--- বিজ্ঞাপন ---

আকাশপথে চীনের জয়জয়কার

0

সিরাজুর রহমান#

চীন সাম্প্রতিক সময়ে তাদের নতুন প্রজন্মের উইং লুং-৩ হেভি কমব্যাট ড্রোন বিশ্বের সামনে উন্মোচন করতে যাচ্ছে। চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি  উইং লুং-২ কমব্যাট ড্রোনের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আরও আধুনিক ও নতুন প্রযুক্তির সমন্বয়ে উইং লুং-৩ কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) ডিজাইন ও তৈরি করে।  ২,৩০০ কেজি ওজনের পেলোড ক্যাপাসিটির উইং লুং- ড্রোনের রেঞ্জ প্রায় ১০ হাজার কিলোমিটার। তবে ফুল ওয়েপন্স পেলোডসহ এর সর্বোচ্চ রেঞ্জ হতে পারে প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটারের কাছাকাছি। চীনের এই নতুন উদ্ভাবিত ড্রোনটি নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপাত্ত প্রকাশ না করলেও এটিকে শর্ট রেঞ্জের পিএল-১০ এয়ার টু এয়ার মিসাইল দ্বারা সজ্জিত করা হবে। এটি একাধারে আকাশে প্রায় ৪০ ঘন্টা কমব্যাট মিশন পরিচালনা করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন। এটিকে এখনো পর্যন্ত অবশ্য সার্ভিসে আনেনি চীনের সামরিক বাহিনী।

তবে প্রকাশ থাকে যে, উইং লুং-৩ সিরিজের আগের ভার্সন  উইং লুং-২ এডভান্স কমব্যাট ড্রোন (ইউসিএভি) চীন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মোট ৬টি দেশ অপারেট করে। এটি লিবিয়া এবং ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যবহার করা হলেও এর এয়ার কমব্যাট মিশন রেকর্ড খুব একটা ভালো ছিল বলে মনে হয় না।  বিশেষ করে ২০১৯ সালের দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের গোপন কোন সামরিক ঘাঁটি থেকে লিবিয়ায় আসা চীনের তৈরি একটি উইং লুং-২ কমব্যাট ড্রোনকে ভূমিতে থাকা তুর্কী লেজার গান দিয়ে সফলভাবে আকাশেই ধ্বংস করে দেয়া হয়। তাছাড়া ইয়েমেনের আকাশেও হুথী বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের বেশকিছু এই জাতীয় কমব্যাট ড্রোন ধ্বংস করেছে।

চীন উম্মোচন করেছে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির তৈরি অত্যাধুনিক সি-৯১৯ বেসামরিক যাত্রী পরিবহণ বিমান

মার্কিন এভিয়েশন ম্যানুফ্যাকচারিং জায়ান্ট বোয়িং কর্পোরেশন গত মাসে হিসেব করে দেখেছে যে, অদূর ভবিষ্যতে চীন হতে যাচ্ছে সারা বিশ্বের মধ্যে বেসামরিক যাত্রী পরিবহণ বিমানের সবচেয়ে বড় আন্তর্জাতিক বাজার। তাদের গবেষণা মতে, উদীয়মান অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীনের আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত নতুন মোট ৮,৪৮৫টি যাত্রী পরিবহণ বিমান দরকার হবে কিংবা তারা নতুন ক্রয় করবে।

আবার এই বিপুল সংখ্যক বিমানের আর্থিক মূল্য হতে পারে প্রায় ১,৫০০ বিলিয়ন ডলার। চীনের এই সুবিশাল বিমানের বাজার দখল করতে এখনই উঠে পড়ে লেগেছে মার্কিন এভিয়েশন জায়ান্ট বোয়িং কর্পোরেশন এবং ইউরোপের বিমান উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারবাস। যদিও চীন নিজেদের এই বিশাল পরিমাণ বেসামরিক পরিবহণ বিমানের চাহিদার কথা মাথায় রেখে সাম্প্রতিক সময়ে একেবারে নিজস্ব প্রযুক্তির সি-৯১৯ সিরিজের প্যাসেঞ্জার বিমান বিশ্বের সামনে উম্মোচন করেছে। তবে চীনের কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন অব চায়না লিমিটেড এর তৈরি সি-৯১৯ সিরিজের যাত্রী পরিবহণ বিমানটির প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও মান কতটুকু ভালো হবে তা কিন্তু এখনো পর্যন্ত চীনের বাহিরে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে গতকাল কিন্তু চীনের ১৪তম আন্তর্জাতিক এভিয়েশন এন্ড এ্যারোস্পেস মেলা-২০২২ এ প্রায় ৩০০টি সি-৯১৯ সিরিজের প্যাসেঞ্জার বিমানের অর্ডার দিয়েছে দেশটি অভ্যন্তরীন রুটে বিমান পরিচালনাকারী এয়ার লাইনস লিজিং কোম্পানি।

চীনে বর্তমানে চলমান এই এভিয়েশন প্রযুক্তি প্রদর্শনী মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে গুয়ানডং প্রদেশের জুহাই শহরে। চীনের সাতটি বিমান লিজিং কোম্পানি সি-৯১৯ বিমান সংগ্রহের জন্য এর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি চীনের কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন অব চায়না লিমিটেড এর সাথে প্রাথমিকভাবে ৩০০টি বিমান ক্রয় বা লিজিং চুক্তি সম্পন্ন করেছে। চীনের তৈরি সি-৯১৯ এয়ার লাইনারটি প্রথম সফল পরীক্ষামুলক উড্ডয়ন করে ২০১৭ সালের ৫ই মে। তবে চীনের এই এভিয়েশন ম্যানুফ্যাচারিং কোম্পানিটি এ পর্যন্ত খুব সম্ভবত মোট ১০টি বিমান উৎপাদন করেছে।

চীনের সি-৯১৯ইআর সিরিজের যাত্রী পরিবহণ বিমানের দৈর্ঘ্য ৩৮.৯ মিটার এবং উইন্সপেন ৩৩.৬ মিটার। এর স্টান্ডার্ড পেলোড ক্যাপাসিটি ১৫ টন এবং এর স্টান্ডার্ড রেঞ্জ ৫,৫৭৬ কিলোমিটার। আকাশে এই বিমানের উড়ে চলা ও শক্তি উৎপাদনের জন্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের যৌথভাবে তৈরি ২টি সিএফএম ইন্টারন্যাশনাল এলইএপি-১সি সিরিজের শক্তিশালী টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ব্যাবহার করা হয়েছে। এটিকে ১২ হাজার ১০০ মিটার উচ্চতায় উড্ডয়ন করার উপযোগী করে ডিজাইন করা হয়েছে।

চীন মনে করে যে, তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির সি-৯১৯ মিডিয়াম প্যাসেঞ্জার এয়ার লাইনারটি দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক বিমান বানিজ্যে আমেরিকার বোয়িং এবং ইউরোপের এয়ারবাসের একচেটিয়া সিন্ডিকেট ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হবে। তাছাড়া বোয়িং ৭৩৭ এবং এয়ারবাস এ-৩২০ সিরিজের যাত্রী পরিবহণ বিমানের সাথে পাল্লা দিয়ে সারা বিশ্বে নিজের যোগ্য স্থান করে নিবে।

চীনের অভ্যন্তরীন রুটে সি-৯১৯ সিরিজের বিমানটি খুব সহজেই জেয়গা দখল করে নিবে বলে মনে করা হলেও আন্তর্জাতিক বাজারে এত সহজে স্থান নাও পেতে পারে। বিশেষ করে আমেরিকা ও ইউরোপের বিমানবন্দরগুলোতে চীনের নিজস্ব প্রযুক্তির সি-৯১৯ বিমানকে ল্যান্ডিং এর সার্টিফিকেট বা অনুমোদন পাওয়াটা খুব একটা সহজ কিছু হবে না। তবে চীনের অভ্যন্তরীন এয়ার রুটে বিপুল পরিমাণ বিমানের চাহিদা থাকায় নিজ দেশেই বড় ধরণের ব্যবসা করার সুযোগ মোটেও হাতছাড়া করবে বলে মনে হয় না।

তবে প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ব মানের, নিরাপদ এবং দাম পশ্চিমা বিশ্বের তুলনায় অনেকটাই কম হলে আন্তর্জাতিক বাজারে অদূর ভবিষ্যতে বড় ধরণের সাফল্য পেতে পারে চীনের সি-৯১৯ সিরিজের জেট লাইনারটির খুব একটা সময় লাগবে না। তবে বোয়িং ও এয়ারবাসের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে বড় ধরণের অংশীদার হতে চীনকে হয়ত আরো কমপক্ষে এক দশক অপেক্ষা করতে হতে পারে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.