--- বিজ্ঞাপন ---

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ৫০ বছর : আগামীর পানে আরো ৫০ বছর পথচলার প্রত্যাশায়

0

পিটার হাস, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত#

বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্মরণীয় পাঁচ দশকে আমার এভাবে ভাবতে ভালো লাগছে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অংশীদার এবং আমরা আগামী ৫০ বছরে সেই অংশীদারিত্বকে আরো এগিয়ে নিতে চাই।

আমরা ১৯৭২ সালের এই দিনে বন্ধুত্বের হাত মিলিয়েছিলাম, তারপর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ৮ বিলিয়ন ডলার বা ৭০ হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করেছে। আমরা বাংলাদেশের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করেছি, সন্ত্রাসবাদ ও মানব পাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং বাংলাদেশের মানুষের সুস্থ ও সমৃদ্ধশালী জীবনযাপনে সহায়তা করেছি। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্র মহামারি মোকাবেলায় আপনাদের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে ৬ কোটি ১০ লাখ কোভিড–১৯ টিকা ডোজ অনুদান দিয়েছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া টিকা ডোজের বৃহত্তম প্রাপক। আমরা সেটাই করেছি যা বন্ধুরা একে অন্যের জন্য করে থাকে।

গত ৫০ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর বিষ্ময়কর। মুক্তিযুদ্ধের সেই ভয়াল দিনগুলো থেকে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর দেখা গেল বাংলাদেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়েছে, দেশের অবকাঠামোগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং দেশের অগণিত সেরা মেধাবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। অনেকেই ভেবেছিলেন যে, বাংলাদেশ আর কখনোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। অনেকেই ভেবেছিলেন যে, বাংলাদেশ চিরকাল অন্যের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল থাকবে।

কিন্তু সেই অবস্থা অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন বাংলাদেশ সফলতার গল্প হিসেবে বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। বাংলাদেশের জনগণের উদ্যোগ, সক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তির কারণে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও সাক্ষরতার ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করেছে, শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে পেরেছে এবং বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। সত্যি বলতে, বাংলাদেশ শিগগিরই মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় উন্নীত হবে, এটি নিঃসন্দেহে একটি অসাধারণ ও চমকপ্রদ অর্জন।

বাংলাদেশ এখন তার প্রতিবেশীদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ নগদ তারল্য সঙ্কটের সময় শ্রীলংকার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল এবং মালদ্বীপকে কোভিড সহায়তা দিয়েছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর সবচয়ে বড় অবদানকারী হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী শান্তি নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এদিকে, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে কার্বন নিঃসরণকারী প্রধান দেশগুলোকে নির্গমন কমানোর আহ্বান জানানোর ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজনের জন্য অর্থায়নের জন্য আহ্বানের ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী কণ্ঠস্বর।

আমাদের দুই দেশ জুড়িদার, একে অন্যের সঙ্গী। উন্নয়ন সহায়তা যদিও এখনো গুরুত্বপূর্ণ, তবে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমবর্ধমানভাবে বাণিজ্যকেন্দ্রিক হচ্ছে, আগের মতো আর সাহায্য নির্ভর নয়। লাভ বা সুবিধাগুলো পারস্পরিক — যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য এবং যতো দিন যাচ্ছে আগের চেয়ে আরো বেশি সংখ্যক আমেরিকান কোম্পানি তাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ অংশীদারদের মধ্যে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করছে।

আমাদের জনগণের সাথে জনগণের যে বন্ধন সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতারও আগে থেকে শুরু হয়েছিল। ১৯৫২ সালে ড. ফজলুর রহমান খান প্রথম বাংলাদেশী যিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পেয়েছিলেন। তিনি আরবানা–শ্যাম্পেইনের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার ডক্টরেক্ট ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে তার দেখানো পথ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত হয়েছে, যার শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে আমার নিজের বাড়ি যে ইলিনয় রাজ্যে সেখান থেকে। শিকাগোতে উইলিস টাওয়ার এবং জন হ্যানকক সেন্টার আমাদের দুই দেশের জনগণের দীর্ঘ সম্পর্কের প্রমাণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির লাগানো বটগাছটি আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের প্রতীক।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের একটি অভিন্ন ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমাদের উভয় দেশ স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করেছে এবং গণতন্ত্রের প্রতি অগাধ বিশ্বাস দ্বারা ঐক্যবদ্ধ। তারা জানে যে গণতন্ত্র একটি প্রক্রিয়া এবং এর কোন চূড়ান্ত রূপ নেই। যুক্তরাষ্ট্রে আমরা অকথ্য ও অবর্ণনীয় সহিংসতা ও বর্ণবাদের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমেরিকান জনগণ এই ধরনের সমস্যাগুলো সততার সাথে খোলাখুলিভাবে মোকাবেলা করছে এবং কখনো কখনো তারা মানুষকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করতে এবং কার্যকর পরিবর্তনের জন্য জোরালো আওয়াজ তোলে। বাংলাদেশেও অনেকেই একই কাজ করছে এবং আমরা তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করি।

যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জনগণের চাওয়া একই ধরনের; তারা চায় একটি প্রাণবন্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধশালী গণতন্ত্র, একটি জবাবদিহিতামূলক বিচার ব্যবস্থা এবং সবার জন্য মৌলিক মানবাধিকার। আমাদের এই অভিন্ন চাওয়া অর্জনে আগামী দশকগুলোতে বাংলাদেশ আমাদের অংশীদারিত্বের উপর আস্থা রাখতে ও নির্ভর করতে পারে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.