--- বিজ্ঞাপন ---

পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্য এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

0

বাংলাদেশে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য পূর্বের চেয়ে আরও সহজ হচ্ছে। সময় ও ব্যয় সাশ্রয় করার লক্ষ্যে আমদানি – রফতানি বাণিজ্য অঅরও গতিশীল করতে বন্দর কর্তৃপক্ষও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। ইউরোপের সাথে জাহাজ চলাচল সহজ হলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। নানা সুযোগ সুবিধার বৃদ্ধি কারণে তৈরি পোশাক শিল্পে একের পর এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হচ্ছে। গত ২০২১ সালের ডিসেম্বরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি রীতিমতো চমক সৃষ্টি করেছে। বিশে^র বিভিন্ন দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতের উপর নির্ভর করে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড পরিমাণে ৪ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এটি ছিল আসলে একক কোন মাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পরিমাণের রপ্তানি আয়ের রেকর্ড। যেখানে কিনা বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) এর প্রকাশিত তথ্য মতে, গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে রপ্তানির জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরের নভেম্বর মাসে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার। তবে তা গত অক্টোবর মাসের তুলনায় ৬৮৬ মিলিয়ন ডলার কমে ছিল। গত ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে প্রকৌশল পণ্য রপ্তানিতে ঋণাত্মক ১৮ দশমিক ০৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। তাছাড়া ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ৩৮ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলারের পন্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আবার ২০২১-২২ অর্থবছরের অক্টোবর মাসে ৪ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বর মাসে মোট ৪ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করা হয়। যা ছিল রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেকটাই বেশি।

জানা গেছে, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত দেশগুলোতে করোনা মহামারির পরবর্তী সময়ে তৈরি পোশাকের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য সার্বিকভাবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাতে এই বিশাল অর্জন সম্ভব হয়েছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয় ২৪ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করেছে। যা কিনা পাকিস্তানের এক বছরের মোট রপ্তানি আয়ের সমান । দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি আয় অর্জনকারী দেশ হিসেবে এরই মধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। সূত্র জানায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ অবিশ্বাস্যভাবে প্রথম বারের মতো ৫২ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করতে পারে বলে আশাবাদী। গত ২০২১ সালে জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৫ মাসে পাকিস্তান মোট রপ্তানি আয় অর্জন করেছে ১২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যেখানে দেশটি ২০২১ অর্থবছরে মোট রপ্তানি আয় করে ২৫ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২০ সালে মোট রপ্তানি আয় করে ২৩ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া ভারত ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৯ নাসে বিশ্ব বাজারে মোট পন্য রপ্তানি করেছে ২৬৩ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০২০ সালে ভারতের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের ১২ মাসে মিয়ানমার ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করেছিল। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উদীয়মান এক অর্থনীতির দেশ ভিয়েতনাম ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে মোট ৩৩৬ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে। যেখানে দেশটি ২০২০ সালে ৩১৮ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯ সালে ২৮০ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করেছিল। তবে একক মাস হিসেবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩৪ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলার এবং নভেম্বর মাসে ৩১ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে ভিয়েতনাম। এদিকে বিশ্বের ইকোনমিক পাওয়ার হাউস খ্যাত রেড জায়ান্ট চীন গত ২০২১ সালের শুধু নভেম্বর মাসেই ৩২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পন্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছে। আর একক কোন মাসে বিশ্বের আর কোন দেশই এত বিপুল পরিমাণ পন্য ও অর্থের রপ্তানি করতে সক্ষম হয়নি।

২০২০ সালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব বাজারে প্রথম স্থানে থেকে চীনের মোট রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বা ২,৫০০ বিলিয়ন ডলার এবং দ্বিতীয় স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট রপ্তানি আয় ১ দশমিক ৬৫ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১,৬৪৬ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া তৃতীয় স্থানে জার্মানির ১ দশমিক ৪৯ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১,৪৮৭ বিলিয়ন ডলার, চর্তুথ স্থানে নেদারল্যান্ডস ৭২১ বিলিয়ন ডলার, পঞ্চম স্থানে জাপানের ৭০৬ বিলিয়ন ডলার, ষষ্ঠ স্থানে ফ্রান্সের ৫৫৫ বিলিয়ন ডলার, সপ্তম স্থানে দক্ষিণ কোরিয়ার ৫৪২ বিলিয়ন ডলার, অষ্টম স্থানে হংকং ৫৩৬ বিলিয়ন ডলার, নবম স্থানে ইতালির ৫৩৩ বিলিয়ন ডলার এবং দশম স্থানে থেকে মেক্সিকোর মোট রপ্তানি আয় ছিল ৪৭২ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যতম সামরিক সুপার পাওয়ার রাশিয়ার মোট রপ্তানি আয় ৪২৩ বিলিয়ন ডলার এবং তুরস্কের মোট রপ্তানি আয় ছিল ১৭২ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া একই সময়ে ইরানের মোট মাত্র ২৭ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও তেল বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করতে সক্ষম হয়। অবশ্য আমেরিকার এক তরফা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধের মুখে স্বাভাবিক গতিতে ফিরতে পারছে না ইরানের জাতীয় অর্থনীতি এবং বৈদেশিক রপ্তানি খাত। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরব ২০২০ সালে মোট ২৫২ বিলিয়ন ডলারের পন্য ও তেল রপ্তানি করে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম থেকে এখনও সরাসরি পণ্য ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকাতে যায় না। এ তিন দেশে পণ্য পাঠাতে হলে ট্রানজিট বন্দর হিসেবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাং ও কলম্বোর মাধ্যমে দিতে হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এ তিন বন্দরে পণ্য পাঠানোর পর এখান থেকে পুনরায় জাহাজিকরন করে অন্যান্য দেশে যায়। আমদানির ক্ষেত্রে একই অবস্থা। বিশেষ করে কন্টেনার পণ্য এভাবে বছরের পর বছর আনা নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি ইউরোপের ইতালীতে এই মাসে প্রথম সরাসরি পণ্য পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে প্রেরিত এ যাত্রা যদি সফল হয় তাহলে অনেকে সরাসরি পণ্য পাঠাতে আগ্রহী হবে। এতে সময় ও ব্যয় যেমন কমবে তেমনি পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রেও ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.