--- বিজ্ঞাপন ---

একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন সালমন রুশদি, হাতও অকেজো

0

একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন লেখক সালমন রুশদি। আড়াই মাস আগে নিউ ইয়র্কে স্টেজে ছুরি নিয়ে হামলা করা হয়েছিল তাঁর উপর। চোখের উপর পড়েছিল ধারালো কোপ। সেই হামলার পর দীর্ঘদিন ধরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন রুশদি। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। অবশেষে রুশদীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুললেন তাঁর প্রতিনিধি অ্যান্ড্রু ওয়াইলি। তিনি যা জানিয়েছেন, তার সারমর্ম হল, গত ১২ অগস্ট নিউ ইয়র্কের ওই মারাত্মক হামলা জীবন বদলে দিয়েছে রুশদির। এক স্প্যানিশ পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুশদির শারীরিক অবস্থার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন অ্যান্ড্রু। তিনি বলেছেন, ‘‘ওঁর ক্ষতস্থানগুলি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ এবং গভীর। একটি চোখের দৃষ্টিও হারিয়েছেন উনি।’’

নিউইয়র্কের শতকা ইনস্টিটিউশনে শিল্পীদের স্বাধীনতা নিয়ে বক্তৃতা দিতে ওঠার পরই এক যুবক হামলা চালান। রুশদীর চোখে, ঘাড়ে এবং শরীরে এলোপাথারি ছুরির কোপ বসাতে শুরু করেন। অ্যান্ড্রু বলেছেন, ‘‘ওঁর ঘাড়ে তিনটি গভীর ক্ষত ছিল, বুকে এবং শরীরের উপরের দিকে আরও ১৫টি গুরুতর আঘাত লাগে। ছুরিতে ওঁর দু’হাতের বহু স্নায়ু নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ফলে ওঁর একটি হাতও অকেজো হয়ে যায়।’’

তবে রুশদি এখনও হাসপাতালেই রয়েছেন কি না তা স্পষ্ট করে জানাননি অ্যান্ড্রু। যেমন তিনি জানাননি, লেখকের কোন চোখ এবং কোন হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অ্যান্ড্রু শুধু বলেছেন, ‘‘এটাই বড় কথা যে, উনি প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন এবং ওঁকে শেষপর্যন্ত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।’’মলায় লেখকের একটি হাতও অকেজো হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন লেখকের এজেন্ট।

সালমান রুশদী ভারতের স্বাধীনতার দু মাস আগে বোম্বেতে (বর্তমান মুম্বাই) জন্মগ্রহণ করেছিলেন। চৌদ্দ বছর বয়সে তাকে ইংল্যান্ডে পাঠানো হয়। তখন ভর্তি হয়েছিলেন রাগবি স্কুলে। পরে ইতিহাসে অনার্স ডিগ্রি নেন ক্যামব্রিজের মর্যাদাপূর্ণ কিংস কলেজ থেকে। এরপর ব্রিটেনের নাগরিকত্ব নেন এবং তার মুসলিম বিশ্বাস থেকে সরে দাঁড়ান। কিছুদিন অভিনেতা হিসেবে কাজ করা ছাড়াও বিজ্ঞাপনের কপিরাইটিংয়ের কাজও করেছেন। তার প্রথম প্রকাশিত বই গ্রিমাস খুব একটা সাফল্য পায়নি। তবে সমালোচকরা তখনই তার মধ্যে সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলেন। এরপর দ্বিতীয় বই মিডনাইট চিলড্রেন লিখতে তিনি পাঁচ বছর সময় নেন। বইটি বুকার পুরষ্কার লাভ করে। এটি ছিলো দারুণভাবে প্রশংসিত এবং বিক্রি হয়েছিলো প্রায় পাঁচ লাখ কপি। মিডনাইট চিলড্রেন ছিলো ভারতকেন্দ্রিক।

নিউইয়র্কে হামলার শিকার স্যার সালমান রুশদী গত পাঁচ দশক ধরে তার সাহিত্য কর্মের জন্যই বারবার হত্যার হুমকি পেয়েছেন।তার অনেক উপন্যাসই ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছিলো যার মধ্যে আছে ১৯৮১ সালে বুকার পুরষ্কার জেতা তার দ্বিতীয় উপন্যাস মিডনাইট চিলড্রেন। তবে ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হওয়া তার চতুর্থ বই স্যাটানিক ভার্সেস হলো তার সবচেয়ে বিতর্কিত কাজ যা তাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নজিরবিহীন বিপদে ফেলে দেয়। বইটি প্রকাশের পর তাকে হত্যার হুমকি আসে যা তাকে আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করে। ব্রিটিশ সরকার তখন তাকে পুলিশী নিরাপত্তার আওতায় নিয়ে আসে।যুক্তরাজ্য ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। পশ্চিমা বিশ্বের লেখক ও বুদ্ধিজীবীরা মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে বইটির কারণে মুসলিমদের দিক থেকে আসা প্রতিক্রিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন।

১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয় দ্য স্যাটানিক ভার্সেস যা তার প্রাণনাশের হুমকি সৃষ্টি করে। এই বইটি তীব্র ক্ষোভের তৈরি করে মুসলিমদের অনেকের মধ্যে। তারা মনে করেন বইটিতে ধর্ম অবমাননা করা হয়েছে। ভারতই প্রথম এই বইটি নিষিদ্ধ করেছিলো। পরে পাকিস্তানসহ অন্য বেশ কিছু মুসলিম দেশ এবং দক্ষিণ আফ্রিকাও একই পদক্ষেপ নেয়।  মুসলমানরা মনে করেন বইটিতে ইসলাম ধর্ম ও মহানবীকে চরমভাবে উপহাস করা হয়েছে। উনিশশো উননব্বই সালের জানুয়ারিতে ব্রাডফোর্ডের একদল মুসলিম বইটির একটি কপি পুড়িয়ে দেয় এবং নিউজ এজেন্ট ডব্লিউএইচএস স্মিথ তাদের ডিসপ্লে থেকে বইটি সরিয়ে নেয়। রুশদী ধর্ম অবমাননার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন। ফেব্রুয়ারিতে উপমহাদেশে রুশদী বিরোধী দাঙ্গায় অনেকে নিহত হন। তেহরানে ব্রিটিশ দূতাবাসে পাথর ছোড়া হয় আর রুশদীর মাথার দাম ঘোষণা করা হয় তিন মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যে কিছু মুসলিম নেতা লেখা পরিবর্তনের আহবান করলেও আরেকটি অংশ খোমেনিকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও অন্য পশ্চিমা দেশগুলো হত্যার হুমকির তীব্র নিন্দা করে।

বিক্ষোভের জেরে রুশদী স্ত্রীসহ পুলিশী নিরাপত্তার অধীনে আত্মগোপনে চলে যান। সর্বশেষ গত ১২ আগষ্ট নিউইয়র্কের শতকা ইনস্টিটিউশনে শিল্পীদের স্বাধীনতা নিয়ে বক্তৃতা দিতে ওঠার পরই এক যুবক হামলা চালান। হামলাকারী রুশদীর চোখে, ঘাড়ে এবং শরীরে এলোপাথারি ছুরির কোপ বসান। গুরুতর আহত হলেও প্রাণে বেচেঁ যান রুশদী।## সূত্রঃ আনন্দবাজার/বিবিসি

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.