--- বিজ্ঞাপন ---

রোটারী জেলা গর্ভনর হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন নি রোটারীয়ান রুহেলা খান চৌধুরী

বাংলাদেশের রোটারীতে ব্যাতিক্রম ঘটনা

0

রোটারী জেলা গর্ভনর হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন নি রোটারীয়ান রুহেলা খান চৌধুরী। গত ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের রোটারী  জেলা ৩২৮২ এর গর্ভনর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের কথা ছিল। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেও উচ্চ আদালতের আদেশে তিনি তারঁ দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন নি বলে সূত্র জানায়। তারঁ পরিবর্তে সাবেক গর্ভনর রোটারীয়ান দিল নাশিন মহসিনকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব দিয়েছে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল। রোটারীর ইতিহাসে এটি একটি ব্যাতিক্রম ঘটনা। সাধারনত কোন দেশে এ ধরনের ঘটনা হয়নি। রোটারী ইন্টারন্যাশনালের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর ১ জুলাই গনতান্ত্রিকভাবে বিভিন্ন জেলা ও ক্লাবে নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে। এর কোন হেরফের হয় না।
বাংলাদেশের রোটারীতে দুটি জেলা। একটি হলো ৩২৮১, অন্যটি ৩২৮২। প্রতি বছর নির্বাচনের মাধ্যমে এ দু’জেলায় নতুন গর্ভনর নিয়োগ হয়। গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জেলা গর্ভনর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পরবর্তিতে এটি সরাসরি অনলাইনে ভোটের মাধ্যমে চলে যায়। সূত্র জানায়, গত ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারী সিলেটে অনুষ্ঠিত হয় ২০২২-২০২৩ সালের রোটারী জেলা গর্ভনরের নির্বাচন। এ নির্বাচনে রুহেলা খান চৌধুরীর সাথে অন্যতম আরও একজন প্রার্থী ছিলেন রোটারীয়ান জাহাঙ্গীর চৌধুরী। এ দু’জনের ভোটের ফলাফল সমান সংখ্যক হওয়ার কারনে সে সময় জেলা গর্ভনর পীর আতাউর রহমান কাস্টিং ভোট দিয়ে রুহেলাকে জয়ী বলে ঘোষণা করেন। কিন্ত পুরো নির্বাচনে স্বচ্ছতা নেই উল্লেখ করে অপর প্রার্থী রোটারীয়ান জাহাঙ্গির চৌধুরী নানা অভিযোগ উঠালে পুরো নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে জটিলতায় আটকে যায়। তারপরও জেলা গর্ভনর হিসেবে সে সময় রোটারীয়ান রুহেলা খান চৌধুরীকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করেন তৎকালীন গর্ভনর পীর আতাউর রহমান। যথারীতি রোটারী ইন্টারন্যাশনালও তাকে স্বীকৃতি দেয়। রোটারীয়ান রুহেলা গর্ভনর হিসেবে নিজের প্রস্ততি গ্রহণ করেন। জেলা চালানোর জন্য কমিটিও করেন। তারঁ দায়িত্ব গ্রহণ করার কথা ছিল গত ১ জুলাই। কিন্ত তার আগেই উচ্চ আদালত তাকে দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ জারী করে। ফলে বিষয়টি আদালতে নির্দেশের কারণে আটকে যায়। আদালতের এ মামলাটি করেছিলেন তারঁ সঙ্গে থাকা অপর প্রার্থী রোটারীয়ান জাহাঙ্গীর চৌধুরী। আদালতের বিষয়টি রোটারী ইন্টারন্যাশনাল পর্যন্ত গড়ায়। শেষপর্যন্ত আদালতের নির্দেশকে সম্মান প্রদর্শন করে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল রোটারীয়ান রুহেলা খান চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়ে সাবেক গর্ভনর রোটারীয়ান দিল নাশিন মহসিনকে ভারপ্রাপ্ত জেলা গর্ভনরের দায়িত্ব দেন। রোটারী ইন্টারন্যাশনালের সকল তালিকা থেকে রোটারীয়ান রুহেলা খান চৌধুরীর নাম বাতিল করা হয়।
এ ব্যাপারে রোটারীয়ান জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সাথে আলাপ করলে তিনি বলেন, নির্বাচনে আমিই জয়লাভ করেছিলাম। কিন্ত ষড়যন্ত্র করে আমাকে হারানো হয়। তিনি বলেন নির্বাচনে আমি পেয়েছি ১২৯ ভোট, রুহেলা খান পেয়েছেন ১২৪ ভোট। কিন্ত দুঃখজনকভাবে সে সময় জেলা গর্ভনর পীর আতাউর রহমান ষড়যন্ত্র করে প্রথমে আমার পাওয়া ৫ ভোট বাতিল করে দু’জনের ভোট সমান করেন। পরে তিনি কাস্টিং ভোট দিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে রোটারীয়ান রুহেলা খানকে বিজয়ী করেন। তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী জয় ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে আমি দুটি মামলা করি। একটি সিভিল মামলা অন্যটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে জালিয়াতি মামলা। আদালতের কাছে আমি আমার অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আবেদন করেছি। তারা প্রথমে আদালতকে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে রায় তাদের পক্ষে নিতে চেষ্টা চালায়। পরে আপীল রায়ে আদালত রোটারীয়ান রুহেলা খানের দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে স্থগিতাদেশ দেয়।

সূত্র জানায়, আদালতের নির্দেশের পর পরই রোটারী ইন্টারন্যাশনাল হতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হয়। রোটারীয়ান রুহেলা খান চৌধুরীও আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নিজের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। তিনি তারঁ মনোনীত জেলা সচিব রোটারীয়ান মোঃ শাহজাহানকে এটি সব ক্লাবকে অবহিত করতে বলেন। রোটারীয়ান শাহজাহান বিষয়টি ক্লাবগুলোকে জানিয়ে দেন। রোটারীয়ান রুহেলা খানের পরিবর্তে ভাইস গর্ভনর রোটারীয়ান দিল নাশিন মহসিন জেলা-৩২৮২ এর ভারপ্রাপ্ত গর্ভনর হিসেবে নিয়োগ দেয় রোটারী ইন্টারন্যাশনাল।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রোটারী একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত আন্তর্জাতিক সংগঠন। এ সংগঠনের সুনাম রয়েছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে রোটারীর ইতিহাসও অনেক পুরানো। কিন্ত বর্তমানে রোটারীর নেতৃত্ব নিয়ে যে অবস্থা চলছে তাতে পুরো দেশের রোটারীয়ানরা নাখোশ।  বেশিরভাগ রোটারীয়ানের অভিযোগ, মুষ্টিমেয় রোটারীয়ানের কারনে দেশের সুনাম ও ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। যেভাবে বাংলাদেশে রোটারী মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে গেল তাতে রোটারী ইন্টারন্যাশনালও ক্ষুদ্ধ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের  জেলা-৩২৮২ থেকে রোটারী কার্যক্রম গুটিয়ে নিতে পারে। এতে রোটারীর সেবা থেকে বঞ্চিত হবে দরিদ্র মানুষ। রোটারীয়ানরাও যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার অবসান চায়। #

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.