--- বিজ্ঞাপন ---

কি এই ’কিনঝাল’ হাইপারসনিক মিসাইল

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ

0

ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসনে রাশিয়া তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অত্যাধুনিক ৯ ম্যাক গতি সম্পন্ন এয়ার লঞ্চড বেসড ‘কিনঝাল’ হাইপারসনিক ব্যালেস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে। যার গতি ছিল কিনা অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাক ৯ বা ১১,১৮৩ কিলোমিটার। মুলত হাইপারসনিক গতি সম্পন্ন নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ক্যাপবল কেএইচ-৪৭এম২ ‘কিনঝাল’ এয়ার লঞ্চড বেসড ব্যালেস্টিক মিসাইলটিকে সামরিক বিশ্লেষকেরা রাশিয়ার ‘ডুমসডে ওয়েপনস’ বা ‘ধ্বংসের অস্ত্র’ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। আর মনে করা হচ্ছে বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ‘কিনঝাল’ ব্যালেস্টিক মিসাইল হামলার মাধ্যমে বিশ্ব নতুন এক হাইপারসনিক মিসাইল প্রতিযোগিতার যুগে প্রবেশ করল।

রাশিয়া মুলত চলতি ২০২২ সালের ১৮ই মার্চ প্রথম বারের মতো মিগ-৩১ যুদ্ধবিমান থেকে ‘কিনঝাল’ হাইপারসনিক মিসাইল ইউক্রেনে নিক্ষেপ করে। তাছাড়া গত ১১ই এপ্রিল টিইউ-২২ বোম্বার এয়ারক্রাফট থেকে আবারো ইউক্রেনের পোর্ট সিটি ওডেসায় ৩টি এই জাতীয় মিসাইল হীট করে রাশিয়ার বিমান বাহিনী। তব বিশ্বের কিছু দেশ হাইপারসনিক প্রযুক্তি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করে গেলেও বাস্তব যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়া ব্যাতিত আর কোন দেশই সরাসরি এর ব্যবহার বা প্রয়োগ করতে পারেনি।

এখানে প্রকাশ থাকে যে, আকাশে উড্ডয়মান উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের গতি মাপার ক্ষেত্রে কিলোমিটার কিংবা মাইল এর বদলে ব্যবহার করা হয় ‘ম্যাক’ নামে একটি বিশেষ পরিমাপক। মুলত ১.০ ম্যাক মানে শব্দের সমান গতি ও দুরুত্ব। ১.০ ম্যাক মানে প্রতি ঘণ্টায় ৭৬৭ মাইল বা ১,২৪২.৫৪ কিলোমিটার গতি। সে হিসেবে বিবেচনা করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্ল্যাকবার্ড বিমানের গতি ছিল প্রতি ঘন্টায় ২,১৯৩ মাইল বা ৩,৫২৯ কিলোমিটার কিংবা ৩.২ ম্যাক গতি।

অবশ্য বিমান কিংবা মিসাইল সিস্টেম বায়ুমন্ডলে যতই উপরে উঠবে, সেক্ষেত্রে তাপমাত্রা ততই কমে যাবে। এজন্য ১৩.৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১,২২৫ কিলোমিটার/ঘন্টা গতিকে আদর্শ মান ১.০ ম্যাক গতি ধরা হয়। যা সকল যুদ্ধবিমান, ড্রোন কিংবা মিসাইলের উপর কমনভাবে প্রযোজ্য। যদি ০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ম্যাক ১.০ গতি অর্জন করতে হলে সেক্ষেত্রে আকাশ যানটিকে ১,১৯৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় উড়তে হবে। এদিকে শব্দের চেয়ে কমপক্ষে ৫ গুণ বেশি দ্রুত গতি সম্পন্ন মিসাইল কিংবা এরিয়াল সিস্টেমের গতিকে হাইপারসনিক গতি বলা হয়। এক্ষেত্রে প্রতি ঘণ্টায় ৩,৮৩৬ মাইল বা ৬,২১৪.৩২ কিলোমিটারের বেশি দ্রুত গতি অর্জন করলে তাকে সাধারণত হাইপারসনিক গতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

বর্তমানে উচ্চ প্রযুক্তির হাইপারসনিক গতির মিসাইল সিস্টেম ডিজাইন এণ্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অপেক্ষা রাশিয়া এবং চীন অনেকটাই এগিয়ে গেছে। তবে অনেকটা দেরিতে হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাইপারসনিক গতির ওয়েপন্স গবেষণায় ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করে দিয়েছে। আমেরিকা নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক প্রযুক্তি অর্জনে সাম্প্রতিক সময়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে যাচ্ছে।

বিশ্বের বুকে মাত্র তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীন কার্যকরভাবে হাইপারসনিক প্রযুক্তি ডিজাইন, আয়ত্ত ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সেই কাতারে গবেষণার একেবারে প্রাথমিক স্তরে হলেও গোটা ইউরোপকে পেছনে ফেলে এবার চতুর্থ দেশ হিসেবে হাইপারসনিক গতির প্রতিযোগিতায় ভারত তার নিজের যোগ্য স্থান করে নিয়েছে। ভারতের ডিফেন্স রিসার্চ এণ্ড ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সফলভাবে তাদের হাইপারসনিক টেকনোলজি ডেমোস্ট্রেটর ভ্যাসেলস (এইচএসটিডিভি) পরীক্ষা সম্পন্ন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। চীন ডিজাইন করেছে উচ্চ প্রযুক্তির এয়ার লঞ্চড বেসড (আনুমানিক ১০.০ ম্যাক গতির) সিএইচ-এএস-এক্স-১৩ হাইপারসনিক মিসাইল সিস্টেম। রাশিয়া ‘কিনঝাল’ মিসাইলের পাশাপাশি সাবমেরিন এবং ব্যাটল শীপ থেকে নিক্ষেপ করা যায় এমন অত্যন্ত শক্তিশালী হাইপারসনিক গতির ‘জিরকন/সিরকন’ ক্রুজ মিসাইল তৈরি করেছে। ১,০০০ কিলোমিটার রেঞ্জের স্ক্যামজেট ইঞ্জিন চালিত রাশিয়ার ‘জিরকন/সিরকন’ ক্রুজ মিসাইলের সর্বোচ্চ গতি ৯.০ ম্যাক বা ১১,০২৫ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টা হবে।

তবে বিশ্বের এক নম্বর সুপার পাওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচার করে যে, তাদের ভবিষ্যতের তৈরি গ্লাইড বডি (সি-এইচজিবি) সিস্টেমের গতি হবে কিনা অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ১৭.০ ম্যাক বা তার কাছাকাছি। আমেরিকার এই প্রজেক্টে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও এটি এখনো পর্যন্ত ডেভলপমেন্টের পর্যায়ে রয়ে গেছে। আমেরিকা অবশ্য চলতি ২০২২ সালেই তাদের তৈরি ম্যাক ৫-৬ গতির এবং ১ হাজার মাইল পাল্লার এজিএম-১৩৮এ এয়ার লঞ্চড র‍্যাপিড রিসপন্স ওয়েপন্স (এআরআরডাব্লিউ) মিসাইলের বেশকিছু সফল পরীক্ষা সম্পন করেছে। এই জাতীয় হাইপারসনিক মিসাইলের মূল বৈশিষ্ট্য হলো যে, এটিকে বর্তমানে প্রচলিত থাকা কোন এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম দ্বারা প্রতিহত করার সম্ভবনা বা সুযোগ একেবারে নেই বললেই চলে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.