--- বিজ্ঞাপন ---

নিউক্লিয়ার যুদ্ধের ঝুঁকিতে বিশ্ব, স্পর্শকাতর মিলিটারি মহড়া চালিয়েছে রাশিয়া

0

কাজী আবুল মনসুর/সিরাজুর রহমান#

আজ ২৬শে অক্টোবর রাশিয়া সামরিক বাহিনী নিউক ওয়ারহেড ক্যাপবল বেশকিছু মিসাইল নিক্ষেপের মাধ্যমে বড় ধরণের প্রস্তুতিমুলক মহড়া চালায়। মূলত ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে অদূর ভবিষ্যতে রাশিয়ার উপর কেউ নিউক্লিয়ার অস্ত্র বা ডার্টিবোমা হামলা করলে তার জবাবে রাশিয়া কিভাবে তার নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র ব্যবহার করবে সে বিষয়ে দেশটির সামরিক বাহিনী আজ অতীব স্পর্শকাতর মিলিটারি ড্রীল বা মহড়া চালিয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দপ্তরের দেয়া ভাষ্যমতে, মহড়ার অংশ হিসেবে দেশটির স্ট্যাটিজিক মিসাইল ফোর্সেস ইউনিটের ছোড়া ডামি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সজ্জিত মিসাইল পূর্ব নির্ধারিত সকল লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁতভাবে হীট করেছে। আর এর মাধ্যমে ভয়াবহ পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিকে আরো বেশি মাত্রায় উস্কে দিল।

এদিকে চলতি অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে পশ্চিমা মিডিয়ায় প্রচার করা হয় যে, অতি সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার নিউক্লিয়ার অস্ত্রবাহী সাবমেরিন বেলগরদ কে-৩২৯ অজানা সংখ্যক নিউক্লিয়ার ওভারহেড সমৃদ্ধ পসিডন সুপার টর্পেডো নিয়ে নিজস্ব ঘাঁটি ছেড়েছে। এটিকে রাশিয়ার একটি খুবই বিপদজনক সামরিক মুভমেন্টে হিসেবে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা ন্যাটো জোট। এজন্য ইউরোপীয় সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে এক অতীব গোপনীয় সতর্কবার্তা পাঠায় ন্যাটো। এদিকে ন্যাটো জোটের অন্যতম সদস্য দেশ ফ্রান্স সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে, তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোন ধরণের নিউক্লিয়ার যুদ্ধে নিজেকে জড়াবে না।

মুলত রাশিয়ার তৈরি বেলগরদ সাবমেরিন ছয় থেকে দশটি অত্যন্ত ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন পসিডন টর্পেডো বহন করে। একেকটি নিউক টর্পেডো মহাসাগরের বুকে অত্যন্ত ভয়ঙ্কর তেজষ্ক্রিয় সুনামি সৃষ্টির মাধ্যমে আমেরিকার নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেসের মতো বড় বড় শহর এক মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে পারে বলে প্রচার করে থাকে রাশিয়া। যদিও রাশিয়া খুব সম্ভবত অত্যন্ত শক্তিশালী এই নিউক পসিডন টর্পেডো পরীক্ষার জন্য সাবমেরিনটিকে সক্রিয় করেছিল।

তবে অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার যে কোন ধরণের ভয়ঙ্কর নিউক্লিয়ার অস্ত্র হামলার পাল্টা শক্ত জবাব দিতে আমেরিকার তার ন্যাটো জেট নিয়ে বড় ধরণের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। বিশেষ করে পরমাণু অস্ত্র সজ্জিত কিছু নিউক সাবমেরিন গভীর সমুদ্রে গোপন কোন মিশনে পাঠিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। তাছাড়া মার্কিন নৌবাহিনীর ইউএসএস জোরাল্ড আর ফোর্ড ক্লাস সুপার এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার তার নিজ ব্যাটল স্টাইক গ্রুপ সহ আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে জোটের সাথে গোপন কোন মিশনে শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে। তাই ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়া ও আমেরিকা একে অপরের বিরুদ্ধে নিউক্লিয়ার অস্ত্র প্রয়োগ করলে বসলে তার ফলাফল সারা বিশ্ববাসীর জন্য হবে খুবই ভয়াবহ এবং ধ্বংসাত্বক।

বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াসহ বিশ্বের মোট ৯টি দেশের অস্ত্র ভান্ডারে মজুদ রয়েছে আনুমানিক প্রায় ১৩ হাজারের অধিক নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র এবং ওয়ারহেড। যা সমুদ্র ভিত্তিক সাবমেরিন ও সাইলো বেসড এন্ড মোবাইল লঞ্চড লং রেঞ্জের ব্যালেস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম), মিডিয়াম ও সর্ট রেঞ্জ ট্যাকটিক্যল মিসাইল এবং সর্বোপরি হেভি বোম্বার ও সুপার বোম্বার ভিত্তিক বোম্ব ও ওয়ারহেড এর উপযোগী করে গোপনে সংরক্ষণ এবং মোতায়েন করে থাকে দেশগুলো।

আবার বিশ্বের মোট পারমাণবিক অস্ত্রের সর্বোচ্চ ৮৯% মজুদ রয়েছে শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে। তাছাড়া, কৌশলগতভাবে ভবিষ্যতে যে কোন ভয়াবহ যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাশিয়া ও মার্কিন সামরিক বাহিনী অত্যন্ত গোপনে আনুমানিক ২ হাজারের কাছাকাছি নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড স্ট্যাটিজিক্যাল নিউক মিসাইলে সংযুক্ত করে সার্বক্ষণিকভাবে একে অপরের বিরুদ্ধে হামলার উদ্দেশ্যে গোপন কোন ঘাঁটিতে কিম্বা সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকা সাবমেরিনে সক্রিয়ভাবে মোতায়েন করে রাখে। যা ভবিষ্যতে কিনা মানব সভ্যতার জন্য এক মারাত্বক হুমকী হিসেবে থেকেই যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ের স্টকহোম ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনিস্টিউট, বিজনেস ইনসাইডার, জেনস রিপোর্ট, গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারসহ অন্যান্য সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও থিংক ট্রাঙ্ক বিশ্বের মোট ৯টি দেশের কাছে কি পরিমাণ ও সক্ষমতার নিউক্লি়য়ার ও থার্মোনিউক্লিয়ার অস্ত্র ও ওয়ারহেড মজুদের বিষয়ে যে তথ্য-উপাত্ত ও পরিসংখ্যান প্রদর্শন করে তা কিন্তু সম্পূর্ণ গবেষণামুলক বিশ্লেষণ ও অনুমানের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যার কোন বাস্তব ভিত্তি বা গ্রহনযোগ্য কোন প্রমান নেই।

এদিকে ওয়াল্ড পুপুলেশন রিভিও এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০২২ সালের হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে সারা বিশ্বের ৯টি দেশের কাছে মোট ১৩,১৩৩টি নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মো-নিউক্লিয়ার অস্ত্র রয়েছে। যার মধ্যে রাশিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে মজুত রয়েছে ৬,২৫৭টি এবং আমেরিকার অস্ত্র ভান্ডারে রয়েছে ৫,৫৫০টি নিউক ওয়েপন্স। তাছাড়া চীনের কাছে ৩৫০টি, ফ্রান্সের কাছে ২৯০টি, যুক্তরাজ্যের কাছে ২২৫টি, পাকিস্তানের কাছে ১৬৫টি, ভারতের কাছে ১৫৬টি, ইসরাইলের কাছে ৯০টি এবং উত্তর করিয়ার অস্ত্র ভান্ডারে আনুমানিক মোট ৪০-৫০টি স্বল্প সক্ষমতার নিউক্লিয়ার অস্ত্রের বিশাল মজুত রয়েছে বলে অনুমান করা হয়।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.