--- বিজ্ঞাপন ---

সুইস ব্যাংকে ভারত-বাংলাদেশের টাকার পাহাড়

কি এই সু্ইস ব্যাংক, কেন রাখে টাকা

0

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নাগরিকদের জমা করা টাকার পরিমাণ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। সেই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১ সালে সুইটজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট হাজার দু’শ ৭৫ কোটি টাকা। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে, এই অর্থের পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার তিনশ ৪৭ কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে কয়েক বছরের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে তাতে এই বৃদ্ধি এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ। এই হিসেব অনুযায়ী, এক বছরেই সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা করা অর্থের পরিমাণ দু’হাজার নয়শ ২৮ কোটি টাকা বেড়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থপাচার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সেই পটভূমিতে পাচার হওয়া অর্থ দেশে আনার উদ্দেশ্যে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটেও কিছু সুযোগ রাখা হয়েছে।

অপরদিকে, সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে সেখানে ভারতীয় ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ৩০,৫০০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয়দের গচ্ছিত কালো টাকা দেশে ফেরত আনবেন। আর সেই নরেন্দ্র মোদীর জমানাতেই ভারতীয়দের সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার পরিমাণ সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিল। সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে সেখানে ভারতীয় ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির মোট আমানতের পরিমাণ ৩৮৩ কোটি সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ৩০,৫০০ কোটি টাকা)। গত ১৪ বছরের মধ্যে এই টাকার পরিমাণ সর্বোচ্চ। বস্তুত, সে সময় থেকেই সুইস ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে আমানতের তথ্য প্রকাশ্যে আনা শুরু হয়। ২০২০ সালে সুইস ব্যাঙ্কে ভারতীয় ব্যক্তি ও সংস্থাগুলির মোট আমানতের পরিমাণ ২৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ (প্রায় ২০,৭০০ কোটি টাকা)। অর্থাৎ, এক বছরের মধ্যে তা বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।

গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উদ্দেশে সুইস ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা ফেরত আনার দাবি তুলতেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সুইস ব্যাঙ্কে জমা কালো টাকা দেশে ফেরত আনারও। যদিও তা হয়নি। উল্টে ফান্ড, বন্ড, ডিবেঞ্চারের পাশাপাশি ভারতীয় অ্যাকাউন্টগুলিতে জমা পড়েছে ৪,৮০০ কোটি টাকা। যা গত সাত বছরের রেকর্ড।

সুইস ব্যাংক আসলে কি

সুইস ব্যাংক বলতে কোনো একক ব্যাংককে বুঝানো হয় না বরং যেইসব ব্যাংক গোপনীয়তার সাথে গচ্ছিত টাকাকে সংরক্ষণ করে তাদের সকলকেই বুঝানো হয়।প্রায় ১০০ বছরের উপরে এর কার্যক্রম চলে আসছে। সুইস ব্যাংক গুলো শুধু ধনী ব্যক্তিদের জন্যই টাকা রাখার স্থান নয়, অনেক সাধারণ মানুষ ও এখানে একাউন্ট খুলতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির নাৎসি বাহিনীর থেকে রক্ষা পাবার জন্য বহু মানুষ সেইখানে টাকা গচ্ছিত রাখে। এরপর থেকে তা কালো বা অবৈধ টাকা রাখার জন্য আদর্শ জায়গা হিসাবে গণ্য হয়ে আসছে। ইরাক, সিরিয়া,সুদানের মতো যুদ্ধবিধবস্ত এবং উত্তর কোরিয়ার মতো স্বৈরাচারী দেশ থেকে সম্পদ হস্তক্ষেপের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এর ব্যাবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ,ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যেও দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া টাকাও এইদিকে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।

কেন টাকা রাখার প্রবনতা বেশি

সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে হলে জাতীয়তা এবং পরিচয়পত্রের দরকার হয় না। যদি দেশ বা কোনো সংস্থা আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য চেয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ও সুইস ব্যাংক তা প্রদান করে না। সুইস ব্যাংকে টাকা লেনদেনের জন্য গ্রাহককে একটি পিন কোড দেওয়া হয় যা দিয়ে সকল কাজ করা যায় গোপনীয়তা বজায় রেখে। যেহেতু অনেক বছর ধরে সুইস ব্যাংক ব্যবহার হয়ে আসছে, তাই মানুষের মধ্যে বিশ্বাস ও জন্ম নিয়েছে যে এইখানে টাকা নিশ্চিন্তে রাখা যায়। নিজ দেশে টাকা গুলা গচ্ছিত রাখলে ট্যাক্স দেয়া লাগে। কিন্তু এইখানে টাকা সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি  আরো ১-২% হারে সুদ দেয়া হয়। তাই বিভিন্ন দেশের মানুষের আগ্রহটা বেশি। কালো টাকা অনায়াসে ঢুকে যায় সু্ইস ব্যাংকে।
# বিবিসি/আনন্দবাজার

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.