--- বিজ্ঞাপন ---

চাঁদ কে আয়ত্তে আনতে সুপার পাওয়ারদের লড়াই

0

সিরাজুর রহমান, বিশেষ প্রতিনিধি #

পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ’কে নিয়ে নিবীড় গবেষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাসা’ এখনো পর্যন্ত বাতিঘর হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে কিন্তু রেড জায়ান্ট চীন এক্ষেত্রে অবিশ্বাস্য সাফল্য অর্জন করেছে। যদিও আজ থেকে প্রায় ছয় দশক আগেই কোল্ড ওয়ারের যুগে সাবেক সভিয়েত ইউনিয়ন চন্দ্র জয়ের উদ্দেশ্যে স্যাটালাইট প্রেরণের মাধ্যমে এক নতুন প্রতিযোগিতা শুরু করে। আর তারই ধারাবাহিকতায় সভিয়েত ইউনিয়নের হাত ধরে মানুষের পাঠানো কোন বস্তু প্রথম চাঁদের মাটি স্পর্শ করে ১৯৫৯ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর।

মুলত লুনা-২ মিশনের মাধম্যে সভিয়েত ইউনিয়ন এই অসামান্য কৃতিত্ব অর্জন করে দেখিয়েছিল। যদিও চন্দ্র অভিযানের এই সাফল্যের যাত্রা আসলে তার আরো অনেক আগেই শুরু হয়ে যায়। ১৯৫৯ সালের ২ জানুয়ারি মানব জাতির প্রথম কোন যান বা স্যাটালাইট পৃথিবীর অভিকর্ষের প্রবল বাধা অতিক্রম করে চাঁদের দিকে ছুটে গিয়ে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে। আর সেই স্যাটালাইট সিস্টেমটি ছিল সভিয়েত ইউনিয়নের কাল জয়ী লুনা-১ মিশন। ১৯৫৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত সভিয়েত ইউনিয়ন বা বর্তমানে পুতিনের দেশ রাশিয়া এককভাবে বিশ্বের সর্বোচ্চ সংখ্যক চন্দ্র অভিযানে মোট ৫০টি মিশন পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে ২১টি ছিল সফল, ২৫টি ব্যর্থ এবং ৪টি মিশন আংশিক সফল হয়েছিল।

যদিও বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর সামরিক সুপার পাওয়ার আমেরিকা বিগত পঞ্চাশ বছরে চন্দ্রজয়ে মোট ৪৮টি মিশন পরিচালনা করেছে। যার মধ্যে ২৯টি মিশন ছিল সফল, ১৫টি মিশন একেবারেই ব্যর্থ এবং ৪টি মিশন আংশিকভাবে সফল হয়। তবে সারাবিশ্বকে চমকে দিয়ে ১৯৬৯ সালে ‘অ্যাপোলো-১১’ মিশনে প্রথম চাঁদে বুকে ৩ জন মহাকাশচারী পাঠিয়েছিল আমেরিকার মানুষ পাঠানো হয়েছিল। নাসার সেই চন্দ্র বিজয়ের মিশনের মানব জাতির প্রথম পদচিহ্ন এঁকে দিয়ে নতুন এক ইতিহাস রচনা করেন নীল আর্মস্ট্রং এবং এডুইন অলড্রিন।

তবে চন্দ্র বিজয়ের অতি সাম্প্রতিক অবদান বিবেচনা করা হলে এ অভিযানে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে এশিয়ার সুপার জায়ান্ট চীন। চীন এ পর্যন্ত কোন রকম ব্যর্থতা ছাড়াই একাই ৭টি সফল মিশন পরিচালনা করে রকেট ইঞ্জিনিয়ারিং এণ্ড স্যাটালাইট ডেভলপমেন্টে বিশ্বের বুকে নিজের শক্ত অবস্থান জানান দিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি চাঁদের বিপরীত অন্ধকার অংশে ল্যাণ্ডার অবতরণ করে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

এদিকে এশিয়ার আরেক টেক জায়ান্ট ভারতও কিন্তু বসে নেই। তারাও কিন্তু এখনো পর্যন্ত চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২ নামে দুটি পৃথক মিশন চাঁদের অভিমুখে প্রেরণ করেছে। ভারতের চন্দ্রযান-১ পুরো মাত্রায় সফল হলেও গত ২০১৯সালের ৭ই সেপ্টেম্বেরে চন্দ্রযান-২ চাঁদের বুকে পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক ল্যাণ্ডার বিক্রম নামাতে ব্যার্থ হয় কিম্বা এর সাথে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ল্যান্ডার বিক্রমের সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে গেলেও চাঁদের কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার কিন্তু ভারতে থাকা ইসরো’র ল্যান্ড স্টেশনের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তাই এক্ষেত্রে ভারতের চন্দ্রযান-২ মিশনকে আংশিক সফল মিশন হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

তাছাড়া ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং জাপান কিন্তু চাঁদের বুকে এককভাবে ১টি করে সফল মিশন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন করে রেখেছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় যে, মধ্যপ্রচ্যের প্রযুক্তি সমৃদ্ধ একেবারে ছোট্ট দেশ ইসরাইলও কিন্তু চাঁদের বুকে স্যাটালাইট মিশন প্রেরণ করলেও দূর্ভাগ্যক্রমে তা চাঁদের বুকে ক্রাস ল্যাণ্ডিং করে একটি ব্যর্থ মিশনে পরিণত হয়। তবে ইসরাইলের এই মিশনটি ব্যর্থ হলেও তা কিন্তু অনেক বড় বড় অনেক দেশও আজ অবধি তা করে দেখাতে পারেনি।

১৯৭৬ সালের পর থেকে চন্দ্র জয়ের অভিযানে ব্যাপক ভাটা পড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে চার দশকের হিমশীতল নিদ্রা ভেঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ভারত, জাপান, ইসরাইল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে তাদের নিজস্ব প্রযুক্তির বিকাশ ঘটিয়ে যে যার মতো করে চন্দ্র জয়ের অভিযানে নতুন করে ব্যাপক মাত্রায় ইতিবাচক প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছে। বিশেষ করে গত ২০২২ সালের ১৬ই নভেম্বর সফলভাবে চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে নাসার আর্টেমিস-১ মিশনের যাত্রীবিহীন মহাকাশযান ‘ওরিয়ন’।

চাঁদে আবারো মানুষ পাঠানোর নতুন মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ মহাকাশযান পাঠিয়েছে সংস্থাটি। নাসার নতুন করে শুরু করা এই চন্দ্র অভিযানের মূল লক্ষ্য, চাঁদের মাটিতে মহাকাশচারী নামার জন্য সম্ভাব্য ‘ল্যান্ডিং সাইট’ চিহ্নিত করা। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা (নাসা) মনে করে যে, তারা আগামী ২০৩০ সালের মধ্যেই আবারো মহাকাশচারীসহ স্পেশক্রাফাট এ চাঁদের বুকে নামিয়ে নতুন এক যুগের সৃষ্টি করবে। যদিও এদিকে চীনের আগে রাশিয়া ২০৩১ সালে চাঁদের বুকে মানুষ প্রেরণের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে যে, তারা অদূর ভবিষ্যতে চাঁদের বুকে একটি স্থায়ী প্রযুক্তি নির্ভর মুন ভিলেজ তৈরি করবে।##

আপনার মতামত দিন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রচার করা হবে না.