--- বিজ্ঞাপন ---

ফ্রান্সের নতুন প্রজন্মের নিউক্লিয়ারড পাওয়ারড বারকুডা ক্লাস ‘সাফরেন’ এ্যাটাক সাবমেরিন

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিবেদক#

নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন তৈরির ক্ষেত্রে রাশিয়া, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি ফ্রান্সও কিন্তু বেশ ভালো মানের ও নিজস্ব উচ্চ প্রযুক্তির নিউক সাবমেরিন ডিজাইন ও তৈরি করে। বিশেষ করে ফ্রান্সের শীপ বিল্ডিং কর্পোরেশন ফ্রেঞ্চ শীপ বিল্ডার ‘নেভাল গ্রুপ’ সাবমেরিন তৈরির জন্য একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। ফ্রান্সের নেভাল গ্রুপের তৈরি ‘সাফরেন’ কার্যত হচ্ছে একটি ফরাসী বারকুডা ক্লাসের উচ্চ প্রযুক্তি নির্ভর আধুনিক নিউক্লিয়ার পাওয়ারড ফাস্ট এ্যাটাক সাবমেরিন। আর ফরাসী নেভীতে এটি হচ্ছে এই ক্লাসের প্রথম কোন সাবমেরিন। অদূর ভবিষ্যতে ফ্রান্স এরুপ মোট ৬টি বারকুডা ক্লাস নিউক ফাস্ট এ্যাটাক সাবমেরিন পর্যায়ক্রমে সার্ভিসে আনবে। যা হোক বারকুডা ক্লাসের ‘সাফরেন’ নিউক সাবমেরিনটি ৬ই নভেম্বর ২০২০ সালে কমিশনিং লাভ করলেও সকল পরীক্ষা শেষে ফ্রান্সের নৌবাহিনী কার্যত চলতি ২০২২ সালের ৩রা জুন পূর্ণাঙ্গভাবে নেভাল ব্যাটল গ্রুপে সার্ভিসে আনে। যদিও ফ্রান্স এ প্রজক্ট নিয়ে কাজ শুরু করে ২০০৭ সালে।

ফ্রান্সের তৈরি ৫,৩০০ টন ওজনের বারকুডা ক্লাস ‘সারফরেন’ নিউক এ্যাটাক সাবমেরনের প্রজেক্ট কস্ট ধরা হয়েছিল ৯.৯০ বিলিয়ন ইউরো এবং পার ইউনিট কস্ট ১.৩০ বিলিয়ন ইউরো বা ১.৪০ বিলিয়ন ডলার। ফ্রান্সের নৌবাহিনী আসলে অদূর ভবিষ্যতে ‘সাফরেন’ নিউক সাবমেরিনকে বর্তমানে সার্ভিসে থাকা ৮০ দশকের ‘রুবিস’ ক্লাস সাবমেরিনের রিপ্লেস হিসেবে পর্যায়ক্রমে সার্ভিসে আনতে চায়।

নতুন প্রজন্মের বারকুডা ক্লাস ‘সাফরেন’ নিউক সাবমেরিনের দৈর্ঘ্য ৯৯.৫ মিটার এবং বীমের উচ্চতা ৮.৮০ মিটার। এর গতিবেগ ঘন্টায় ২৫ নটিক্যাল মাইল বা ৪৬ কিলোমিটার। এটিতে ১২ জন অফিসার এবং ৪৮ জন নাবিক একসাথে কাজ করতে করতে পারে। সাফরেন সাবমেরিনে খাদ্য মজুত করে একনাগাড়ে ৭০ দিন পর্যন্ত সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে থাকতে পারে। আবার একবারে ১০ বছরের নিউক্লিয়ার ফুয়েল নিয়ে এটি আনলিমিটেড সমুদ্র পথ চলতে সক্ষম।

সাফরেন নিউক সাবমেরিনে পাওয়ার জেনারেশন হিসেবে ২টি গ্রুপে ১০ মেগাওয়াট (১৩,০০০ হর্স পাওয়ার) ইলেকট্রিক ইঞ্জিন ইন্সটল করা হয়েছে। তাছাড়া ১৫০ মেগাওয়াট (২,০০,০০০ হর্স পাওয়ার) বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কে-১৫ নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর রয়েছে। তার পাশাপাশি ২টি এমার্জেন্সী ইলেকট্রিক ইঞ্জিন এবং একটি পাম্প-জেট ইঞ্জিন সংযোজন করা হয়েছে। সমুদ্রের পানি থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অক্সিজেন তৈরির প্রযুক্তি এবং উন্নত বজ্য নিষ্কাশন সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে এই সাবমেরিনে।

প্রধান অস্ত্র হিসেবে এই সাবমেরিনের ৪টি ৫৩৩ এমএম টর্পেডো টিউব থেকে টর্পেডো এবং এন্টিশীপ কিংবা সারফেস মিসাইল ফায়ার করতে সক্ষম। এটিতে মোট ২৪টি টর্পেডো এবং মিসাইল বহন করার উপযোগী করে ডিজাইন করেছে ফ্রান্সের নেভাল গ্রুপ। যার মধ্যে ৪টি থাকে টিউবে এবং ২০টি সাবমেরিনের ভিতরে র‍্যাকে সংরক্ষণ করে রাখা থাকে। এর মেইন অস্ত্র হিসেবে রয়েছে এফ-২১ হাই এক্সপ্লুসিভ টর্পেডো এবং এসএম-৩৯ ব্লক-২ এন্টিশীপ মিসাইল। তার পাশাপাশি রয়েছে নেভাল (এমডিসিএন এসসিএএলপি) ক্রুজ মিসাইল এবং এফজি-২৯ মাইন। যদিও অবশ্য এটিকে নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড বেসড স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল কিম্বা (এসএলবিএম) জন্য ডিজাইন বা কাস্টমাইজড করা হয়নি।

বর্তমানে ফ্রান্সের নৌবাহিনীতে ৪টি রুবিস ক্লাস ও ১টি বারকুডা ক্লাস এ্যাটাক নিউক সাবমেরিন রয়েছে। তাছাড়া ১৪,৩৩৫ টন ওজনের অত্যন্ত শক্তিশালী ৪টি ‘ট্রায়াম্ফ্যান্ট’ স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল নিউক সাবমেরিন অপারেশনাল রয়েছে। প্রতিটি ‘ট্রায়াম্ফ্যান্ট’ স্ট্যাটিজিক ব্যালেস্টিক মিসাইল বেসড নিউক সাবমেরিনে ১৬টি এম-৪৫ কিংবা এম-৫১ সাবমেরিন লঞ্চড ব্যালেস্টিক মিসাইল (এসএলবিএম) বহন করে। আবার প্রতিটি এম-৪৫ কিংবা এম-৫১ ব্যালেস্টিক মিসাইলকে ৬টি থেকে ১০টি (টিএন-৭৫) ১৫০ কিলোটন ধ্বংস ক্ষমতা সম্পন্ন থার্মোনিউক্লিয়ার ওয়ারহেড ইনস্টল করার উপযোগী করে ডিজাইন করেছে ফ্রান্স।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.