--- বিজ্ঞাপন ---

সিন্ডিকেটের হাতে চিনির বাজার, দাম বাড়ছেই

0

বাজারে চিনির সঙ্কট চলছে। রবিবার চট্টগ্রামের খুচরা বাজারে সাদা চিনি ১১০ টাকা এবং লাল চিনি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ক’দিন আগেও চিনির কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পর্যাপ্ত চিনি আমদানি ও মজুদ থাকার পরও খুচরা বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। অভিযানের ভয়ে অনেকে বিক্রিও বন্ধ রেখেছেন বলে জানা গেছে। দেশের বৃহত্তম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জে চড়া দামে হাতবদল হচ্ছে চিনির ডেলিভারী অর্ডার (ডিও)। খাতুনগঞ্জে চিনির ট্রাক ঢুকার পরিমানও প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। বেশি দামে চিনি নিতে চাইছেন না খুচরাও ব্যবসায়ীরাও।
চট্টগ্রামের অন্যতম খুচরা বাজার চৌমুহনি বাজারের দোকানদার তওহিদুল আলম বলেন, চিনির দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে আমরা নিজেরাই সমস্যায় পড়ছি। এত দামে চিনি বিক্রি করার চেয়ে না করাই ভালো। তিনি বলেন, বেশি দামে চিনি কিনলেও ভোক্তারা বুঝেন না, ফলে চিনি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। তাছাড়া যে কোন ম্যাজিস্ট্রেসি অভিযানের ভয়ে চিনি বিক্রিও বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকে। পরিচিত গ্রাহক ছাড়া চিনি দিচ্ছেন না অনেকে।’
খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী জামাল হোসেন জানান, ‘চিনির ব্যবসা তো পাচঁ কোম্পানীর হাতে। এর মধ্যে এখন বড় দুটি কোম্পানীর হাতে চিনির স্টক রয়েছে। বাকিদের হাতে তেমন নেই। চিনির বাজার মুক্ত না করলে দাম ধরে রাখা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিনির বাজারকে উম্মুক্ত করে দিতে হবে। তা না হলে এভাবে বাজার উঠানামা করবে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাত্র ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এত কম সময়ের মধ্যে এত বেশি পরিমান দাম কখনও বাড়ে নি। যার ফলে চিনির বাজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা বর্তমানে নানা সিদ্ধান্তহীনতায় ভ‚গছে।’
দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারী বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ৫০ কেজির চিনির বস্তায় দাম বেড়েছে ৪৫০ টাকা। দাম কমার কোন লক্ষণ নেই। চিনি নিয়ে রীতিমতো বেকায়দায় আছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অনেকে এত বেশি দামে চিনি কিনতে চাইছে না। আবার পাইকাররা দাম কমিয়ে চিনি বিক্রিও করছেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশে চিনির চাহিদা ২০ লাখ টনের মতো। দেশে চিনি উৎপাদিত হয় ১ লাখ টনের কাছাকাছি। গত ২০২১ সালে দেশে চিনি আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ মেট্রিক টন। ২০২২ সালের জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ লাখ মেট্রিক টন চিনি আমদানি হয়েছে। এত চিনি আমদানিও পরও কয়েকদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিনিতে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা দাম বাড়ার হেতু নিয়ে নানা রহস্যের জম্ম দিচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে এক শ্রেনীর ব্যবসায়ী চিনির বাজার অস্থির করে ফায়দা লুটতে ব্যস্ত রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণ করে পাচঁ শিল্পগ্রæপ। বাজারের চাহিদার উপর ভিত্তি করে ৯৫ শতাংশই আমদানি নির্ভর। আর এর মধ্যে ৭০ শতাংশই আমদানি করে সিটি ও মেঘনা গ্রæপ। বাকি চিনি আমদানি করে আবদুল মোমেন লিমিটেড, এস আলম সুগার মিল ও দেশবন্ধু সুগার মিল। আমদানি করা এসব চিনি সাধারনত বাজারে সরাসরি আসে না। মূলত খাতুনগঞ্জের বাজার থেকে এসব বিক্রি হয় ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) পদ্ধতিতে। ডিও হাতবদল হয় বেশি দামে। কারখানা মালিক প্রতিনিধির কাছ থেকে প্রথম পক্ষ ডিও’র মাধ্যমে সংগ্রহ করে চিনি। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা এসব ডিও সংগ্রহ করে মজুদ করে চিনি। আবার তৃতীয় পক্ষও ডিও’র মাধ্যমে চিনি সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেয়। বার বার ডিও হাতবদলের মাধ্যমে প্রতি কেজিতে চিনির দাম কয়েক টাকা করে বেড়ে যায়। শেষপর্যন্ত বেশি দামে ভোক্তাদের কিনতে হয়। চিনির দাম বাড়ার সাথে সাথে টিসিবির গাড়ীর সামনে লাইনও লম্বা হতে থাকে। টিসিবি সাধারনত উম্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে চিনি সংগ্রহ করে থাকে। তবে গত ১০ দিনে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারনে টিসিবিও বেকায়দায় রয়েছে।
খাতুনগঞ্জের চিনির ব্যবসায়ীরা জানান, কারখানা থেকে আগে যেখানে দিনে সাড়ে ৪ শ থেকে ৫শ ট্রাক চিনি আসতো সেখানে বর্তমানে আসছে দু’ থেকে আড়াইশ ট্রাকের মতো। পর্যাপ্ত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সঙ্কট।
জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে সবচেয়ে আগে চিনি আসে এস আলম কারখানা থেকে। যেহেতু এ কারখানাটি চট্টগ্রামে, তাই চিনি এস আলম কারখান থেকে আগে ঢুকে। চিনির দাম বাড়ার পর পর চিনি আসার গাড়ীর পরিমানও কমে যায়। ফলে হু হু করে দাম বাড়তে থাকে।
কেন এ অবস্থা? নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কারখানা মালিকের প্রতিনিধি বলেন, দাম বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে গ্যাস। গ্যাস সঙ্কটের কারণে উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক বাজারেও চিনির বুকিং রেট বেশি। তাছাড়া সবচেয়ে বড় হলো ডলার সঙ্কট। ডলারের কারণে বিগত সময়ে অনেক লোকসান হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশের বড় দুটি গ্রæপের হাতে রয়েছে অধিকাংশ চিনি। তারাই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। চিনির বাজারে মাত্র পাচঁটি কোম্পানী দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য চালিয়ে আসছে। এদের কাছ থেকে বাজারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত না হলে চিনির বাজার কোন সময় স্বাভাবিক হবে না। চিনির বেশির ভাগই যেহেতু আমদানি নির্ভর। সেহেতু এক লাফে এত দাম বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে পরিস্থিতি যেদিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাতে নিত্য প্রয়োজনীয় এ ভোগ্য পণ্যের দামের নাগাল টেনে না ধরলে দাম আরও ধরাছোয়ার বাইরে চলে যেতে পারে বলে ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করেন।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.