--- বিজ্ঞাপন ---

বাংলার বাঘিনীরা চ্যাম্পিয়ন ট্রফি নিয়েই ফিরেছেন!!

0

খেলার আগে বাংলাদেশ টিমের ফুটবলার সানজিদা তারঁ ফেসবুক পেজে লিখেছিলেনঃ
” যাঁরা আমাদের এই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করতে উৎসুক হয়ে আছেন, সেসব স্বপ্নসারথিদের জন্য এটি আমরা জিততে চাই। নিরঙ্কুশ সমর্থণের প্রতিদান আমরা দিতে চাই। ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে এক পাশে রেখে যে মানুষগুলো
আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই। আমাদের এই সাফল্য হয়তো আরও নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই। পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রামবাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতিটি পর্ব খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়ব এমন নয়, ১১ জনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে আমরা জীবনযুদ্ধেই লড়ে অভ্যস্ত। দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাব। জয়-পরাজয় আল্লাহর হাতে। তবে বিশ্বাস রাখুন, আমরা আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখব না, ইনশাআল্লাহ।দোয়া করবেন আমাদের জন্য। “

কথা রেখেছেন বাঘিনীরা। বাংলার মাটিতে তাই তাদের আজ খোলা গাড়ীতে বিরোচিত সর্ম্বধনা। পুরো ঢাকা শহর আজ স্থবির। কারও মূখে যানজটের বিরক্তি নেই। তাদের সাথে সারা দেশের মানুষ আজ আনন্দ প্রকাশ করছে। অথচ ক’দিন আগেও এমনটি কেউ আশা করেনি। সারা দেশকে উৎসবের রঙে রাঙিয়ে দিয়ে সাফ শিরোপা ট্রফি নিয়ে আজ দেশে ফিরেছেন নারী ফুটবলাররা। বিমান বন্দরে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এই ট্রফি সারা দেশের মানুষকেই উৎসর্গ করেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘আমাদেরকে এতো সুন্দরভাবে বরণ করে নেওয়ার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। এখানে আমাদের মন্ত্রী মহোদয় আছেন, ফেডারেশনের কর্মকর্তারা আছেন তাদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞবাংলাদেশের মেয়েদের, বাংলাদেশের ফুটবলকে আপনারা যে এতো ভালোবাসেন, সেজন্য আমরা অনেক অনেক অনেক গর্বিত। এই ট্রফি বাংলাদেশের ১৬ কোটি বলুন, ১৮ কোটি বলুন বা ২০ কোটি বলুন, এই সকল মানুষের। ’ টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ গোলদাতার পাশাপাশি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জেতা সাবিনা দিয়েছেন আরও সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি, ‘আমরা একটা ভালো ফল করে এসেছি। আমাদের এখন চিন্তা হচ্ছে সামনের দিকে কীভাবে আরও এগিয়ে যাওয়া যায়। ’

শিরোপাজয়ী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও অভিভূত বিমানবন্দরে তাদের এমন রাজসিক বরণে, বলেন ‘প্রথমে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীকে আজকের এই রাজসিক আয়োজনের জন্য। আমাদের মাননীয় সভাপতি কাজী সালাহউদ্দিন ও ফুটবল ফেডারেশনকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমাদের এই পথচলা আসলে অনেক দিনের। ২০১২ সালে প্রমে আমাদের পরিবর্তনটা শুরু হয়েছিল। সেটার পরিপ্রেক্ষিতে সবার অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকের এই সফলতা। ’ ট্রফি নিয়ে বিমান থেকে নামার পর ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলসহ, মন্ত্রণালয় ও বাফুফের অন্যান্য কর্মকর্তারা মেয়েদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর মহাসমারোহে কেক কাটেন সাবিনা খাতুনরা। বিমানবন্দর থেকে হাজারো মানুষের অভিনন্দনের মাঝে ছাদ খোলা বাসে বাফুফে ভবনে আসছেন এই কৃতী ফুটবলাররা।

ইতিহাস গড়ে সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এজন্য তাদের আর্থিক পুরস্কার দেওয়া হবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ফুটবল মহলে। এবার এ নিয়ে মুখ খুললেন বাফুফে প্রেসিডেন্ট কাজী সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমি তো পারলে প্রত্যেককে ২ কোটি টাকা করে দিয়ে দিতাম। তবে সেটা সম্ভব না।’ বাফুফে ভবনে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাফজয়ী মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

সেরা সাবিনা

বাংলাদেশ ৩-০ মালদ্বীপ,বাংলাদেশ ৬-০ পাকিস্তান,বাংলাদেশ ৩-০ ভারত,বাংলাদেশ ৮-০ ভুটান,বাংলাদেশ ৩-১ নেপাল
সাফ নারী চাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী দল। বাংলাদেশ নারী দলের ক্যাপটেন সাবিনার ব্যাক টু ব্যাক হ্যাট্টিক। টুর্নামেন্টে সাবিনার ৮ গোল। টুর্নামেন্ট টপ স্কোরার সাবিনা। টুর্নামেন্ট সেরা সাবিনা।

কি লিখেছেন গোলরক্ষক রূপনা চাকমা

সাফ নারী ফুটবল- ২০২২ এর এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দিয়েছে ২৩ গোল, খেয়েছে মাত্র ১টি গোল। পুরা টুর্নামেন্টে বল মাত্র ১ বার তাকে ফাঁকি দিতে পেরেছে, তাও ফাইনালে। তাইতো টুর্নামেন্টের সেরা গোল কিপার হয়েছে রূপনা চাকমা। এই সেই রূপনা চাকমা দারিদ্র্যতার কষাঘাতে যাদের দিন কাটে। যার ঘরে বৃষ্টি আসলে আর থাকা যায়না। বুধবার তাঁর ফেসবুক পেজ এ গোলরক্ষক রূপনা চাকমা লিখেছেন, ধন্যবাদ রাঙ্গামাটি ডিসি স্যারকে, আজকে আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমার পরিবারের অবস্থা দেখে আসার জন্য। এছাড়া বিভিন্ন মিডিয়াও সাংবাদিক বৃন্দকে আমাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই আনন্দটা হয়তো বলে শেষ করতে পারবো না – এখানে আর একটা কথা না বললে নয়, আমি আজ এই পর্যায়ে আসার জন্য যে সমস্ত স্যাররা আমাকে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতিও আমি চির কৃতজ্ঞ।

আজকে যারা আমাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে এবং সাপোর্ট দিচ্ছেন তাদেরকেও আমি অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আজকের দিনটা আমার জন্য বিশেষ দিন। ডিসি স্যার নিজেই আমার বাড়িতে গিয়ে ১.৫ (দেড় লক্ষ) টাকা চেক মায়ের হাতে প্রদান করলেন এবং আমার ছোট্ট বেড়া ঘরটি ভেঙ্গে একটি নতুন পাকা ঘর করে দেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আরও আমাদের গ্রামে বাঁশের ভাঙ্গা ব্রিজটা নতুন করে পাকা ব্রিজ করে দেওয়ার জন্য কথা দিয়েছেন। জানিনা এইসব আমার পাওয়ার যোগ্য কিনা তবে আমি জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনতে চাই। সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাংলাদেশকে আমরা রিপ্রেজেন্ট করতে পেরেছি এবং শ্রেষ্ঠ গোল রক্ষক হিসেবে আমি নির্বাচিত হয়েছি। শুধু এখানে নয় আমি আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই এবং বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে আরো বড় আকারে রিপ্রেজেন্ট করতে চাই। আশা করি আপনাদের এই রকম সাপোর্ট, অনুপ্রেরণা এবং আর্শিবাদ আমার মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে- আরও দূরে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাহস যোগাবে💪
ডিসি স্যারের সুস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করি।

রূপনা চাকমার বাড়ী করে দেয়া্র ঘোষণা ব্যারিষ্টার সুমনের

রুপনা চাকমার বাড়ির ছবি দেখে মর্মাহত হয়ে তার বাড়ি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ব্যারিস্টার সুমন। তিনি বলেন, আমি রুপনার মার একটি ছবি দেখেছি। তিনি একটি ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ঘরটি মানুষ থাকার জন্য একেবারেই অনুপযোগী। রুপনা আমাদের বোন। আমি আমার একাডেমির সকল খেলোয়াড়ের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী সপ্তাহেই তাকে একটি ঘর বানিয়ে দিতে চাই। তিনি আরও বলেন, আমরা সবাই সফল হওয়ার পরে পাশে এসে দাঁড়ায়। আমি নিজেও এক্ষেত্রে সেটি করছি। এজন্য আমি সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। দেশের ফুটবলের উন্নয়নে সকল বিত্তবানদেরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

বিল বোর্ডে মাথা লেগে আহত ঋতুপর্ণা

বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পা রাখেন সাবিনারা। সেখান থেকে মতিঝিল যাওয়ার পথে হোটেল রেডিসনের সামনে বিলবোর্ডের কোণায় খোঁচা লেগে মাথায় আঘাত পেয়েছেন ঋতুপর্ণা। তখনই টিম বাস থেকে তাকে নামিয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু। তার মাথায় দুটো সেলাই দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

কারিগর হলেন ছোটন

মেয়েদের ফুটবলে শুরু থেকেই দলের সঙ্গে আছেন যে তার নাম না বললেই নয়। তিনি গোলাম রব্বানী ছোটন। ২০০৯ সাল থেকে আছেন নারী দলের কোচ হিসেবে। শুরুতে সবাই তাকে তাচ্ছিল্য করতেন। দেখা হলে উপহাস করতেন। আজ সাফের ট্রফি জয়ের পর সে সব দিনের কথা মনে করে রব্বানী বলছিলেন, ‘যখন আমি কোচিং শুরু করি তখন আমার বন্ধুরা বলতো ওই যে মহিলা কোচ যাচ্ছে। রাস্তায় যখন হেঁটে যেতাম আমাকে দেখে হাসাহাসি করতো। ঠাট্টা করতো আমাকে নিয়ে।’সেই গোলাম রাব্বানী ছোটন আজ সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের কোচ, নারী দলের এই সাফল্যের কারিগর। ##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.