--- বিজ্ঞাপন ---

স্বাধীনভাবে চলতে পছন্দ করে চীন-ভারত

0

জন্মের শুরু থেকেই ভারত ও চীনেরে মধ্যে চরম বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দেশ দুটির মাঝে সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বিশেষ করে বৈদেশিক নীতি বা পরিকল্পনা প্রনয়ণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এই দেশ দুটি শুরু থেকে একেবারেই স্বাধীন এবং নিজস্ব ছক অনুযায়ী কাজ করে যায়। তাছাড়া নিজ দেশের স্বার্থ হাসিলের ক্ষেত্রে এরা কখনো কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় দেয় না। বরং ভারত কিন্তু বৈদেশিক কৌশলগত সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মার্কিন ও রাশিয়ান উভয় শিবিরের সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সখ্যতা বজায় রেখে চীনকেও টেক্কা দিয়েছে।

চলতি ২০২২ সালের শুরু থেকে চীন এবং ভারত নিরবিচ্ছিন্নভাবে একেবারেই পানির দামে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্রুড ওয়েল বা জ্বালানী তেল ক্রয় করে বড় ধরণের স্ট্যাটিজিক ওয়েল রিজার্ভ গড়ে তুলেছে। অবশ্য অপরিশোধিত তেল কেনার ক্ষেত্রে এই দেশ দুটি শুধু রাশিয়া নয় বরং সৌদি আরবসহ বিশ্বের অন্যান্য তেল ক্রয়ের উৎসগুলোকে সার্থকভাবে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা বিশ্বকে অনেক আগেই পেছনে ফেলে দিয়েছে। অথচ ইউরোপের উন্নত দেশগুলো শুধুমাত্র আমেরিকার পরিকল্পনা মাফিক রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলতে গিয়ে আজ নিজ দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

চীন খুব সম্ভবত বিগত মাত্র এক বছরেই প্রায় ১১৮ বিলিয়ন ডলারের বিপুল পরিমাণ তেল কিনেছে রাশিয়া ও অন্যান্য উতস হতে। আবার চীন এক মাসের হিসেবে শুধু গত মে মাসেই রাশিয়া থেকে ৭.৪৭ বিলিয়ন ডলারের তেল ও গ্যাস কিনেছিল। সে হিসেবে চীন গত ৭ মাসে রাশিয়া থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলারের রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস সংগ্রহ করে নিজ দেশে তেলের বিশাল মজুত গড়ে তুলে।

অন্যদিকে ভারতও কিন্তু ঠিক একই সময়ে প্রায় ৩৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানী তেল কিনে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে এবং এখনো পর্যন্ত হচ্ছে। তাছাড়া স্বল্প দামে অপরিশোধিত তেল কিনে এনে তা নিজস্ব রিফাইনিং প্লান্টে পরিশোধন করে ভারত বর্তমানে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর কাছে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যে জ্বালানী তেল রপ্তানি করে যাচ্ছে। অথচ ভারত নিজে তেল উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও সুদক্ষ পরিচালনায় ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার আলোকে নিজেই এখন কিন্তু জ্বালানী তেল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে।

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ভারত অতিরিক্ত মোট প্রায় ৭০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানী তেল খুব কম দামে রাশিয়ার থেকে আমদানি করে। যেখানে কিনা দেশটি ২০২১ সালের সারা বছরে রাশিয়ার কাছ থেকে ১২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল কিনেছিল। মার্কিন ও তার পশ্চিমা শিবিরের প্রবল বাধা ও সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়েই নিজস্ব পরিকল্পনা মাফিক স্ট্যাটিজিক ওয়েল রিজার্ভ সুরক্ষিত করতে রাশিয়া থেকে এখনো পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ তেল আমদানি করে যাচ্ছে ভারত। আর চীনের অবস্থা আগেই তো তুলে ধরা হয়েছে।

এখন চীন ও ভারতের মতো দেশগুলোকে নিয়ে যতই সমালোচনা করা হোক না কেন, দেশ পরিচালনার দক্ষতা এবং বৈদেশিক নীতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে এরা একেবারেই স্বাধীন এবং নিজের শক্ত অবস্থান বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছে। যেখানে কিনা অতীতের এক সময়ের সুপার পাওয়ার যুক্তরাজ্য বর্তমানে আমেরিকার হাতের পুতুল সেজে নিজের অর্থনীতিকে একেবারেই ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে। এদিকে আমেরিকা নিজেই কিনা তার অর্থনৈতিক সংকট এড়াতে বিপুল পরিমাণ তেল চীনের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে।

বর্তমানে চীন আসলে অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী তা জানতে হলে আমাদের প্রথমে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করতে হবে। চলতি ২০২২ সালের জুলাই মাসের হিসেব অনুযায়ী চীনের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩.০১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। একই সময়ে ভারতের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৫৭২.৭ বিলিয়ন ডলার। তার মানে দেশ দুটি চলমান বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও তারা কিন্তু ঠিকই তাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা ধরে রেখেছে।

অথচ এদিকে কিনা স্বল্প আয়ের কিছু দেশ নিজেদের সিঙ্গাপুর বানাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একেবারেই তলানিতে নিয়ে গেছে। কোন কোন দেশের বৈদেশিক ঋন ও দেনা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, তারা নিজেই নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বসে আছে। কেউ আবার এক বছরের বৈদেশিক ঋনের কিস্তির আসল ও সুদ শোধ করতে গিয়ে এক রকম অজান্তেই আরেক দেশ, বিশ্বব্যাংক কিংবা আইএমএফ এর জটিল শর্তের ঋনের জালে জড়িয়ে যাচ্ছে।

মনে রাখতে হবে চলমান বৈশ্বিক মহামন্দা এবং পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে স্বল্প আয়ের দেশগুলো কিন্তু বড় ধরণের ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই দীর্ঘ মেয়াদি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় দেশের চাহিদা মাফিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখার পাশাপাশি অন্তত এক বছরের জ্বালানি তেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিকল্প আর কিছুই হতে পারে না।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.