--- বিজ্ঞাপন ---

নিয়ন্ত্রনের বাইরে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ

নেই সম্মেলন, হচ্ছে না নতুন কমিটিও

0

বিশেষ প্রতিনিধি #

নিয়ন্ত্রনের বাইরে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ। বছরের পর বছর ধরে নেই কোন সম্মেলন, হচ্ছে না নতুন কমিটিও। পুরানোদের রাজত্ব চলছে বহাল তবিয়তে। ঘুরে ফিরে তারাই সব। দলে কোন আধুনিকতার ছোয়া নেই। নেতারা ব্যস্ত নিজেদের পাল্লা ভারী করতে। দলের চেয়ে ব্যক্তির প্রাধান্যই বেশি। আওয়ামী লীগের কিছুটা গতি হলেও নগর ছাত্রলীগের কমিটি নেই ৯ বছর। বহুদা বিভক্ত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বিশেষ করে নগরীর ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা দু’আওয়ামী লীগ নেতার ছায়ায় রয়েছেন। এক গ্রুপ মহিউদ্দিন চৌধুরী তনয় ব্যারিষ্টার নওফেলের নিয়ন্ত্রণে, অন্য গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছিরের হাতে। ফলে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হচ্ছে না। কারন দু‘গ্রুপের নেতারা শীর্ষপদের দাবিদার। এরমধ্যে নানা উপদলও সৃষ্টি হচ্ছে।

একই অবস্থা আওয়ামী লীগেও। ২০১৩ সালের ১৪ নভেম্বর সর্বশেষ ৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপর থেকে আর কোন নতুন কমিটি হয়নি। এ সময় এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে সভাপতি ও আ জ ম নাছির উদ্দিনকে সাধারন সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা যাবার পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই থেকে মাহতাব-নাছির কমিটি বহাল রয়েছে। গেল ডিসেম্বরে কমিটি ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে জোর গুঞ্জন শুনা গেলেও শেষপর্যন্ত বর্তমান সভাপতি – সম্পাদকের অনিচ্ছায় সে উদ্যোগ থমকে যায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ বহু বছর ধরে চলা এম এ মান্নান – মহিউদ্দিন চৌধুরীর বলয় ভেঙ্গে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছিলেন এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। সাধারন সম্পাদক হিসেবে তিনি অনেক বছর দায়িত্ব পালন করেন। তারঁ সাথে সম্পাদক করা হয়েছিল কাজী ইনামুল হক দানুকে। বর্তমানে দু’জনই প্রয়াত। ২০১৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মারা যান সম্পাদক কাজী ইনামুল হক দানু। তিনি মারা যাবার পর সম্পাদক হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দিনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে দু’জন এক টেবিলে বসেন নি। আলাদা আলাদা স্বতন্ত্র গ্রুপ নিয়ে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে ব্যস্ত থাকেন। চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতিতে মহিউদ্দিন গ্রুপ আর নাছির গ্রুপ অনেকটা ওপেন সিক্রেট হিসেবে প্রকাশ পায়। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী মারা গেলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নগর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন আ জ ম নাছির। বর্তমানে এ দু’জনের মধ্যে সখ্যতা থাকলেও মূলত গ্রুপিং রাজনীতি আগের মতোন রয়ে গেছে। নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিষ্টার নওফেলের সাথে বর্তমান সাধারন সম্পাদক আ জ ম নাছিরের গ্রুপিং রাজনীতি অনেকটা প্রকাশ্যে রয়েছে।

সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। বর্তমান সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বয়সের কারনে দলে সক্রিয় থাকতে পারেন না। দলে অবস্থান রয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ খোরশেদ আলম সুজন। এরই মধ্যে খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর হাই কমান্ডের নজর কাড়ে। তাছাড়া মহিউদ্দিন পুত্র বর্তমান শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যরিষ্টার মহিবুল হাসান নওফেলের সমর্থনও রয়েছে তারঁ প্রতি। সুজনকে সভাপতি করার বিষয়টি বার বার আলোচনায় এলেও বর্তমান সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন সভাপতি হিসেবে সুজনকে মানতে নারাজ। মূলত এ টানাপোড়েনে নগর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিও হচ্ছে না।

গ্রুপিং এর কারনে হচ্ছে ওয়ার্ড সম্মেলনও। নগরীর ওয়ার্ড গুলোতে সম্মেলন হলে কমিটি করতে হবে। কিন্ত কমিটিতে কার লোক আসবে, কে নেতৃত্ব দেবে এসব নিয়ে ভেতরে ভেতরে দ্ব›দ্বও লেগে আছে। কেন্দ্র থেকে ওয়ার্ড সম্মেলন তদারকি করার জন্য কাগজে কলমে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দীন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির, সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার নওফেলকে দায়িত্ব দেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। হচ্ছেও না। যে যার অবস্থান নিয়ে ব্যস্ত আছেন। যদিও কথা ছিল ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন চলমান থাকবে। নগর আওয়ামী লীগের কমিটি ও ওয়ার্ড কমিটি নিয়ে নেতাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব যখন তীব্র আকার ধারণ করছিল তখনর গত ২২ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনকে মৌখিকভাবে ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত রাখতে বলেন। একই সঙ্গে ওয়ার্ডের ইউনিট সম্মেলন চলমান রাখতে বলা হয়। কিন্ত নির্দেশনার পর এগুলোর আর অগ্রগতি হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, ওয়ার্ড সম্মেলন করা নিয়ে সবকিছু থমকে গেছে। কারন সম্মেলন নিয়ে একটি পক্ষ স্বজনপ্রীতির প্রশ্ন তোলে। এখানে দলের চেয়ে ব্যক্তির প্রাধান্য বেড়ে যায়। নিজেদের রোক আনার জন্য সবাই মরিয়া হয়ে উঠে। তিনি বলেন, গত নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম শহরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডে ইউনিট সম্মেলন শুরু করার কথা। কিন্ত ইউনিট সম্মেলন নিয়ে প্রথম যখন আপত্তি উঠে তখন এটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়। কিন্ত পরবর্তিতে ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়েও যথন নানামূখি কথা উঠে তখন এটি স্থগিত করার জন্য বলা হয়। ফলে ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন থমকে যায়। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে ইউনিট আছে। তবে আরে মধ্যে ১০৬টি ইউনিটের সম্মেলন শেষ করা হয়েছে তিনি উল্লেখ করেন।

এদিকে নগর ছাত্রলীগের অবস্থা আরও খারাপ। গত ২০১৩ সালের অক্টোবরে কেন্দ্র থেকে একটি কমিটি দেয়া হয়। ২৯১ সদস্যের কমিটি এখন ছাত্র বলতে তেমন কেউ নেই। বিরাজ করছে স্থবিরতা। ছাত্রলীগের নেতারা বহুধা বিভক্ত। জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি এবং নুরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ জনের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালের ১১ জুলাই ওই ২৪ জনসহ ২৯১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ নগর ছাত্রলীগের কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। নানা প্রকার কোন্দলের কারনে নুরুল আজিম রনি অব্যাহতি নেয়। পরে তাঁর  জায়গায় দায়িত্ব দেয়া হয় জাকারিয়া দস্তগীরকে। বলা হয়েছিল এক বছর পর নতুন কমিটি হবে। কিন্ত দেখা যায় সেই কমিটি এখন পার করছে প্রায় ৯ বছর। এর মধ্যে ছাত্রলীগের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে একাধিক গ্রুপের। কেউ ইমু গ্রুপ, কেউ জাকারিয়া গ্রুপ। কমিটির সহ-সভাপতি রেজাউল আলম রনির নেতৃত্বেও একটি গ্রুপ রয়েছে বলে জানা গেছে।

ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণার জন্য আন্দোলন সংগ্রামও কম হয়নি। বিবাহিত, বয়ষ্কদের সরিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার জন্য অনেকে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে। কিন্ত কেউ কারও কথা শুনছেন না। যেখানে নগর আওয়ামী লীগের এ অবস্থা, সেখানে ছাত্রলীগ নিয়ে মাথা ঘামাবে কে, এমনতর প্রশ্নও ঘুরেফিরে আসছে।##

 

 

 

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.