ডলারের হিসেবে ১১.৩৮ বিলিয়ন ডলার। অথচ এই দেশগুলো বিভিন্নভাবে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করলেও তাদের সাথে আমাদের কার্যত কোন ধরণের কৌশলগত সম্পর্ক নেই। তারা আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে প্রচার করে গেলেও মিয়ানমার এবং রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে তাদের আসল পরিচয়, ইচ্ছা এবং সম্পর্ক কোন অবস্থায় রয়ে গেছে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।

তাছাড়া ইউক্রেনে রাশিয়ার নগ্ন সামরিক আগ্রাসন ও এক তরফা চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধ কিন্তু আমাদের এক ভয়াবহ আলামতের ইঙ্গিত দিয়েছে। এক বিংশ শতাব্দীর এই আধুনিক যুগে এসেও সামরিক দিক দিয়ে বিশ্বের দূর্বল এবং ছোট দেশগুলোর পাশে আসলে কেউ নেই এবং তারা কিন্তু এখনো পর্যন্ত অনেকটাই অরক্ষিত এবং বিপদজনক পর্যায়ে রয়ে গেছে। তাই দেশের চাটুকার ও চেতনা বাজদের খপ্পরে না পড়ে আর্থিক সক্ষতার বিবেচনায় নিজস্ব স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভবিষ্যতের প্রস্তুতি এখনই নিয়ে রাখতে হবে।##

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.