--- বিজ্ঞাপন ---

আমেরিকার বিমান বাহিনীর এফ-৩৫ স্টেলথ জেট ফাইটারের ক্রাস ল্যান্ডিং

0

সিরাজুর রহমান #

গতকাল ১লা ডিসেম্বর আমেরিকার বিমান বাহিনীর একটি এফ-৩৫ স্টেলথ জেট ফাইটার ক্রাস ল্যান্ডিং করেছে। মুলত জাপানের কাদেনা এয়ার বেসে মার্কিন বিমান বাহিনীর নতুন প্রজন্মের এফ-৩৫ স্টেলথ জেট ফাইটারটি বড় ধরনের দূর্ঘটনার শিকার হয়। এতে বিমানটি আকাশে ধ্বংস না হলেও বেশ বাজে ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আর সেই সাথে ২০২২ সাল হতে যাচ্ছে মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের জন্য এক বিপর্যয়ের বছর। চলতি ২০২২ সালের শুরু থেকে ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা বিশ্বে মার্কিন এফ-৩৫ এর বিভিন্ন সিরিজের মোট ৪টি এডভান্স স্টেলথ জেট ফাইটার নন-কমব্যাট মিশনে আকাশেই ধ্বংস কিংবা ক্রাস ল্যান্ডিং করে গ্রাউন্ডেড হয়ে পড়ে রয়েছে।

তাছাড়া গত অক্টোবর মাসে ইউএস এয়ার ফোর্সের একটি এফ-৩৫এ সিরিজের স্টেলথ জেট ফাইটার আমেরিকার হিল এয়ার ফোর্স বেস, উথায় (Utah) নন-কমব্যাট মিশনে ক্রাস করে। এই বিমান দূর্ঘটনায় পাইলট নিজেকে নিরাপদে ইজেক্ট করতে সক্ষম হলেও দূর্ঘটনাস্থলেই ১২০ মিলিয়ন ডলারের এই যুদ্ধবিমানটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২২ সালের ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত মার্কিন সামরিক বাহিনীর কমপক্ষে মোট ১০টি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এফ-৩৫ এ,বি ও সি সিরিজের স্টেলথ জেট ফাইটার নন-কমব্যাট মিশনে আকাশেই ধ্বংস হয়েছে কিংবা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

মাল্টি-নেশন জয়েন প্রজেক্ট ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলারের এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের কার্যকারিত এবং সার্বিক পার্ফমেন্স নিয়ে মার্কিন বিমান বাহিনী অনেক আগেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিল। পার আওয়ার অপারেটিং কস্ট প্রায় ৩৬-৪০ হাজার ডলার এবং এর রিপিয়ার এন্ড মেইনটেনেন্স খুবই জটিল ও সময় সাপেক্ষ হয়ে থাকে। বর্তমানে মার্কিন বিমান বাহিনীতে ৩০১টি এফ-৩৫এ সিরিজের স্টেলথ যুদ্ধবিমান, ইউএস মেরিন কর্পোস ১১৪টি এফ-৩৫বি/সি সিরিজের এবং ইউএস নেভী ২৬টি এফ-৩৫সি সিরিজের এডভান্স স্টেলথ জেট ফাইটার অপারেশনাল রয়েছে।

তবে মার্কিন সামরিক বাহিনী কিন্তু তাদের বিমান বহরে পুরনো এফ-১৬ এবং এফ-১৫ যুদ্ধবিমানের ভবিষ্যতের রিপ্লেস হিসেবে নতুন প্রজন্মের এফ-৩৫ এর একাধিক সিরিজের যুদ্ধবিমান সার্ভিসে আনার পরিকল্পনা করলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে তারা অনেকটাই সরে এসেছে। বর্তমানে মার্কিন সামরিক সামরিক বাহিনী এফ-৩৫ স্টেলথ যুদ্ধবিমানের পাশাপাশি খুবিই ভালো পার্ফমেন্স ও লো অপারেটিং কস্টের জন্য আগের পুরনো সিরিজের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলো আপগ্রেডিং করে দীর্ঘ মেয়াদে আরো কার্যকরভাবে অপারেট করতে চায়। একটি এডভান্স এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের পার আওয়ার অপারেটিং কস্ট প্রায় ৮ হাজার ডলারের কাছাকাছি হতে পারে।

প্রথম দিকে মার্কিন বিমান বাহিনীর এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের রিপ্লেস হিসেবে জয়েন্ট স্টাইক এফ-৩৫ এডভান্স স্টেলথ জেট ফাইটার সার্ভিসে আনতে শত শত বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেও মার্কিন বিমান বাহিনী তাদের পঞ্চম প্রজন্মের এফ-৩৫ স্টেলথ জেট ফাইটারের উপর অনেকটাই হতাশ হয়ে বিমান বহরে আগে থেকে থাকা ৬০৮টি পুরনো এফ-১৬ ব্লক-৪০/৫০ সিরিজের যুদ্ধবিমানগুলোকে পর্যায়ক্রমে আপগ্রেড করে আগামী ২০৭০ সাল নাগাদ অপারেশনাল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এজন্য মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ বাইডেন প্রশাসনের কাছে বড় অংকের ফান্ড বরাদ্দের অনুমোদন নিয়ে রেখেছে। মোট কথা বর্তমানে সার্ভিসে থাকা চতুর্থ প্রজন্মের সিঙ্গেল ইঞ্জিনের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোকে নতুন করে ২২টি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইনস্টল করে এর সার্ভিস লাইফ টাইম আরো ৪০ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে নিতে চায়। বর্তমানে মার্কিন এভিয়েশন জায়ান্ট লকহীড মার্টিন কর্পোরেশন প্রতি মাসে গড়ে ৪টি করে এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন যুদ্ধবিমান ম্যানুফ্যাকচারিং করে। যা দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রেতার চাহিদা মিটিয়ে মার্কিন বিমান বাহিনীর বিপুল চাহিদা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ করার কোন সুযোগ থাকে না।

তাই আমেরিকার বিমান বাহিনীতে অপারেশনাল থাকা পুরনো ৬০৮টি এফ-১৬ ব্লক-৪০/৫০ সিরিজের যুদ্ধবিমানের রাডার, ইঞ্জিন, এভিয়েনিক্স সিস্টেম এবং ডিসপ্লেসহ মেজর ২২টি আপগ্রেড এন্ড হাইলী মর্ডানাইজেশনের মাধ্যমে এটিকে আরো আধুনিক করে ২০৭০ সাল পর্যন্ত সার্ভিসে রাখার কাজ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন করতে যাচ্ছে মার্কিন বিমান বাহিনী। যতই স্টেলথ টেকনোলজির এরিয়াল সিস্টেম আসুক না কেন এখনো পর্যন্ত মার্কিন বিমান বাহিনীর মূল মেরুদ্বন্ড হিসেবে এফ-১৫সি/ডি ঈগল/স্টাইক ঈগল এবং এফ-১৬ সিরিজের যুদ্ধবিমান তার নিজের যোগ্য স্থান দখল করে রেখেছে।#

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.