--- বিজ্ঞাপন ---

ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে শ্রীলঙ্কার জাতীয় অর্থনীতি

0

দক্ষিণ এশিয়ার সমুদ্র বেষ্টিত একটি সুন্দর দ্বীপরাষ্ট্র  হচ্ছে শ্রীলঙ্কা। দেশটি ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পতিত হয়েছে। বিশেষ করে দেশটিতে তীব্র মাত্রায় ডলারের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এরই জেরে শ্রীলঙ্কার পশ্চিমাঞ্চল প্রদেশের শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে যে, দেশে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে বিদেশ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাগজ এবং কালি আমদানি করা যাচ্ছে না। আর এই কারণে কাগজের অভাবে দেশটির কোনো স্কুলই আপাতাত পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। শ্রীলংকার বর্তমানে ভয়ঙ্কর বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি পর্যায়ের সকল পাবলিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

মুলত অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের নামে অনেকটা পরিকল্পনা বিহীনভাবে দেশটি নির্বিচারে বৈদেশিক ঋন নিয়ে নিজেই আজ একেবারে খাদের কিনারে এসে দাড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কার মোট  জিডিপির আকার মাত্র ৮৫ বিলিয়ন ডলার হলেও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের নামে দেশটি আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক এবং চীনের মতো দেশগুলোর কাছ থেকে বিগত তিন দশকে বিশাল অংকের বৈদেশিক ঋন নিয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋনের স্থিতির পরিমাণ প্রায় ৫১.০০ বিলিয়ন ডলার। আর বৈদেশিক ঋনের আকার মোট জিডিপির প্রায় ৬০%।

অথচ এই পাহাড় সমান বৈদেশিক ঋনের বিপরীতে দেশটির কাছে মাত্র ৩.০০ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে। যা দিয়ে ২০২২ সালের ঋনের কিস্তির আসল এবং সুদ পরিশোধ করার ক্ষমতা আপাতত নেই দেশটির।

শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত ছিল পর্যটন শিল্প খাত। ২০২০ সাল থেকে চলমান করোনা মহামারীর ছবলে চরম বিপর্যের মুখে পড়ে দেশটির বিদেশি নির্ভর পর্যটন শিল্প খাত। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মূল কারণ হিসেবে শ্রীলঙ্কার সম্ভবনাময় পর্যটন শিল্প খাতের বিপর্যয়কে বিবেচনা করা হলেও বাস্তবে তার পাশাপাশি বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণও কিন্তু বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। একাধিক মেগা প্রজেক্টের নামে শ্রীলঙ্কা শুধু চীন থেকেই বৈদেশিক ঋন নিয়েছে মোট প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার। যা আপাতত দেশটির জন্য বড় ধরনের এক বোঝা হয়ে দেখা দিয়েছে। ঋন পরিশোধ করতে না পারায় অত্যন্ত কৌশলী চীন কিন্তু ঠিকই ঋন মওকুফের নামে চুক্তি মোতাবেক দীর্ঘ মেয়াদে শ্রীলঙ্কার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং সামুদ্রিক বন্দরের নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও চুক্তি মোতাবেক অধিগ্রহণকৃত সামুদ্রিক বন্দর থেকে আয়ের একটি অংশ শ্রীলঙ্কার সরকারকে প্রদান করবে চীন।

তাই শুধুমাত্র বিশ্বকে দেখানোর উদ্দেশ্যে উন্নয়ন এবং মেগা প্রজেক্টের নামে অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক প্রজেক্টে দীর্ঘ মেয়াদী বৈদেশিক ঋন আসলে কতটা ভয়াবহ ও বিপদজনক হতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই ঋনগ্রস্থ দেশ শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান। যা থেকে বিশ্বের সকল স্বল্প উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত এবং বর্তমানে চলমান বৈশ্বিক মহামন্দা এবং করোনা মহামারীর কারণে অর্থনৈতিক ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে মেগা প্রজেক্টে বাস্তবায়নে বৈদেশিক ঋন ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় খুবই সতর্ক থাকতে হবে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.