--- বিজ্ঞাপন ---

কিভাবে চলছে কেনিয়া, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা

0

বিগত এক দশকে অবকাঠামো ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের নামে দীর্ঘ মেয়াদে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক ঋন নেয় পূর্ব আফ্রিকার দেশ কেনিয়া। এখন কিনা সেই বৈদেশিক ঋনের জালে ভয়ঙ্করভাবে আটকে গেছে দেশটির উন্নয়নের ভাগ্যের চাকা।

সেন্ট্রাল ব্যাংক অব কেনিয়ার দেয়া তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুন মাস পর্যন্ত কেনিয়ার বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমাণ অবিশ্বাস্যভাবে ৩৬.৪০ বিলিয়ন ডলারের সীমাকে স্পর্শ করেছে। দেশটিকে আবার সবচেয়ে বেশি ঋন দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাংক এবং একক কোন দেশ হিসেবে রেড জায়ান্ট চায়না। অথচ এখন কিনা এই পাহাড় সমান বৈদেশিক ঋন পরিশোধ করার মতো দেশটির হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার রিজার্ভ নেই। দেশটি ঋন নিয়ে যেসব নতুন নতুন ব্যয়বহুল অবকাঠাম নির্মাণ করেছে সেখান থেকে কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় ধরণের কোন সুযোগ পাচ্ছেনা কেনিয়ার সরকার। অথচ বিপুল পরিমাণ এই ঋনের বোঝা এখন দীর্ঘদিন বয়ে নিয়ে বেড়াতে হবে দেশটির সাধারণ জনগণকে। প্রথম দিকে কেনিয়ায় চলমান এসব বিদেশি ঋনের প্রকল্প দেশবাসীকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির স্বপ্ন দেখালেও বাস্তবে এখন তা কিনা এক রকম ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে যাচ্ছে।

ইউকীপিডিয়ার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, কেনিয়ার নমিনাল জিডিপির আকার ১১২ বিলিয়ন ডলার। আবার ২৫শে আগস্ট মাসের হিসেব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিনা মাত্র ৭.৬০৮ বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে দেশটি কিনা তার বৈদেশিক ঋনের আসল এবং সুদ পরিশোধের নুন্যতম ক্ষমতা রাখে না। ২০২১-২২ অর্থবছরের ১২ মাসে কেনিয়া বিশ্ব বাজারে মোট ৭.১২ বিলিয়ন ডলারের পন্য রপ্তানি করলেও তার বিপরীতে সারা বিশ্ব থেকে ২১.৩০ বিলিয়ন ডলারের পন্য আমদানি করে। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, কতটা ভারসাম্যহীন কেনিয়ার বৈদেশিক বাণিজ্য।

এদিকে কেনিয়ার মতো বৈদেশিক ঋন ও দেনার বোঝা মাথায় নিয়ে ডুবতে বসেছে আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কা ইতোমধ্যেই ৫০.৬ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋনের জালে জড়িয়ে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করে বসে আছে। অন্যদিকে আমেরিকা ও সৌদি আরবের মতো কিছু বন্ধু দেশের কাছে আপদকালীন আর্থিক সহায়তা ও ঋন নিয়ে কোন রকমে নিজেকে বেল আউট ঘোষণা করা থেকে রক্ষা করতে পেরেছে পাকিস্তান। তবে পাকিস্তানের চলমান এক দীর্ঘ মেয়াদী অর্থনৈতিক সংকট ও দৈন্যদশা কোন ভাবেই পিছু ছাড়ছে না। চলতি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের হিসেব অনুযায়ী পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১২.৯৫ বিলিয়ন ডলার এবং এর বিপরীতে বৈদেশিক ঋন ও দেনার স্থিতির পরিমান ১৩০.২ বিলিয়ন ডলার। এখন দেশটি কিনা এক দেশ থেকে ঋন নিচ্ছে অন্যান্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বার্ষিক ঋনের আসল ও সুদের কিস্তি পরিশোধ করতে। তাছাড়া দেশটির বৈদেশিক বানিজ্যও কিন্তু নেতিবাচক ভারসাম্য সূচক প্রকাশ করে। ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতে পারে এমন গুরুত্বপূর্ণ খাত বা বিষয়টি সুনিশ্চিত না করেই কথিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণ ও দেশের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে অপেক্ষাকৃত অলাভজনক খাতে নির্বিচারে বৈদেশিক ঋন নেয়াটা স্বল্প আয়ের দেশের জন্য চরম ভয়াবহ এবং ঝুঁকিপূর্ণ একটি কাজ হয়ে দেখা দিতে পারে। যার বাস্তব একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং কেনিয়ার মতো দেশগুলো।

কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের দেশের মতো স্বল্প আয়ের দেশগুলোর বৈদেশিক ঋনের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় আরো কৌশলী ও সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.