--- বিজ্ঞাপন ---

ইউরোপের সাথে সরাসরি সমুদ্র বাণিজ্য বাড়াচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর

0

বিশেষ প্রতিনিধি#

দীর্ঘদিন ধরে চলা এশিয়ার তিন সমুদ্র হয়ে ইউরোপে পণ্য পাঠানোর দিন ফুরিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এখন সরাসরি পণ্য যাচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এ মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সরাসরি জাহাজ যাবে নেদারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে। পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়া এরই মধ্যে সরাসরি পণ্য নেয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষও এসব দেশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের এসব উদ্যোগের ফলে দেশের অর্থনীতির গতি আরও বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও কলম্বো বন্দরের উপর থেকে নির্ভরতা কমবে। আমদানি – রফতানি ব্যবসার সাথে জড়িতদের সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। পূর্বের তুলনায় কম সময়ের মধ্যে পণ্য দেশে আমাদানি হবে এবং দেশ থেকে রফতানি করা যাবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাধারনত কোন পণ্য সরাসরি ইউরোপ বা আমেরিকা যায় না। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার পণ্য এশিয়ার তিন রুটে চলাচল করে। সারা বছর ধরে ৩০ থেকে ৪০ টি কন্টেইনার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য আনা নেয়ার কাজে নিয়োজিত। যেগুলো ফিডার ভেসেল বলে পরিচিত। বাংলাদেশে যে সব কন্টেইনার পণ্য আমদানি-রফতানি হয় তা অনেকটা ‘ট্রানজিট’ হিসেবে দেশে আসে এবং যায়। এখান থেকে পণ্য বোঝাই করে ফিডার ভেসেলগুলো সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কার কলম্বো এবং মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং এ নোঙ্গর করে। এ তিন দেশের বন্দরগুলো গভীর সমুদ্র বন্দর বিধায় এখানে বড় জাহাজগুলোতে পণ্যগুলো তোলা হয়। এসব জাহাজ ‘মাদার ভেসেল’ (বৃহদাকার কন্টেনার জাহাজ) বলে পরিচিত। মাদার ভেসেলে ধারন ক্ষমতা ফিডার ভেসেলের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। তাই বাংলাদেশের পণ্যগুলো ফিডার ভেসেল থেকে মাদার ভেসেলে তোলা হয়। একই কায়দায় কন্টেইনার পণ্য আমদানি ও রফতানি হয়ে থাকে। এ তিন দেশে পণ্য পৌছাতেঁ সাধারনত ৫দিন লাগে। তবে পণ্য পোৗছানো থেকে পণ্য মাদার ভেসেলে বোঝাই পর্যন্ত অনেক সময় লেগে যায়। যদি সরাসরি পণ্য ইউরোপ, আমেরিকা বা আফ্রিকায় নেয়া যেতো তাহলে সময় এবং খরচ দুটোই সাশ্রয় হতো। বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর না থাকার কারনে বছরের পর বছর ধরে এভাবে জাহাজীকরনের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি হয়ে আসছে। সরাসরি ইউরােপ-আমেরিকা-আফ্রিকায় কন্টেইনার জাহাজ চলাচলের নজির নেই। সরাসরি পণ্য ইউরোপে পাঠাতে কেউ ঝুকিঁ নেয় নি। তবে ইতালিতে সফলভাবে জাহাজ চলাচল হওয়ার পর ইউরোপে জাহাজ পাঠানোর বিষয়ে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সর্বপ্রথম সরাসরি ইতালিতে পণ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় এ বছরের প্রথম দিকে। ফিডার বা কন্টেনার ভ্যাসেলে করে পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ নেয় একটি শিপিং কম্পানি। তারা সফলভাবে ইতালি থেকে সরাসরি পণ্য আমদানি-রফতানি করলে এ পথে নতুন দুয়ার খোলে। এবার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ইউরোপে কন্টেইনার জাহাজ পরিচালনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইউরোপের দেশ পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়া। ইতোমধ্যে জাহাজ পরিচালনায় সমঝোতা স্মারক সই করতে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নেদারল্যান্ডের রটারড্যাম বন্দর ও ইংল্যান্ডের লিভারপুল বন্দরে পন্য আনা-নেয়া এ মাসেই শুরু হচ্ছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপের দেশ পর্তুগাল ও স্লোভেনিয়া সরাসরি তাদের বন্দরে জাহাজ পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে আগ্রহ দেখিয়েছে। আমরা খুবই গুরুত্ব সহকারে বিষয়টি দেখছি। আবেদন পেলে আমরা অত্যন্ত দ্রুত সেগুলো অনুমোদন দিব। তিনি বলেন, ইউরোপের দুই দেশ ছাড়া সংযুক্ত আরব-আমিরাতের আবুধাবি ও দুবাইয়ের দুটি বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সরাসরি পণ্যবাহি জাহাজ পরিচালনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের আবেদন আমরা যতœ সহকারে অগ্রাধিকারভিত্তিতে দেখবো।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সরাসরি ইতালি রুটে ‘রিফ লাইন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান জাহাজ পরিচালনা করছে। এ মাসের মাঝামাঝি থেকে ইংল্যান্ডের লিভারপুল বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরে সরাসরি পণ্য আনা-নেয়া শুরু হবে। আগামী ১৫ মে থেকে পণ্য বোঝাই জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লিভারপুল বন্দরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে দু’বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের যাবতীয় আনুষ্ঠিকতা শেষ করবে। পণ্যের চাহিদার উপর ভিত্তি করে কয়েকদিন পর জাহাজ লিভারপুল বন্দরে আসা-যাওয়া করবে। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজটি প্রথমে ইউরোপের ব্যস্ততম বন্দর নেদারল্যান্ডসের রটারডামে যাবে। সেখানে পণ্য খালাস করে যাবে ইংল্যান্ডের লিভারপুল বন্দরে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ইউরোপে জাহাজ যাচ্ছে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত একটি আনন্দের বিষয়। বিশ^ায়নের এ সময়ে এ উদ্যোগের ফলে দেশের গার্মেন্টস শিল্প তো অনন্য ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনে বলেন, যদি এ সফল হয় তাহলে দেশের গার্মেন্টস শিল্প আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে। বর্তমানে যেভাবে পণ্য আনা নেয়া হচ্ছে তা সময় ও অর্থ দুটো ক্ষেত্রে প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। অর্থাৎ যে পণ্য বায়ারদের হাতে পৌছুতে এক মাস লাগে সে পণ্য ২০ দিনে পেয়ে যাবে। একইভাবে অর্থ খরচও কমে যাবে।’

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ৪৫ শতাংশই রপ্তানি হয় ইউরোপের দেশগুলোতে। এর মধ্যে সবচে বেশি পণ্য রপ্তানি হয় জার্মানীতে, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ইংল্যান্ড। চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে জার্মানীর কোন বন্দরে পণ্য আনা-নেয়ার বিষয়ে আগ্রগতি না হলেও ইংল্যান্ড নিয়ে আশাবাদী ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে তৈরি পোশাক শিল্পের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীরা ইংল্যান্ডের লিভারপুলে সরাসরি পণ্য নেয়াকে বেশ ইতিবাচক মনে করছেন। এর আগে পণ্য পাঠানো হতো সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে। এ তিন বন্দরের মাধ্যমে পণ্য পাঠাতে গিয়ে অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। বিভিন্ন প্রকার চার্জ তো আছে তার চেয়ে বড় বিড়ম্বনা হচ্ছে সময় মতো মাদার ভেসেল ধরানো। জটে আটকা পড়লে অনেক সময় অতিবাহিত হয়ে যায়। এখন সরাসরি পণ্য গেলে এসব বিড়ম্বনার হাত থেকে রক্ষা পাবে ব্যবসায়ীরা।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.