--- বিজ্ঞাপন ---

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ নাকি অবৈধ সিন্ডিকেটের অর্থ লুটের হাতিয়ার?

0

সিরাজুর রহমান, রাজশাহী থেকে #

আজ সকালে একটি হাজার টাকার নোট নিয়ে বাজারে গেলাম বাজার করতে। খুব ইচ্ছে ছিল কমপক্ষে একটি হলেও মাঝারি আকারের ইলিশ মাছ কিনে বাড়িতে ফিরব। তবে বাজারে গিয়ে ইলিশ মাছের দাম করতেই আমি একেবারেই হতাশ হয়ে গেলাম। দোকানদার একটি ১ কেজি ওজনের ইলিশ মাছের দাম চাইলেন ১,৫০০ টাকা। আমি তাকে অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি ইলিশ মাছটি ১,৪০০ টাকার কমে দিতে রাজি হলেন না। পরিবহণ খরচসহ তার কেনা নাকি ১,৩৫০ টাকা। যা হোক শেষমেষ আজ আমার আর ইলিশ মাছ কেনা হলো না। তবে আমাদের স্থানীয় এলাকায় পুকুরে চাষ করা দেশী মাছ এবং অন্যান্য বাজার করে নিয়ে আমি বাড়ি ফিরে আসলাম।

সেই ছোট বেলা থেকে জেনে এসেছি ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় মাছ। এটি আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই কয়েক দিন আগেই আবার টিভিতে দেখলাম দেশের পদ্মা, মেঘনা নদীর মোহনায় এবং বঙ্গপোসাগরে নাকি ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ ধরা পড়ছে। চাঁদপুরের মাছের আড়তগুলোতে ইলিশ মাছ রাখার জেয়গা পর্যন্ত নেই। তবে ঠিক কোন যৌক্তিক কারণে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষেরা বছরে একটা হলেও স্বল্প মূল্যে ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারিনা তা আমার বোধগম্য নয়।

ভাবুন তো আমাদের দেশে মধ্যবৃত্ত এবং নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সারা বছরে কয়টি ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারেন। আমি নিজেই তো বিগত পাঁচ বছরে একটি ইলিশ মাছ কিনেছি বলে আমার মনে পড়ে না। এমনো পরিবার দেখা যায় সারা বছর তো দূরের কথা এক দশকেও কেজি প্রতি ১,২০০ টাকা থেকে ১,৪০০ টাকা দামের ইলিশ মাছ কিনে খেতে পারেন না বা আর্থিকভাবে তেমন একটা সুযোগ হয়ে ওঠে না।

তাছাড়া আমাদের দেশে ইলিশ মাছ কেটে বাজারে বিক্রি করার কোন প্রচলন বা ব্যবস্থা নেই। আর আমাদের দেশের বাজারগুলোতে যদি দেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশ কেটে কেটে বিক্রি করার কোন বিকল্প ব্যবস্থা থাকত, তাহলে আমাদের মতো অনেক সাধারণ মানুষ অল্প করে কিনে হলেও ইলিশ মাছ খাওয়ার সুযোগ পেতেন। ১,২০০ টাকা কেজি ওজনের দামে একটি ইলিশ কেটে বিক্রয় করলে ১০০ গ্রামের দাম পড়ে ১২০ টাকা। সেদিক বিবেচনা করলে আমরা অল্প হলেও সাধ্যের মধ্যে আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশের স্বাদ কিছুটা হলেও গ্রহণের সুযোগ পেতম।

আর এদিকে কিনা আমরা হাসাহাসি করি, ভারতের লোকেরা নাকি খুব কৃপন। তারা ৭ জনে মিলে একটি ইলিশ মাছ কিনে ভাগাভাগি করে নিয়ে যায়। আরে ভাই ভারতের লোকেরা তো ইলিশ মাছ আমাদের দেশে থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে আমাদের বাংলাদেশই তো আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। বিষয়টি আসলে তাই নয় কি?

এবার আমি একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আচ্ছা আপনারা বলুত তো যারা ইলিশ মাছ ধরেন ও ব্যাবসার সাথে জড়িত তারা বাংলাদেশের কোন পদ্মা কিংবা মেঘনা নদী আমাদের সরকারের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা দিয়ে ইজারা বা লিজ নিয়ে ইলিশ চাষ করছেন, যাতে প্রতি কেজি ইলিশের দাম ৮০০ টাকা থেকে ১,২০০ টাকা দাম পড়ে যায়। নাকি তারা বাংলাদেশের সব নদ-নদী লিজ নিয়ে তার সাথে আরো হাজার হাজার কোটি টাকা উৎপাদন ব্যয় করে ইলিশ মাছ চাষ করেন। যাতে আমাদের দেশের জাতীয় সম্পদ ইলিশ এতো বেশি দাম দিয়ে কিনে খেতে হবে। এর জবাব আদৌ কারো কাছে আছে বলে মনে হয় না।

অথচ আমার গ্রামে একজন সাধারণ মাছ চাষী ৩ লক্ষ টাকা ব্যয় করে তিন বছরের জন্য ৪ বিঘা মাপের পুকুর লিজ নিয়ে আরো লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে ভালো জাতের (ব্রিগেট/রুই/কাতল) মাছ চাষ করে বছরে আনুমানিক দুই থেকে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা আয় করেন। সেই মাছ স্থানীয় বাজারে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন কিংবা তা একাধিক ব্যাবসায়ীর হাত ঘুরে পরিবহণ খরচসহ ঢাকার বাজার পর্যন্ত পৌছে এর দাম সর্বোচ্চ ৩৫০-৪০০ টাকা কেজি প্রতি হয়ে থাকে। তাহলে প্রকৃত কোন উৎপাদন খরচ না থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র নদীতে মাছ ধরা, পরিবহণ, সংরক্ষণ এবং বিভিন্ন আড়তদারের হাত ঘুরে ইলিশের দাম এত বেশি কেন হবে তা ঠিক আমার বোধগোম্য নয়।

আমাদের জাতীয় সম্পদ ইলিশ মাছ তো মহান আল্লাহ তালার অসীম নেয়ামত স্বরুপ আমাদের দান করেছে। তাহলে কোন যুক্তিতে এর দাম এত বেশি হয়? কারো কাছে কি এর কোন সঠিক জবাব জানা আছে কি? নাকি নদী থেকে মাছ ধরতে এবং তা বরফে সংরক্ষণ করা পরিবহণ করে সারা দেশব্যাপী পৌঁছে দিতে হাজার কোটি টাকা লেগে যায়। যার জন্য চাঁদপুর থেকে আমাদের নাটোরে আসতে ৫০০ টাকার ইলিশ এক লাফে ১২,০০ টাকা থেকে ১,৫০০ টাকায় যায়। আর সারা দেশে শুধু ইলিশ মাছ পরিবহণ করতেই কী এত বেশি দাম হয়ে যেতে পারে?

এসবের আসল ও শক্ত জবাব হলো তা একেবারেই না। এখানে আসলে কিছু অতি মুনাফা লোভী ও অসাধু ইলিশ মাছ মজুতদার ও ব্যাবসায়ীরা বিভিন্ন স্তরে সিন্ডিকেটের মাধম্যে বিভিন্ন অপকৌশলে প্রতি নিয়ত আমাদের মতো সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের ইচ্ছে মতো হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা লুটে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এই অশুভ সিণ্ডিকেট নিয়ে কোন আমাদের দেশের মিডিয়ায় গণ সচেতনতা মুলক নিউজ বা পোস্ট দেখা যায় না। আবার এহেন অবৈধ সিন্ডিকেট বন্ধ করতে লক্ষ্যনীয় কোন কার্যকর পদক্ষেপ আজো আমাদের চোখে পড়েনি। যা হোক আমার আর কিছুই বলার নেই এই প্রসঙ্গে। #

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.