--- বিজ্ঞাপন ---

বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যে চীনের বড় ধরণের উত্থান সামনে

0

আগামী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্ব অস্ত্র বানিজ্যে চীনের বড় ধরণের উত্থান ঘটবে। ২০১২ সালের দিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সামরিক বিশ্লেষকেরা আশাঙ্খা প্রকাশ করে উল্লেখ করে, চীন এই সময়ের মধ্যে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির এবং নতুন নতুন উদ্ভাবিত অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম সারা বিশ্বে ছেয়ে যাবে। কোন এক সময় মনে করা হতো যে, আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়া এবং ইউরোপীয় দেশগুলো আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায় তাদের একচেটিয়া প্রাধান্য হারাতে পারে উদীয়মান সামরিক পরাশক্তি চীনের কাছে।

তবে আজ ২০২২ সালে এসে বাস্তবতা বলছে একেবারেই ভিন্ন কিছু কথা। চীন অবশ্য বিগত তিন দশকে তাদের সামরিক ও প্রতিরক্ষা শিল্পখাত উন্নয়ন ও গবেষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরেই গড়ে ২০—৩০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে। তার পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে প্রযুক্তি হাতিয়ে নিয়ে হলেও এর ক্লোন কপি প্রযুক্তির সমন্বয়ে মাঝারি ও উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্র উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে। তবে প্রকাশ থাকে যে, বিগত এক দশকেও বিশ্ব বাজারে চীনের অস্ত্র রপ্তানি প্রত্যাশা অনুযায়ী সফলতার মুখ দেখেনি।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১০ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ১০ বছরে চীন বিশ্ব বাজারে মোট ১৬.৬ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করেছিল। সে হিসেবে প্রতি বছর গড়ে তা ১.৬৬ বিলিয়ন ডলার হয়। যদিও বাস্তবে চীন বর্তমানে প্রতি বছর গড়ে আনুমানিক ৩—৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সাজ সরঞ্জাম বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে রপ্তানি করে যাচ্ছে। এদিকে ২০২০ সালে দেশটি মাত্র ৭৫৯ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। যেখানে কিনা আমেরিকা একাই ২০২১ সালে আনুমানিক ১৩৮.২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রপ্তানি এবং একাধিক দেশের সাথে অস্ত্র সরবরাহ চুক্তি সম্পন্ন করেছিল।

২০২২ সালের শুরুতে পাকিস্তান ৩৬টি এডভান্স জে—১০সি সিরিজের জেট ফাইটার ক্রয়ের চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করলে চীন ১.৪ বিলিয়ন ডলারের বড় ধরণের অস্ত্র রপ্তানির আদেশ লাভ করে। তাছাড়া ২০১৩ সালে এফ—৭ জেট ফাইটারের প্রডাকশন লাইন বন্ধ হয়ে গেলে পরবর্তীতে কিছু সংখ্যক জেট ট্রেইনার বিমান রপ্তানি করা ছাড়া বড় ধরণের কোন যুদ্ধবিমান বিশ্ব বাজারে রপ্তানির সুযোগ পায়নি।

এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনের বৈশ্বিক অস্ত্র আমদানি ১০ শতাংশ এর নিচে নেমে আসলেও এখনো পর্যন্ত বিশ্বের অন্যতম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে দেশটি। চীন কার্যত এখনো পর্যন্ত জেট ইঞ্জিন উৎপাদন এবং আধুনিকায়নে রাশিয়ার উপর অতি মাত্রায় নির্ভরশীল।

চীন অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের অস্ত্র তৈরির পাশাপাশি ব্যাপকভাবে উচ্চ প্রযুক্তি সম্পন্ন বৃহৎ আকারের যুদ্ধ বিমান, ফ্রিগেট, কমব্যাট এন্ড ইন্টালিজেন্স ড্রোন, সাবমেরিন, এন্টিশীপ এ্যন্ড সারফেস টু এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম, লং এন্ড মিডিয়াম রেঞ্জের ক্রুজ ও ব্যালেস্টিক মিসাইল তৈরি এবং আধুনিকায়নে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। বৈশ্বিক অস্ত্র বানিজ্যে তুলনামুলক স্বল্প মূল্যে সহজ শর্তে আধুনিক সামরিক সাজ সরঞ্জাম রপ্তানির এবং সরবরাহের মাধম্যে চীন আগামী এক দশকে আন্তর্জাতিক অস্ত্র বাজার দখল করে নিতে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হলেও বাস্তবে সারা বিশ্বের একেবারে অল্প কিছু দেশ ছাড়া সারা বিশ্বে বড় ধরণের অস্ত্র রপ্তানির বাজার এখনো পর্যন্ত সৃষ্টি করতে পারেনি চীন। কমব্যাট ড্রোন ডিজাইন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং এ তুরস্ক খুব অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে। তার পাশাপাশি চীন এই প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করে গেলেও তাদের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কিন্তু কোন ভাবেই আমেরিকা, ইসরাইল কিংবা তুরস্কের মানের পর্যায়ে পড়ে না।

বর্তমানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, সিরিয়া, ইরানসহ আফ্রিকা মহাদেশের বেশ কিছু রাষ্ট্রের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে চীন। মার্কিন প্রসাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সামরিক বন্ধন এবং সম্পর্ক একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকায় পাকিস্তানে বিপুল পরিমানের অস্ত্র সরবরাহের নতুন পথ তৈরি হয়েছে চীনের জন্য। ভারতকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলায় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বেইজিং এবং ইসলামাবাদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা এবং কৌশলগত সম্পর্ক আরো জড়ালো হচ্ছে বলেই প্রতিয়মান হয়।

আবার মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র সোদি আরব চীনের কৌশলগত মিডিয়াম রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইলের অন্যতম ক্রেতা। সৌদি আরব খুব সম্ভবত চীন থেকে অজানা সংখ্যক নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল ডিএফ—৩ এবং ডিএফ—২১ মিসাইল সিস্টেম সংগ্রহ করেছে এবং বর্তমানে প্রযুক্তি নিয়ে নিজ দেশেই তৈরি করছে।

এটা ঠিক যে, চীনের অত্যাধুনিক অস্ত্রের বাজার মূল্য ইউরোপ কিম্বা যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার তুলনায় যথেষ্ট কম বা সস্তা হওয়ায় এবং প্রযুক্তিগত কম জটিল সম্পন্ন এবং পাশাপাশি পরিচালনা অধিকতর সহজতর হওয়ার কারণে বিশ্বের অস্ত্র বাজারে চীনের অবস্থান ও প্রভাব আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে হয়ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে তা অবশ্যই নির্ভর করবে চীন বিশ্বকে নিম্ন মানের প্রযুক্তি সরবরাহ করবে নাকি বিশ্ব মানের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন এবং গুনগত মান বৃদ্ধির উপর নজর দিবে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.